বৃহস্পতিবার ৩ অক্টোবর সোনারগাঁও জাদুঘরের ১১৩ কোটি টাকার টেন্ডার জমা দিয়েছে প্রায় ১০ জন ঠিকাদার। অথচ এই বিশাল কাজ কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য অগ্রিম ১০ শতাংশ টাকা চাঁদা দিয়েছে জিকে শামীম । নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান প্রতিটি কাজের পার্সেন্টিজের চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতো বলেও জিকে শামীম অকপটে স্বীকার করেছে
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নারায়ণগঞ্জ জেলায় গণপূর্ত বিভাগ বর্তমানে প্রায় সাড়ে পাঁচশত কোটি টাকার সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। বিশাল এমন কর্মযজ্ঞ শুরুর আগেই জিকে শামীম একজন সংসদ সদস্যের দোহাই দিয়ে ১০% হারে প্রতিটি কাজের ক্ষেত্রে চাঁদা প্রদান করেছে বলে রিমান্ডে থাকাবস্থায় নিজেই পুলিশসহ অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে।
এই বিশাল পরিমান কয়েকটি কাজের চাঁদাবাজির প্রায় ৫৫ কোটি টাকা জিকে শামীম, সালাউদ্দিন ও কাজল নামের এক নেতার মধ্যস্থতায় বন্টনের খবরে চোখ কপালে উঠেছে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের । আর এই বিশাল চাঁদাবাজিতে নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুুবুর রহমান নিজেই তদারকি করতো বলে জানা গেছে ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, জিকে শামীম নারায়ণগঞ্জসহ পিডব্লিউডি এর কাজের উপর যে লুটপাট করতো তার বিশাল তথ্য খোদ প্রধানমন্ত্রীর হাতে পৌছানো হয়েছে। ১০ পার্সেন্ট কমিশন গ্রহণকারী নেতা ও চেলাদের সকল তথ্য উদঘাটন করতে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন পৃথকভাবে কাজ করছেন।
গোয়েন্দা সংস্থার নির্ভরযোগ্য এই সূত্রটি আরো বলেন, জিকে শামীম আস্তানায় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের অভিযানের আগে থেকেই নানা ভাবে পর্যবেক্ষনের পর সকল তথ্য সংগ্রহ করা হয় । এরপর অভিযানে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসে । আরো আশ্চর্য বিষয় হলো রিমান্ডে থাকাবস্থায় সকল অপরাধের তথ্য ছাড়াও গণপূর্ত বিভাগের বিশাল টেন্ডারের চাঁদাবাজিতে কোন কোন রাজনীতিবিদ, প্রকৌশলীরা জড়িত এবং কি কি পন্থায় কত টাকা কোন কো্ন তারিখে প্রদান করেছে তার বিস্তর তথ্য তুলে ধরেছে জিকে শামীম নিজেই ।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পিডব্লিউডি প্রায় সাড়ে ৫ শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন নয়টি প্রকল্প থেকে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট জিকে শামীমের কাছ থেকে ১০ শতাংশ হারে কমিশন গ্রহণের বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত হয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা । জেলা পিডব্লিউডির চলমান কাজে প্রভাবশালী সংসদ সদস্য ছাড়াও নির্বাহী প্রক্যেশলী মাহবুবুর রহমান, এসও মাসুদ রানা, ব্যবসায়ী নেতা ও ঠিকাদার পিডব্লিউর আতংক কাজল, সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট বিশাল এই চাঁদাবাজির সাথে সম্পৃক্ত রয়েছে ।
এই সিন্ডিকেটের টিকেট ছাড়া কোন ঠিকাদার সিডিউল ক্রয়, ড্রপিংসহ কোন কাজেই অংশ গ্রহণ করতে পারে না নিদিষ্ট অংকের চাঁদা পরিশোধ না করেই । সরকারী উন্নয়ন কাজের টেন্ডারের আগেই ১০ % হারে চাঁদা কাজের দিতে হয় সংসদ সদস্যের নামে । (যদিও সূত্রটি কোন সেই সংসদ সদস্য তার নাম বলতে চান নাই, তবে এই সংসদ সদস্যকে তার চেলারা নাম না বলে “মাননীয়“ বলে সম্বোধন করে )
