স্টাফ রিপোর্টার :
দেশের সবচেয়ে ব্যবসায়ী ও ধনী জেলা হিসেবে পরিচিত নারায়ণগঞ্জ যেন রাতারাতি ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। এমন প্রতিযোগিতায় অপরাধীরা কোন আইনকে কোয়াক্কা না করে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে ম্যানেজ করে সকল ধরণের অপরাধে মেতে উঠেছে অপরাধীচক্র। আইনকে তোয়াক্কা না করে আইনপ্রয়োগকারীদের ম্যানেজ করে রাতারাতি অপরাধী চক্র আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে। এমন তালিকায় রয়েছে শহরের ছিচকে অপরাধীদের অনেকের নাম। ফলে নারায়ণগঞ্জ এখন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।
কোথায় নেই অপরাধ ? সরকারী সেবা সংস্থাগুলোর পাশাপাশি পাল্লা দিয়ে অপরাধীরা যেন রাতারাতি ধনী হওয়ার প্রতিযোগিতায় মাঠে নেমেছে। শহরের খাদ্য ব্যবসায়ী এলাকা হিসেবে পরিচিত নিতাইগঞ্জে চোরাই গমের ব্যবসা করে একেকজন কুঠারিয়া থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক, ডিম বিক্রেতা সোহাগ শত কোটি টাকার দম্ভে আকাশচুম্বি অবস্থা, তেল, চাল, ডাল, চিনি আর লবন কেলেংকারীর খবর সকলের জানা। একই সাথে পাল্লা দিয়ে শহরের নিতাইগঞ্জ টানবাজার এলাকায় চোরাই সূতা, রংয়ের কারবার চলছেই বিরামহীনভাবে। আর এই অপরাদীদের শেণ্টার দিয়ে নারায়ণগঞ্জে চাকুরী করতে আসা অনেক কর্মকর্তা কর্মচারী একই কায়দায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।
জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের পুলিশের দুইজন কর্মকর্তা নিজেরা পুলিশী প্রহরা দিয়ে কোটি কোটি টাকার মদের চালান নারায়ণগঞ্জে নিয়ে আনেন। এমন ১০ লাখ টাকার মদের চালান সহ এই শহরের এক বিশেষ পেশার বিশেষ ব্যক্তি সিআইডির হাতে গ্রেফতারও হয়েছিলো।
নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি এলিট শ্রেণীর ক্লাবের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বৈধ কিংবা অবৈধ পন্থা যে করেই হউক টাকা কামানোর জন্য অপরাধীরা প্রাণপন প্রতিযোগিতায় মাঠে নেমেছে। নারায়ণগঞ্জ শহর ছাড়াও আদমজী এইপিজেড এলাকায় প্রতিদিন বিশাল টাকার মদের প্রয়োজন হয় । আর শহরের কয়েকটি এলাকায় বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সড়ক, আমলাপাড়ায়, নিতাইগঞ্জ, পাইকপাড়ায় বিশাল মদের চালান আসে । প্রতি মাসে সদর থানা এলাকায় কোটি টাকার অবৈধ মদের চালান আসে আর এই চালান নারায়ণগঞ্জে নির্বিগ্নে নিয়ে আসার সময় থাকে পুলিশের প্রহরা । এই প্রহরার দায়িত্ব থাকে দুইজন ইন্সপেক্টর।
অতি তাড়াতাড়ি কাড়ি কাড়ি টাকা, বাড়ী, গাড়ীর মালিক হতে আমলাপাড়ার ডিম বিক্রেতা সোহাগ আজ কোথায় দাড়িয়েছে। চোরাই গমের ব্যবসা করে সোহাগ নারায়ণগঞ্জ শহরের কয়েকটি বাড়ী, একাধিক গাড়ী, একাধিক স্ত্রী ছাড়াও রয়েছে কয়েকটি জাহাজ! এক স্ত্রীকে আগুণে পুড়য়ে হত্যা করলেও তার টিকিটিও স্পর্শ করতে পারে নাই কেউ। কয়েক বছরের ব্যবধানে এতো ধনী হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে গমের চোরাইকারবারী। অপরদিকে নিতাইগঞ্জের গম জসিম মাত্র কয়েক বছর আগেও কি কাজ করতো ? শহরের স্বর্ণপট্টিতেকনফেকশনারী ব্যবসার অন্তরালে পাইকারী মাদক ব্যবসায়ী শিবু বর্তমানে কোটিপতি।
