প্রতি বছর ঈদে ঘরমুখীদের দুর্ভোগের অসহনীয় ভোগান্তিতে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থায় পরতে হতো লাখো মানুষের। এমন চিত্র ছিলো বছরের পর বছর । প্রতি বছর ই এই চিত্র থাকলেও দুর্ভোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কারো কোন মাথা ব্যাথা দেখা যেতো না । আইনশৃংখলা বাহিনীর অসাধুদের পেশাদারিত্বের পরিবর্তে অনৈতিক কর্মকান্ডেই বেশি মনোনিবেশ করায় জন দুর্ভোগের চিত্র ছিলো চিরচেনা রূপ।
ঈদে ঘর ফেরা মানুষের বাড়লেও প্রতি বছরের ওই ধরণের জন দুর্ভোগ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের কোথাও নেই চিরচেনা যানজট। এবারে পাল্টে গেছে মহাসড়কের চিত্র। ফলে কোনো রকম দুর্ভোগ ছাড়াই যাত্রীরা বাড়ি যেতে পারছেন। এতে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন চালক ও যাত্রীরা।
এমন যন্ত্রণা বিহীন ঈদে নাড়ীর টানে ঘরে ফেরা মানুষের অসহনীয় ভোগান্তি না থাকার যাদুময় রহস্যের বিষয়ে আলোচনাকালে হাইওয়ে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তা তাদের নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, “মাথা ঠিক থাকলে যেমন সারা দেহ মন ই ঠিক থাকে। আর থাকে সুস্থ্যতা । ঠিক তেমনি হাইওয়ে পুলিশের মাথা বর্তমানে একেবারেই সুস্থ্য। তাই এমন সুস্থ্যতার প্রভাব পরেছে দেশবাসীর উপর। দেশের কোথাও কোন হাইওয়েতে ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের কোন ভোগান্তি নাই। কেন ? এর একমাত্র কারণ আমাদের হাইওয়ের শীর্ষ কর্তা অতিরিক্ত আইজিপি জনাব সাহাবুদ্দিন খান। স্বচ্ছতার সাথে কোন ভন্ডামী না করে অনুসন্ধ্যান করেলেই বেড়িয়ে আসবে জনাব সাহাবুদ্দিন খানের কারণে গত রোজার ঈদ আর এই কোরবানীর ঈদে কোন দুর্ভোগ নাই সারাদেশের কোন সড়কে। ফলে স্বস্থির যাত্রায় হাসিমুখে বোড়ি ফিরছে সকলেই।
জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার ওপর দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট ও এশিয়ান হাইওয়ে (বাইপাস) এই তিন মহাসড়কে অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করেন। এ ছাড়া ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সংযোগ সড়ক হিসেবে পরিচিত ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষজন যাতায়াত করেন।
এই সড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ চলছে। ফলে প্রায় সময় যানজট ও গাড়ির ধীরগতির সৃষ্টি হয়। তবে এবারের ঈদে কোনও দুর্ভোগ পোহাতে হবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
হাইওয়ে পুলিশ বলছে, আসন্ন ঈদুল আজহায় মহাসড়কে নির্বিঘ্নে যান চলাচলের জন্য অতিরিক্ত টিম কাজ করছে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হিসেবে শিমরাইল, মদনপুর, মোগরাপাড়া এবং মেঘনা টোলপ্লাজাকে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। সেই সঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাঁচপুর, তারাব বিশ্বরোড, রূপসী মোড়, বরপা ও ভুলতা মোড়কে চিহ্নিত করেছে তারা। এসব স্থানে প্রায় সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। ফলে এই পয়েন্টগুলোতে বাড়তি নজরদারি রাখা হচ্ছে। যাতে করে ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা স্বস্তির হয়। তবে এশিয়ান হাইওয়ে অপ্রশস্ত ও খানাখন্দ থাকায় শঙ্কা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে সড়ক ও মহাসড়কের পাশে অস্থায়ীভাবে হাট বসানো হয়। এ ছাড়া মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে গরু-ছাগল ওঠা-নামা করায় যানজটের সৃষ্টি হয়। যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা, দূরপাল্লার যানবাহনগুলো পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে উভয় লেনে ঢুকে পড়া, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল, সড়কের একাংশ দখল করে বিভিন্ন যানবাহনের স্ট্যান্ড ও বাজার গড়ে ওঠার কারণেও যানজট সৃষ্টি হয়।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারগামী বাসের চালক আবুল কালাম জানান, মহাসড়কে এখন যানজট নেই বললেই চলে। বেশ স্বস্তিতে মহাসড়ক অতিক্রম করা সম্ভব হচ্ছে।
