“আইন প্রয়োগ করে কে ? আইনশৃংখলা বাহিনী । আর আইনশৃংখলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তা যদি নিয়মিত মোটা অংকের মাসোয়ারা নেয় তরে এই অবৈধ কারখানা চলতে সমস্যা কোথায় ? রূপগঞ্জ থানার ওসির নাম করে এবং ওসির ক্যাশিয়ার পরিচয়ে এক ব্যক্তি প্রতি মাসের এক তারিখেই ২০ হাজার টাকা করে মাসোয়ারা নেয় এই কয়েল কারখানা থেকে। ফলে কোন অভিযানের আগে পুলিশ আসলে পূর্ব থেকেই যেন সতর্ক করে দেয়া হয় এবং পুলিশ যাতে কোন ডিস্টার্ব না করে সেই জন্যই মাসে মাসে এই চাঁদা তুলে নিয়ে যায় নাম না জানা ওই ব্যক্তি । আবার কখনো কখনো থানায় কারখানার পক্ষ থেকে লোক পাঠিয়ে দিয়ে আসা হয় থানায়। এভাবেই চলছে অবৈধ এই কয়েল কারখানাসহ অসংখ্য অবৈধ প্রতিষ্ঠান ।“
এমন মন্তব্য কারখানা সংশ্লিষ্ট ঘনিষ্ট সূত্রের ।
রূপগঞ্জের ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে অনুমোদনহীন একটি কয়েল তৈরির কারখানা। বিষাক্ত ধোঁয়ায় পাশের দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীও বলছেন, তাদের শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বিধি না মেনে কয়েল তৈরি করলে ফুসফুসের সমস্যা, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
‘সানমুন জাম্বো কয়েল’ নামের প্রতিষ্ঠানটির কারখানাটি তারাব পৌরসভার মৈকুলী এলাকায় অবস্থিত। এর মালিক খাদুন এলাকার মকবুল হোসেন ভূঁইয়া।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিনি নিজ এলাকার মাদক কারবারিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেন। আর তিনি নিজেই আছেন তারাব পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ফাতেমা আক্তারের ছত্রছায়ায়। যে কারণে প্রতিবাদের সাহস পান না কেউ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২০ সালের মার্চে ১০ শতাংশ জায়গার ওপর কয়েল কারখানাটি স্থাপিত হয়। এর জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, কলকারখানা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস এমনকি বিএসটিআইর অনুমোদনও নেওয়া হয়নি। বর্তমানে সেখানে কর্মরত ৩৬ জন। এর মধ্যে ২৬ জনই শিশু শ্রমিক। কারখানা সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই সেটি পরিচালনা করা হচ্ছে।
কারখানাটির কারণে পরিবেশের ক্ষতির পাশাপাশি স্থানীয় লোকজনের মধ্যে রোগবালাই বাড়ছে বলে জানান একই এলাকার বাসিন্দা রেজাউল করিম। তাঁর বক্তব্য, ডাক্তাররা বলে থাকেন, একটি কয়েলের ধোঁয়ায় ১০০ সিগারেটের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক উপাদান রয়েছে। অথচ জনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবৈধ কারখানাটি স্থাপন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে কথা হয় রমজান, মঈন মিয়াসহ কয়েকজনের সঙ্গে। তাঁরা বলেন, পাশেই মৈকুলী ইসলামিয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও মৈকুলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবস্থান। এ দুটি প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করে হাজারখানেক শিশু। অনুমোদনহীন রাসায়নিকের ধোঁয়ায় প্রায়ই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে। দ্রুত সময়ের মধ্যে কারখানাটি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান তাঁরা। তা না হলে এলাকার ৫০ হাজার মানুষকে নিয়ে আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারি দেন।
মোবাইল ফোনে কল দিলে কারখানাটির মালিক মকবুল হোসেন ভূঁইয়া দাবি করেন– ‘আমার কারখানার সব কাগজপত্র আছে। আপনি সরাসরি এসে দেখা করেন।’ তবে মহিলা লীগ নেত্রী ফাতেমা আক্তারের নম্বরে কল দেওয়া হলে ধরেননি।
‘সানমুন জাম্বো কয়েল’ নামে কোনো কারখানা থেকে ফায়ার লাইসেন্সের আবেদন পাননি বলে জানান রূপগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিদর্শক শফিকুল ইসলাম। ওই কারখানাকে নারায়ণগঞ্জ কলকারখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর থেকে লাইসেন্স দেওয়া হয়নি জানিয়ে উপ মহা পরিদর্শক রাজীব চন্দ্র দাস বলেন, শিগগিরই সেটি পরিদর্শন করে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, ওই কারখানা কোনো অনুমোদন নেয়নি। হয়তো চুরি করে কারখানাটি পরিচালনা করা হচ্ছে। তারা আইনি ব্যবস্থা নেবেন।
ঢাকা বিএসটিআইর সহকারী পরিচালক জিসান আহমেদ তালুকদার বলেন, চনপাড়ায় অবস্থিত ‘সানমুন কয়েল কারখানা’র অনুমোদন তাদের কাছ থেকে নিয়েছেন প্রতিষ্ঠানের মালিক আবু বক্কর সিদ্দিক। গোপন সূত্রে তারা জেনেছেন মৈকুলী এলাকায় ‘সানমুন’ নামে নকল কয়েল কারখানা গড়ে তুলেছেন মকবুল নামের একজন। শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অভিযান চালাবেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) আইভী ফেরদৌস বলেন, কয়েলের ধোঁয়া বিষাক্ত। নির্দিষ্ট পরিমাপ না মেনে তৈরি কয়েল মানুষের জন্য বেশি ক্ষতিকর। এর ধোঁয়ায় প্রাথমিকভাবে মাথা ঘোরানো ও বমি ভাব দেখা দিতে পারে। পরবর্তী সময়ে ফুসফুসের সমস্যা, ক্যান্সারসহ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে মানুষ।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফয়সাল হক বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখব। কারখানাটির কোনো কাগজপত্র না পাওয়া গেলে অবৈধভাবে উৎপাদনের দায়ে ব্যবস্থা নেব।’
Discussion about this post