এমন চোরকারবারী ছাড়াও শহরের সর্বত্র পুলিশ পিটিয়ে এখনো বহাল তবিয্যতে রয়েছে কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী নিতাইগঞ্জের সালাউদ্দিন বিটু। শহরের সকলেই প্রকাশ্যেই অভিযোগ রয়েছে এই কুখ্যাত বিটুকে সার্বিকভাবে সহায়তা করে একজন সংসদ সদস্যের আত্মীয় সিনেমা হলের মালিক। মধ্যরাতে এই সিনেমা হলের মালিক থানায় বসে প্রায়ই বৈঠক করেন।
এমন প্রতিযোগিদের প্রলোভনে পরে নারায়ণগঞ্জে দায়িত্ব নিয়েই অনেক কর্মকর্তাগণ বিতর্কিত হয়ে নারায়ণগঞ্জ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন আবার অনেকেই রাজনৈতিক নেতাদের তৈলমর্ধনের পাশাপাশি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে চালিয়ে যাচ্ছেন অপকর্ম।
নারায়ণগঞ্জের হোটেল রেস্তোরায় কি হচ্ছে তা কে না জানে ? পরিবেশ নিয়ে কারো কোন নেই মাথাব্যাথা ! পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বিভিন্ন মিল ফ্যাক্টরী, ইটের বাটা, অবৈধ পলিথিন কারবারীদের সাথে আতাঁত করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের মাসোয়ারা।
মহনগরীর ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জের দুটি লানী তেলের ডিপোকে কেন্দ্র করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছে অনেকেই। পুলিশ সদস্যকে হত্যার পর সিদ্ধিরগঞ্জের তেল চোরচক্র কোটি টাকা ব্যয় করে প্রশাসনকে ম্যানেজের পর এখনো বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে চোরাই তেলের কারবার। আর ফতুল্লার এক সময়ের ৫৫ টাকা রোজের হোটেল বয় এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। গত বুধবার এই হোটেল বয় থেকে তেল চুরির হোতা টুটুল জেলা পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর ঘটনায় তোলপাড় চলছে জেলা জুড়ে।
অপরাধী চক্র কোথায় নেই ? পরিবহন সেক্টর থেকে শহরের এক ইন্সপেক্টর প্রতিমাসে ৮/১০ জন ক্যাশিয়ার নিয়োগ দিয়ে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ক্যাশিয়ারদের হিসেব থেকে জানা যায়, ২৬টি ট্রেনিং সেন্টার থেকে প্রতি মাসে ৫২ হাজার টাকা, শীতলক্ষা থেকে ৪০ হাজার, লেগুনা থেকে ৪০ হাজার, অটো, বাধন, আনন্দ, দূরন্ত, আল্লাহ ভরসা,রিক্সাসহ সকল ধরণের পরিবহন থেকে মাসিক ও প্রতিদিন হিসেবে এমন বিশাল চাঁদা যাচ্ছে ট্রাফিকের এক ইন্সপেক্টরের হাতে। যিনি নারায়ণগঞ্জে প্রায় ১০ বছর যাবৎ রয়েছে বহাল তবিয়্যতেই। তার হাত থেকে বরহাই পায় না কোন পরিবহণ ।
এমন অসংখ্য অপরাধীচক্র ছাড়াও নারায়ণগঞ্জে অপরাধ করতে হলে আইনশৃংখলা বাহিনীকে ম্যানেজ করলেই যা খুশি তাই করা যায় । যেমন শহরের বাসষ্ট্যান্ডে বিশেষ পেশার ৫/৭ জন প্রশাসনকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যেই রমরমা জুয়া চালিয়ে যাচ্ছে সারাদিন রাতব্যাপী। জুয়ারীদের আনা নেয়ার জন্য সার্বক্ষনিক একটি ট্যাক্সি ৩ হাজার টাকা ভাড়ায় নিয়েজিত থাকে সব সময়।
এমন অসংখ্য অপরাধের মতোই নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র প্রকাশ্যেই ঘটলেও অবৈধ পলিথিন কারবারী বাবুল ও সাগর নিয়মিত মাসোয়ারা প্রদান করে যাচ্ছে বছরের পর বছর যাবৎ। মাসোয়ারা প্রদানের কারণে কোন ঝামেলা হওয়ার পূর্বেই অপরাধীদের কাছে খবর পৌছে দেয় মাসোয়ারা গ্রহণকারীরা।
নারায়ণগঞ্জের দীর্ঘদিনের ঝঞ্জাট ফুটপাত দখলকারীরা যেমন এক নির্দেশেই শহর ফাঁকা করে দিয়েছে ঠিক তেমনি নারায়ণগঞ্জের অপরাধী চক্রের হোতা ও হোমরা চোমরাদের শায়েস্তা করতে একটি নির্দেশনাই যথেষ্ট বলে মনে করছেন জেলাবাসীর সকলেই।
Discussion about this post