যেসব কাজের ব্যাপারে কমিশন গ্রহণ করার তথ্য উঠে এসেছে সেসব হচ্ছে, ১২শ ৫০ স্কয়ার ফুটের পনের তলা বিশিষ্ট ভবন দুটি, ১ হাজার স্কয়ার ফুটের পনের তলা ভবন দুটি, ৮শ স্কয়ার ফুটের পনের তলা ভবন দুটি, ৬শ ৫০ স্কয়ার ফুটের পনের তলা ভবন দুটি এবং নগরীর ৩শ শয্যা হাসপাতালকে ৫শ শয্যায় উন্নতিকরণ প্রকল্পের নির্মাণ কাজ, জালকুড়িতে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কারিগরী প্রশিক্ষন কেন্দ্র নির্মানে ২১ কোটি ৬৬ লাখ টাকার কাজ, সবশেষ সোনারগাঁ জাদুঘরের ১১৩ কোটি টাকার কাজের ১০ % চাঁদা আগেই প্রদান করেছিলো জিকে শাশীম ।
১১৩ কোটি টাকার কাজের টেন্ডারের আগেই চাঁদা লেনদেনকালের বৈঠকে সংসদ সদস্য সহ পিডব্লিউডি এর এক নিয়ন্ত্রক এক সাথে খাবার খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলো বলেও তথ্য বেড়িয়ে এসেছে ।
বৃহস্পতিবার ১১৩ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে এতো তোলপাড়ের ঘটনায় টেন্ডার নিয়ন্ত্রণকারী গডফাদাররা আবারো কোন কারসাজি করতে পারে কিনা তার উপরও কঠোর নজরদারীসহ পিডব্লিউডির চাঁদাবাজ চক্রের সকল সদস্যদের উপর কঠোর নজরদারী চালাচ্ছে প্রশাসন । এই চাঁদাবাজ চক্রের হোতারা এতো সমালোচনার পরও পরিবারের সদস্যদের সাথে নিয়ে জেলা গণপূর্ত কার্যালয়ে সার্বক্ষনিক অবস্থান নিয়ে টেন্ডার বাণিজ্য চোলানোর পায়তারা করছে বলেও গুঞ্জন রয়েছে ।
এমন অভিযোগ বিষয়ে মহা দূর্ণীতিবাজ সদ্য সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার ফোন বন্ধ থাকায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই ।
অপরদিকে এমন কাজের রক্ষনাবেক্ষনকারী নারায়ণগঞ্জ জেলা পিডব্লিউডি এর সহকারী প্রকৌশলী মাসুদ রানাকে কয়েকদফা ফোন দিয়ে এবং কার্যালয়ে সরজমিনে উপস্থিত হয়ে বিশাল এই সরকারী উন্নয়ন কাজের তথ্য চাইলে তিনি বাববার তথ্য প্রদান না করে টালবাহানা করেন । এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে তিনি বলেন, আমার কাছে কোন তথ্য নাই অফিস থেকে নিয়ে নেন বলে ফোন সংযোগ কেটে দেন ।
প্রকৌশলী মাসুদ রানার এমন আচরণের বিষয়ে জেলা গণপূর্ত বিভাগের কয়েকজন কর্মচারী বলেন, এই মাসুদ রানার স্ত্রীর নামে ঠিকাদারী লাইসেন্স (মিথিলা এণ্টারপ্রাইজ) নিয়ে সকল ধরণের অপকর্ম তিনি করে যাচ্ছেন দীর্ঘদিন যাবৎ । যার তথ্য সংগ্রহ করতেও মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা ।
পিডব্লিউডি এর নিয়ন্ত্রণকারী চক্রের ভয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে কয়েকজন ঠিকাদার বলেন, কোন ঠিকাদার স্বচ্ছতার সাথে কাজ করতে চাইলে চাঁদাবাজ চক্রের হোতাদের কারণে কেউ কাজ করতে পারে না। আগে চাঁদা পরে কাজ করতে হয় এই গণপূর্ত বিভাগে । নারায়ণগঞ্জ শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কস্থ (আলম খান লেন) ট্রাষ্ট ব্যাংকের জিকে শামীমের একাউন্টে কি পরিমান অর্থ লেনদেন হয়েছে তা জানলেই অনেকের চোখ কপালে উঠতে পারে !
এমন খবরে ট্রাষ্ট ব্যাংক বঙ্গবন্ধু শাখায় যোগাযোগ করলে ম্যানেজার হাসান আহম্মেদ এ বিষয়ে কোন সহায়তা করা যাবে না বলে জানায় । এই সাথে কোন তথ্য নিতে হলে বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা ট্রাষ্ট ব্যাংকের হেড অফিসে যোগাযোগ করতে হবে বলে জানান ।
Discussion about this post