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রাইভেট কার চালক আসাদ মিয়া বলেন, ‘কিছু কিছু পয়েন্টে জটলা রয়েছে। তবে মহাসড়কে সেভাবে কোনও যানজট নেই।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক প্রসঙ্গে কাঁচপুর হাইওয়ে পুলিশের টিআই মোহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, ‘এখন পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কোনও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে অতিরিক্ত টিম মহাসড়কে কাজ করবে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের ১০টি টিম কাজ করে থাকে। ঈদের বাড়তি চাপ সামাল দিতে আরও অতিরিক্ত ১০টি টিম কাজ করবে। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বাড়তি নজরদারি রাখা হবে। এ ছাড়া সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’
এশিয়ান হাইওয়ে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘এশিয়ান হাইওয়ের অপ্রশস্ত সড়কে প্রায়ই যানজটের সৃষ্টি হতো। তবে এবার ঈদে সেই প্রবণতা কমে এসেছে। খুব বেশি গাড়ির চাপ থাকলে ধীরগতি হতে পারে। এ ছাড়া ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেও কোনও যানজট নেই।’
ঢাকা-সিলেট ও এশিয়ার হাইওয়ে মহাসড়কের দায়িত্বে রয়েছেন ভুলতা হাইওয়ে ক্যাম্পের উপ-পরিদর্শক হাজিউল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ঢাকা-সিলেট ও এশিয়ার হাইওয়েতে এখন পর্যন্ত কোনও যানজট নেই। তবে এশিয়ান হাইওয়ের অপ্রশস্ত সড়ক ও বিভিন্ন স্থানে গর্ত থাকার ফলে মাঝে মধ্যে যানজটের সৃষ্টি হতো। সেদিকে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া দুটি পয়েন্টে মহাসড়কের খুব কাছে প্রাণীর হাট বসেছে। সেদিকে আমাদের টিম মনিটরিং করছে এবং বিশেষ নজর রেখেছে। ফলে আসন্ন ঈদের আগে যানজটের কোনও সম্ভাবনা নেই। এবারের ঈদকে ঘিরে অতিরিক্ত সাতটি টিমসহ মোট ১২টি হাইওয়ে পুলিশের টিম কাজ করছে।’
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের উন্নয়ন কাজের জন্য প্রায় সময় শিবু মার্কেট, জালকুড়ি সহ বিভিন্ন স্থানে গাড়ির ধীরগতির সৃষ্টি হয়। এই রোড ছয় লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ ৭৫ শতাংশ শেষ হয়েছে বলে জানালেন উপ-প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সড়ক ও জনপথের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, ‘প্রকল্পের কাজ ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। সাইনবোর্ড থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় পর্যন্ত সাত কিলোমিটার অংশের কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। বাকি রয়েছে এক কিলোমিটার। জটিলতার কারণে কিছু কাজ আটকে আছে। আশা করছি, ঈদের পরে কাজগুলো সম্পন্ন হলে খুব শিগগিরই কাজ সম্পন্ন করতে পারবো। তবে ঈদের সময়ে এই সড়কে যানজটের দুর্ভোগে পড়ার সম্ভাবনা নেই।’
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঈদকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ইউটার্ন দেওয়া হয়েছে। মহাসড়কের সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল ও সানারপাড় এলাকায় ইউটার্ন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চিটাগাং রোডে ইউটার্নের কাজ চলছে। সেখানকার পুলিশ বক্স সরিয়ে সড়কের অংশ প্রশস্ত করা হয়েছে। সুতরাং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটের কোনও সম্ভাবনা নেই।’
Discussion about this post