রাজধানীর বাড্ডা থানার পূর্ব বাড্ডা হাজী বাড়ি এলাকায় বোমা তৈরীর কারখানায় অভিযান চালিয়ে ৬৫ বোমা ও বোমাতৈরীর তিন কারিগরকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- ফাহিম,লিমন ও আকুল। এই সময় বিপুল পরিমান বোমা তৈরির ষড়ঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
বুধবার (২২ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে চালানো অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাব-৩ এরঅধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. ফিরোজ কবীর।
লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিরোজ বলেন, আমার গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পারি কয়েকজন জঙ্গি বোমা তৈরি করে। গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবারহ করে আসছে। এই তথ্য পাওয়ার পর গত ৮ থেকে ১০দিন তাদের নজরদারিতে রাখা হয়। গত ২ থেকে ৩ দিন আগে আমরা একটা অভিযান হওয়ার কথাছিলো। কিন্তু জঙ্গিদের নিজেদের মতানৈক্যের কারণে সেটি সম্ভব হয় নি।বুধবার বিকেলে এমন তথ্য পেয়ে অভিযান চালাই। তারা বাড্ডার এই বাসায় হাত বোমা তৈরি করছিলো। অভিযানে বোমা তৈরির সময় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়। এই সময় বিপুল পরিমান বোমা তৈরিরষড়ঞ্জাম উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার তিনজন আমাদের জানিয়েছেন, তারা সজিব নামের একজনেরমাধ্যমে ২ থেকে ৩ ঘন্টার কাজের চুক্তিতে আসেন। তারা তিনজনেই জুতার কারখানায় কাজকরেন। ২৬ হাজার টাকার চুক্তিতে তারা এ কাজে আসেন। এখানে ছোট একটি ঘরে বোমাগুলোতৈরি শেষে ঘরটি তালা মেরে চলে যাবে। আর চাবি নির্দিষ্ট স্থানে মাটি খুড়ে রেখেযাওয়ার কথা ছিলো। এই তথ্য সজিব ছাড়া কেউ জানবে না কোথায় চাবি। বোমাগুলো আজ রাতেই গাজীপুর যাওয়ার কথা ছিলো। গাজীপুর থেকে কার কাছে যাবে সেটা মাসুম নামে একজন জানে।
তিনি আরও বলেন, বোমাগুলো আমাদের বোম ডিসপোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে এসে তারা বোমাগুলোর গঠন, ওজনসহবিস্তারিত পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছৈ বোমাগুলো অত্যন্ত বিপদজ্জনক। এই বোমাগুলোশূন্যে বিস্ফোরণ ঘটানো যেতো। প্রতিটি বোমা বিস্ফোরণে ৩০ মিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতো।সব কিছু বিবেচনায় আমাদের মনে হয়েছে বিপদজনক বিস্ফোরক দ্রব্য।
সূত্র আরো জানান, নারায়ণগঞ্জের এই বোমা তৈরির চক্র রাজধানীর বাড্ডায় বাসা ভাড়া নিয়ে এমন কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছিলো ।
গ্রেফতারকৃতদেরবিরুদ্ধে জানতে চাইলে ফিরোজ কবীর বলেন, জঙ্গিরা মূলত কাট আউট পদ্ধতিতে কাজ করে। মূলত আজকে যারা গ্রেফতার হয়েছে তারা টাকার বিনিময়ে কাজটি করছিলো। তারা আমাদেরজানাতে পারে নি কোথায় এগুলোর ব্যবহার হবে। আমরা ধারণা করছি, আজকেই বোমাগুলোপাঠানোর কথা ছিলো। যেহেতু সামনেরদিকে উপজেলা নির্বাচন ঈদসহ বেশ কিছু রাষ্ট্রিয়অনুষ্ঠান ছিলো।সেগুলোতে ব্যবহারের কথা থাকতে পারে। আমরা সজিব ও মাসুমনামের দুজনের নাম পেয়েছি। তাদের পেলে মাসুমের ওপরে কারা আছে সে ব্যপারে তথ্য পাওয়াযাবে। বাড়িটিতে কতদিন ধরেছিলো জানতে চাইলে ফিরোজ কবীর বলেন, তারা তিন স্থানে তিনটি স্থানে বোমা তৈরিরপ্রস্তুতি নিয়েছিলো। ডেমরা, সাভার ও গাজীপুরের মধ্যবর্তী একটি এলাকায় প্রস্তুতিনিয়েছিলো। সজিব মূলত বাসা ঠিক করার দায়িত্ব পালন করে। তার সিগন্যালেই বাসা ঠিক করাহয়। পরবর্তীতে কারিগররা এসে কাজ শুরু করে। আজ সন্ধ্যায় এই স্থানটির নাম পেয়েছি।এরআগে ডেমরায় করার কথা ছিলো। পরবর্তীতে এই বাসাটির খালি একটি রুম ঠিক করে। তারপ্রেক্ষিতে এই বাসায় এসে কারিগররা এসে কাজ শুরু করে। এই বাসায় সজিব উপস্থিত ছিলো। কিন্তু র্যাবের উপস্থিতি পেয়ে সটকে পড়েছে। জড়িতদের ধরতে কাজ করছি। বোমা তৈরির ষড়ঞ্জামতৈরির সংগ্রহ হতো কি ভাবে।
র্যাবের নজরদারি আছে কি না জানতে চাইলে বলেন, অনেকপণ্য আছে সরাসরি অবৈধ না। যেমন ম্যাচ, সাইকেলের বল, কাচের টুকরো অবৈধ না। এগুলোআলাদাভাবে কেনা অবৈধ না। যখন এটা কিনে এনে জনক্ষতিকর কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে তখন এটাঅবৈধ। আমরা বেশ কিছু দিন ধরে তাদের নজরদারি করেছি। আমরা দেখেছি বোমা তৈরির ষড়ঞ্জামবিভিন্ন স্থান থেকে এসেছে। কেমিক্যাল রাজশাহী থেকে এসেছে। কাচের টুকরো যাত্রাবাড়িথেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। অর্থাৎ আলাদা আলাদা স্থান থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ সংগ্রহ করাহয়েছে। এগুলোর সমন্বয় করেছে সজিব। বিকেল থেকেই কাজ শুরু করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, আমাদের অভিযান চলমান। বোম ডিসপোজাল ইউনিট সিদ্ধান্ত নেবে বোমাগুলো বহন করে দূরে নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো সম্ভব হলে দূরে কোথায় এগুলো নিষ্ক্রিয় করা হবে। জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
Discussion about this post