সাম্প্রতিক সময়ে কয়েককটি গণমাধ্যমে ফতুল্লা পঞ্চবটির ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের এনওসিএস এর নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সংবাদ প্রচারের পর ধীরে ধীরে বেড়িয়ে আসছে নানা অপকর্মের তথ্য । গোলাম মোরশেদ ঘুষ ছাড়া কোন কাজ করেন না। তার এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের সকল তথ্যই মন্ত্রণালয়ের নজড়ে থাকলেও অজ্ঞাত খুঁটির জোড়ে তিনি এখনো বহাল তবিয়্যতে টিকে আছেন বাণিজ্যিক নগরী নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায়।
ইতিমধ্যেই এমন অভিযোগের বিষয়ে ব্যাপক চাউর হলেও এখনো এমন জোড়ালো অভিযোগের বিষয়ে কোন কার্যকরী পদক্ষেপ নেয় নাই যথাযথ কর্তৃপক্ষ। ফলে ফুসে উঠছে ভূক্তভোগি গ্রাহকরা।
তিনি গোলাম মোরশেদ। ফতুল্লার পঞ্চবটি বিদ্যুৎ অফিসের সহকারি প্রকৌশলী । সরকারি এই চাকুরে ন্যায় নীতির তোয়াক্কা না করে গ্রাহকদের ব্যাপক হয়রানি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে । এই প্রকৌশলী একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের জিম্মি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন বলে জানা গেছে ।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, প্রকৌশলি গোলাম মোরশেদের নেতৃত্বে পঞ্চবটি, এনওসিএস, শীতলক্ষ্যায় ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড বিদ্যুৎ অফিসে অনিয়ম ও দুর্নীতিই যেন নিয়মে পরিণিত হয়েছে। মানুষকে সেবাদানের ব্রত নিয়ে এখানে বসলেও তার দ্বারা গ্রাহকরা ব্যাপক হয়রানির শিকার হচ্ছেন। এর পূর্বেও ট্রান্সফর্মা চুরি সংক্রান্ত ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছিল।
সেবা নিতে এসে হয়রানির শিকার ভুক্তভোগিরা জানান, গোলাম মোরশেদের টেবিলে নতুন গ্রাহকদের ফাইল প্রতি গুনতে হয় টাকা। বকেয়া বিদ্যুৎ বিল গ্রাহকদের লাইন কাটার ভয় দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তার সিন্ডেকেট।
ভুক্তভোগিদের অভিযোগ থেকে জানা যায়, অফিসের নিয়ম অনুযায়ী কিলো প্রতি সরকারি মূল্য ১২শ টাকা ধার্য থাকলেও অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা গ্রাহকদের কাছ থেকে সরকারি ধার্যকৃত মূল্যের অতিরিক্ত ১৮শ টাকা নিচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব অপকর্ম চলছে ওই প্রকৌশলির তত্বাবধায়নে।
এছাড়াও, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগ আবেদন করলে অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারি প্রতিটি ফাইল করতে অতিরিক্ত ৩ হাজার টাকা প্যাকেজ করা হয়েছে যা গ্রাহকদের পকেট থেকে অধিক আদায় করে নিচ্ছে। এবং মাঠ পর্যায়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারি বিভিন্ন বাসা বাড়িতে গিয়ে মিটার চেক করার নাম করে মিটারের বিভিন্ন ত্রুটি দেখিয়ে জরিমানা করার ভয়-ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বলে জানান ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। এসব অপকর্মে মূলহোতা হিসেবে প্রকৌশলি গোলাম মোরশেদকেই অভিযুক্ত করেছেন ভুক্তভোগিরা ।
এদিকে যদি কোন গ্রাহক উক্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাজানো নাটকে প্রতারণার শিকার হয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ খোয়ায়। আবার কোনো গ্রাহক যদি তাদের সাজানো ঘটনা বুঝতে পেরে যায়, তবে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার মত ঘৃণ্য অভিযোগও রয়েছে ওই প্রকৌশলির নেতৃত্বাধিন সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ।
অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, গোলাম মোরশেদ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ইতিমধ্যে নাছিমা বেগম নামে এক গ্রাহকের মিটার পরিদর্শনের নামে হাতিয়ে নেয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। যার গ্রাহক নং- ৩৬১৩৬২৩৫। ৩৬১৪২১৭৪ ও ৩৬১৪২১৮৯ নং গ্রাহকের কাছ থেকে লাইন কেটে নাটক সাজিয়ে নিয়েছেন দেড় লাখ টাকা। এছাড়াও ১৪৩১০৮৮৯ ও ১৪৩১৪৪২১ নং গ্রাহক মাসুদ গাজী এবং সাইফুল ইসলাম এর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয় গোলাম মোরশেদ। তার সকল অপকর্মের সহযোগী হিসেবে ভুমিকা রাখছে তার পিয়ন।
অন্যদিকে মিটার রিডারম্যান নিয়োগে সীমাহীন দূর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে ওই প্রকৌশলির বিরুদ্ধে। এ ব্যাপারে অফিস কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো সদুত্তোর দিতে পারেননি। এছাড়াও অভিযোগের বিরুদ্ধে জানতে ওই প্রকৌশলির সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার সম্ভব হয়নি।
এমন অসংখ্য অভিযোগের বিষয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকামেল পর দুদকের ভয়ে তড়িগড়ি করে ঘটনা ধাসাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালান প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ ও তার সিন্ডিকেট।
৬ জুন দুদকের গণশুনানীর পূর্বে ফতুল্লার পঞ্চবটি বিদ্যুৎ অফিসের এমন দূর্ণীতি ধামাচাপা দিতে উল্লেখিত অভিযোগর বিষয়ে জোড়ালো প্রতিবাদ করেন এই প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ ।
ফতুল্লা পঞ্চবটির ঢাকা পাওয়ার ডিস্টিবিউশন কোম্পানী লিমিটেডের এনওসিএস এর নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মোরশেদ তার এক প্রতিবাদ লিপিতে গণমাধ্যমকে বলেন, “উল্লেখিত অভিযোগ মিথ্যা । বানোয়াট। কল্পনাপ্রসূত। একটি কুচক্রী মহল আমি ভালোভাবে কাজ করছি তা সহ্য করতে পারছে না । তাই নানাভাবে এমন বিভ্রান্তিমূলক তথ্য দিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে । আমি এমন মিথ্যে অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।“
Discussion about this post