ফতুল্লার একটি পোশাক কারখানায় তৃতীয়বারের মতো শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
অন্তত ৫৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চলতি মাসের বেতন দিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এমন ঘটনায় কর্মকর্তা কর্মচারীদের পক্ষে ফতুল্লা থানায় ক্রোনী অ্যাপারেলসের মালিক আসলাম সানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে মেহেদী হাসান নামের একজন কর্মচারী।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারী) সকালে চাকরিচ্যুত কর্মীরা কাশিপুর হাটখোলা এলাকার কারখানাটির সামনে অবস্থান নেন। প্রায় তিন ঘণ্টা অবস্থানের পরও বকেয়া বেতনাদিসহ আনুষঙ্গিক বিষয়ে সমাধান না পেয়ে ফিরে যান কর্মীরা। ক্রোনী অ্যাপারেলস নামের ওই কারখানায় গত তিন মাসে তৃতীয়বারের মতো শ্রমিক ছাঁটাই ও অসন্তোষের ঘটনা ঘটেছে।
ক্রোনী অ্যাপারেলসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা মাহাদী হাসান বলেন, ‘শবে বরাতের রাতে আমাদের ৫৮ জনকে ছাঁটাই করা হয়। তখন বলা হয়েছিল, যাবতীয় বেতন-ভাতা বুঝিয়ে দেওয়া হবে। আজ মঙ্গলবার সকালে বেতন নিতে এসে দেখি আমাদের নাম ছবিসহ গেটে টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা কি দাগি অপরাধী যে আমাদের ছবি এভাবে টানানো হবে ? তার ওপর আমাদের চার মাসের বেতন বাকি। তারা কেবল চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন দেবে, বাকি নভেম্বর থেকে জানুয়ারি মাসের বেতন দেবে না। উল্টো দুই মাস আগের তারিখ বসানো পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে চাপ দিচ্ছে তারা।’
কারখানার আরেক কর্মী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের রুলস হচ্ছে, কাউকে চাকরিচ্যুত করতে হলে তিন মাসের বেতন দিতে হবে। আমরা এখানে একেকজন ৮ থেকে ১০ বছর কাজ করছি। গত তিন মাস কেবল হরতাল, অবরোধ, নির্বাচন ইত্যাদির অজুহাত দিয়ে বেতন দেয়নি। এখন বেতন ছাড়াই ছাঁটাই করা হয়েছে।’
কারখানার সহকারী ব্যবস্থাপক আফাজ খান বলেন, ‘তিন মাস ধরে আমরা মানবেতর জীবন যাপন করেছি। বাড়িওয়ালা প্রতিনিয়ত ভাড়ার জন্য চাপ দিচ্ছে। মহল্লার দোকানে হাজার হাজার টাকা বাকি জমে গেছে। এমন অবস্থায় অমানবিকের মতো মালিকপক্ষ আমাদের ছাঁটাই করেছে। সমাধান না পেলে আমরা শ্রম আদালতে যাব।’
এ বিষয়ে কারখানার এইচআর (অ্যাডমিন) মাইদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। প্রশ্ন শুনে বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত আছি। কথা বলতে পারছি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রোনী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আসলাম সানী সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা তাদের দেনা-পাওনা পরিশোধ করব। কারখানায় মানুষ বেশি হয়ে গেলে একটু অ্যাডজাস্টমেন্ট করতেই হয়। তাদের দেনা-পাওনা হিসাব করছি। দ্রুতই অ্যাকাউন্টে দিয়ে দেব। তাদের বলা হয়েছে চলতি মাসের বেতন নিয়ে যেতে। পরবর্তী সময়ে বাকি বেতন পর্যায়ক্রমে পরিশোধ করা হবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৫ ডিসেম্বর ক্রোনী গ্রুপের ‘ক্রোনী টেক্স সোয়েটার লিমিটেড’ কারখানা লে অফ ঘোষণা করা হয়। তাতে প্রায় ৮০০ শ্রমিক চাকরিচ্যুত হন। পরবর্তী সময়ে চলতি মাসের ৮ ফেব্রুয়ারি একই গ্রুপের ‘অবন্তি কালার টেক্স লিমিটেড’-এর শ্রমিকেরা দুই মাসের বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন।
এমন ঘটনা ছাড়াও ক্রোনী অ্যাপারেলসের কর্ণধার আসলাম সানীর বিরুদ্ধে গ্যাস চুরির ঘটনায় বিস্ফোরণ হলে আহত হয় ১৪ জন শ্রমিক। ফতুল্লার হাটখোলা এলাকায় ক্রোনী অ্যাপারেলস লিমিটেডের ৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা বিল বকেয়া থাকায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি কারখানাটির গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর ফের চুরি করে গ্যাস সংযোগকালে বিস্ফোরণের ঘটনায় জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি গঠন হলেও ওই ঘটনা ধামাচাপা দিতে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে ক্রোনী অ্যাপারেলস চক্র।
Discussion about this post