প্রসিদ্ধ জেলা হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ শহরের মাত্র কয়েক কিলোমিটার সড়কের ফুটপাত নিয়ে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা, মেয়র ও সংসদ সদস্যের চরম দ্বন্ধ, ব্যাপক চাঁদাবাজির ঘটনা প্রকাশ্যে ঘটলেও জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বারবারই ঘটেছে ইদুর বিড়াল খেলা । এ যেন টেলিভিশনের কার্টুন টম এন্ড জেরির আরেক খেলা দেখাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের আইনশৃংখলা বাহিনী
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নারায়ণগঞ্জ শহরের হকার নিয়ে পুলিশের প্রতি মূহুর্তের বিশাল চাঁদাবাজি ছাড়াও প্রতি সপ্তাহে, প্রতি মাসের ভিত্তিতে একেকটি সড়কে এক বা একাধিক চাঁদাবাজ নিয়োগ দিয়ে আবার নিজেদের সদস্যদের ক্যাশিয়ার করে শহরের ফুটপাতে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছে পুলিশের অসাধু কর্মকর্তারা । একই সাথে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের অসাধু কয়েকতজন কর্মকর্তা অভিযানের আগাম খবর পৌছে দিয়েছেন চাঁদাবাজদের কাছে ।
এমন চাঁদাবাজির অসংখ্য প্রমাণের পর এবার জানা গেছে আরো চাঞ্চল্যকর খবর। নারায়ণগঞ্জ সদর থানার এক অসাধু কর্মকর্তা শহরের কয়েকজন ফুটপাতের চাঁদাবাজকে আাগমী ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার শহরের সকল ফুটপাতে পুলিশের সাড়াসী অভিযান চলবে বলেও সতর্ক করে দিচ্ছেন ।
একজন চাঁদাবাজকে পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলছেন, “ আগামী মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর সারাদিন এএসপি স্যার ও ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে সাড়াসী অভিযান চলবে । তাই সাবধান থাকতে হবে । উচ্ছেদের পাশাপাশি কয়েকজনকে আটক করাও হতে পারে । আলোচনা চলছে । নতুন এসপি না আসা পর্যন্ত এভাবেই চলবে শহরের ফুটপাত । তোমরা তোমাদের কাজ করো । আগাম খবর জানিয়ে দেয়া হরো । সাবধথান থেকো । এটা হবে আইওয়াশ। শহরের ফুটপাত ছাড়াও মীর জুমলা সড়কে আবার সড়কে দোকান ও মাছের ব্যবসা চলছে । এখানেও অভিযান চলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে । সকলকে জানিয়ে দিও । সিটি কর্পোরেশনের ম্যাজিষ্ট্রেট থাকবে এই অভিযানে। “
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে শহরের চিহ্নিত ফুটপাতের একজন চাঁদাবাজ বলেন, আমরা যারা ফুটপাতে ব্যবসা করি তাদের পুঁজি না থাকায় লাখ লাখ টাকায় দোকান নিতে না পারায় পেটের দায়ে রোদ বৃস্টি, ঝড় তুফান ও পুলিশের হামলা আটক উপেক্ষা করে নিয়মিত পুলিশকে চাঁদা দিয়ে ফুটপাতে দোকাদারী করতে হয় । পুলিশ যদি না চায় তবে কোন দোকানী ফুটপাতে বসতে পারবে না । আর চাঁদাবাজ তো অনেক দূরের কথা । একজন কর্মকর্তা ফোন করে বলে দিচ্ছেন আগামী ২৬ নভেম্বর মঙ্গলবার শহরের ফুটপাত উচ্ছেদে মাঠে নামবে ম্যাজিষ্ট্রেট ও পুলিশের কর্মকর্তাদের অনেকেই ।
তাই লোক দেখাতে আইওয়াশ করতে আমাদের আগাম জানিয়ে দিচ্ছেন এই সাড়াসী অভিযানের কথা ।
এই চাঁদাবাজ আরো জানায়, আমি দোকানদারীর পাশাপাশি বাড়তী একটু সুবিধা পেতেই ফুটপাত থেকে প্রতিদিন চাঁদা তুলে তা থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয় । শহরের কমপক্ষে ৩০ জন চাঁদাবাজ চাঁদা তুলেন শুধুমাত্র পুলিশের জন্যই । রাজনৈতিক দলের নেতাদের চাইতেও অধিক গুরুত্ব দিয়ে এই চাঁদা আদায় করে ফুটপাত নিয়ন্ত্রণকারী লাইনম্যান নামক চাঁদা আদায়কারীরা ।
শহরের চাঁদাবাজ সিন্ডিকেটের মূল হোতা রহিম মুন্সি, আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হোসেন পলাশ, পুলিশ পরিদর্শক সুরুজ মিয়াসহ আরো কয়েকজন। এসব চাঁদাবাজরা প্রতি বছরে কোটি কোটি টাকা চাঁদাবাজি করে নেতা, পুলিশসহ অনেক সেক্টরে বিতরণ করে যাচ্ছে । প্রতিদিন প্রায় লাখ টাকা চাঁদা আদায়ের পর রহিম মুন্সি, আসাদুজ্জামান আসাদ, আলমগীর হোসেন পলাশ, পুলিশ পরিদর্শক সুরুজ মিয়া নিজেদের বন্টন বুঝে নিয়ে নেতাদের ও থানাসহ সকলের জন্য নির্ধারিত অর্থ বরাদ্ধ রাখে ।
এই সিন্ডিকেটের হোতা রহিম মুন্সিকে আটকের পর মধ্যরাতে মোটা অংকের টাকায় মধ্যরাতে ছেড়ে দেয়ার ঘটনাও ঘটে । আর আরেক কুক্ষাত চাঁদাবাজ আসাদসহ তার সহযোগি কয়েকজন খোদ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে বসে চা পান করতেও দেখা গেছে । চাঁদাবাজদের সাথে এমন সখ্যতার বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে রাজি হন নাই কেউ ।
নাম প্রকাশ না করা অনুরোধ করে এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে পোস্টিং পেতে কত টাকা ব্যয় করতে হয় তা হয়তো কোন সাধারণ মানুষের ধারনা ই নাই । এক প্রকার টেন্ডারের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকায় নিয়োগ হয় পুলিশ কর্মকর্তার । কে কত টাকা দিতে পারবে এমন টেন্ডারে যিনি এগিয়ে থাকেন তাকেই পোষ্টিং পেতে হয় অগ্রিম টাকা দিয়ে । যার কারণে এই টাকা তুলতেই মরিয়া হয়ে উঠে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা । আর এই কারণেই থানার ওসির কক্ষে দেখা মেলে অপরাধী/ চাঁদাবাজদের ।
Discussion about this post