নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির ব্যনারে শাহজাহান খানসহ তার নিয়ন্ত্রিত কয়েকজন চাঁদাবাজ ওষুধ ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) বাস্তবায়নের নামে বিশাল চাঁদা আদায় করে । বিশাল চাঁদাবাজির ঘটনায় কেউ কেউ মুখ খোলার চেষ্টা করলেও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের দিয়ে নানাভাবে হয়রানী করবে এমন হুমকি দিয়ে প্রতিবাদকারীদের দমিয়ে রাখে চাঁদাবাজচক্র।
পরবর্তিতে চাঁদাবাজির ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে করোনার এই ক্রান্তিকালে কোন ওষুধ ব্যবসায়ী মানবিক দিক বিবেচনা করে নির্ধারিত মূল্যের চাইতে কম মূল্যে ওষুধ বিক্রির অজুহাত তুলে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিস্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খান দলবেঁধে বিভিন্ন দোকানে অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করেন। নিজেরা মোবাইল কোর্টের ক্ষমতা রাখেন এমন কথা বলে জেল খাটানোর হুমকিও দেয় শাজাহান খান ও তাদের সহযোগীরা।
ওষুধ ব্যবসায়ীরা বাধ্য হয়ে শাহজাহান খানের হাতে জরিমানা প্রদানের পর সাম্প্রতিক সময়ে ভুক্তভোগী ওষুধ ব্যবসায়ীরা নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার, জেলা ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার দপ্তরে অভিযোগ দাখিল করেন । এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন শাহজাহান খান । অভিযোগকারী ওষুধ ব্যবসায়ীদের গোপনে হুমকি ধমকি দেয়ার পাশাপাশি এমন অপকর্মের খবর প্রকাশ করায় সাংবাদিকদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে নানাভাবে নিজের অপকর্ম ধামাচাপা দিতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যে সকল ভুক্তভোগী ওষুধ ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করলো তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা না বললেও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে মহাধূর্ত শাহজাহান খান ৷।
আপাততঃ নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে একজন ওষুধ ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “পাপ করতে করতে শাহজাহান খান ভূলেই গেছেন কোথায় কি করতে হবে / বলতে হবে । সাংবাদিকতা করতে করতে বুড়ো হয়ে গেছি । এই শাহজাহান ও তার চেলারা আমাদের পারিবারিক ফার্মেসী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও চাঁদাবাজি করতে আসে । ফোনে শাহজাহান খানকে সতর্ক করার পরও তার অপকর্ম চালিয়েই যাচ্ছে ৷ দেখি কতটুকু যেতে পারে শাহজাহান সবশেষে মুখ খুলবো প্রকাশ্যেই।”
(এমন বক্তব্যের পর শাহজাহান খানের বিশাল অপকর্মের তথ্য প্রদান করেছেন তিনি)
জানা যায়, করোনাকালে আর্থিক সংকট বিবেচনায় গরীবদের জন্য কিছু কম মূল্যে ঔষধ বিক্রি করায় সেই শাহজাহানের নেতৃত্বে ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের কথিত অভিযানে জরিমানা টাকা আদায়ের সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সোমবার (২০ই জুলাই) চিটাংগা রোড ডাচ বাংলা ব্যাংক এর সামনে এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসকের পাশে কাঁচপুর বাসস্ট্যান্ডে পৃথকভাবে মানববন্ধন আয়োজন করা হয়।
তবে রহস্যজনকভাবে কাচপুর আঞ্চলিক শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক কাচঁপুরের মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন না।
এছাড়াও চিটাগাং রোডের মানববন্ধনে লোক দেখা গেলেও তারা ছিলেন আদমজী, মিজমিজি এলাকার গুটি কয়েক ফার্মেসী ব্যবসায়ী এবং বাকিরা লুঙ্গি ও বাজারের ব্যাগ হাতে শ্রমিক, পথচারী। কিন্তু দেখা যায়নি ভুক্তভোগী প্রকৃত ফার্মেসী ব্যবসায়ীদের। শুধু বিসমিল্লাহ ফার্মেসী মালিক আজিজকে ভয় দেখিয়ে আনা হলেও ওইদিন শাহজাহান খাঁনের অবস্থানের ফুটেজ ও পৃর্বে আজিজের দেয়া বক্তব্য সাংবাদিকদের কাছে সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে বলে জানা গেছে।
তাছাড়া মানববন্ধন চলাকালেও চিটাগাং রোডের ডাচ বাংলা ব্যাংকের সামনে কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতি নারায়ণগঞ্জ শাখা সভাপতি শাহজাহান খাঁন অবস্থান করছিলেন। আর গুটি কয়েক ফার্মেসী ব্যবসায়ী ও ভাড়াটিয়া লোকদের অংশগ্রহনে মানববন্ধন সফল করতে পিছন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।
প্রসঙ্গত, শনিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খাঁন এর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড, কাচপুর এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানেই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় বিভিন্ন ফার্মেসী দোকানীকে এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) বাস্তবায়নের নামে তাদের কমিশন বানিজ্যের স্বার্থে নির্ধারিত মূল্য থেকে কিছু কম মূল্যে ঔষধ বিক্রি করার কারণে জেলার প্রশাসনিক কর্মকতাদের মিথ্যা ভয় দেখিয়ে ফার্মেসী বন্ধ করে দেয়ার হুমকী দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শাহজাহান গং।
ওই সময় কাঁচপুর এলাকার শাহাদাৎ ম্যাডিকেল কর্ণার থেকে ১০ হাজার, বিসমিল্লাহ ফার্মেসী থেকে ৯ হাজার ৫০ এবং চিটাংরোডের আমুলিয়া ফার্মেসী, খাঁন ফার্মেসী, আল সাফা ড্রাগ হাউজ, মনোয়ারা ফার্মেসী, আল আমিন ফার্মেসী, ইনসাফ ফার্মেসী, ফার্মেসী প্লাস, মেডিসিন কর্নার থেকে ৫ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শাহজাহান গং।
পৃথক মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা কমিটির কার্যকরি সদস্য আলী এরশাদ, কাঁচপুর ওষুধ মালিক সমিতির মনিরুজ্জামান, আদমজী এলাকার আব্দুর রউফ, রাজ ফার্মেসীর মোয়াজ্জেম হোসেন, মিজমিজি ফার্মেসী মালিক মিজানুর রহমান, মুনা ফার্মেসীর আলী আদম, জনতা ফার্মেসীর আবদুল্লাহ আল মামুন, হীরা ফার্মেসীর হীরা প্রমুখ।
মানববন্ধনে তারা দাবি করেন , গত রবিবার ১৯ শে জুলাই বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকাসহ কিছু স্থানীয় পত্রিকায়, বাংলাদেশ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির নারায়ণগঞ্জ শাখার সভাপতি শাহজাহানের বিরদ্ধে প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাই এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় তারা।
উল্লেখ্য এর আগে একই অভিযোগে অতিষ্ট হয়ে ইতমধ্যে ভুক্তভোগীরা নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক সহ জেলা ঔষধ প্রসাশন কর্মকর্তা ও বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছে। তারপরেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বিভিন্নস্থানে অভিযানের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খাঁন ও তার কতিপয় লোকজন। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছাড়া এমন অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে টাকা আদায় করার কোন অধিবার নেই বলে জানিয়েছে বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকতাগণ।
Discussion about this post