গুলিবিদ্ধ দম্পতির অবস্থা এখন কিছুটা ভালো। তাঁরা পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বন্দর এলাকায় জমি দখলের চেষ্টাকালে এক দম্পতিকে গুলিবিদ্ধ করার মামলায় অস্ত্রধারী হোন্ডাবাহিনীর সন্ত্রাসীরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ঘটনার আট দিনেও হোতা আলী হায়দার ওরফে পিজা শামীমসহ অস্ত্রধারী ক্যাডারদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ফলে ভুক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, অস্ত্রধারী আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও তাঁদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মামলার আসামীরা নারায়ণগঞ্জের আতঙ্ক ‘হোন্ডা বাহিনী’র সদস্য। তাঁদের সবাই আজমেরী ওসমানের সহযোগী হিসেবে পরিচিত। আজমেরী ওসমান নারায়ণগঞ্জের প্রয়াত সংসদ সদস্য নাসিম ওসমানের ছেলে। তাঁর চাচা সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ও শামীম ওসমান।
আজমেরীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত আলী হায়দার তথা পিজা শামীম হোন্ডা বাহিনীর নেতৃত্ব দেন। এ বাহিনীর বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ শহরজুড়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ রয়েছে।
১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দর উপজেলার ফরাজীকান্দা এলাকায় জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায়ক ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত রাইসুল হকের ছেলেদের জমি দখল করতে যান হোন্ডা বাহিনীর সদস্যরা। এ সময় ওই জমির মালিকপক্ষ ও স্থানীয় লোকজনের বাধার মুখে পড়তে হয় তাঁদের। এক পর্যায়ে তাঁরা ১০-১২টি গুলি ছোড়েন। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন রাইসুল হকের ছেলে মঈনুল হক ও তাঁর স্ত্রী সোমা আক্তার। আহত হন আরও ১৫ জন।
এ সময় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ধাওয়া দিলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় সন্ত্রাসীরা। তাদের ফেলে যাওয়া দুটি মোটর সাইকেলে আগুন দেন এবং দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন স্থানীয় লোকজন ঘটনার দিনই মঈনুল হকের ছোট ভাই তানভীর আহমেদ বাদী হয়ে বন্দর থানায় আলী হায়দারসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। রাতেই মামলায় এজাহারভুক্ত চার আসামীসহ ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরের দিন আদালতের মাধ্যমে তাঁদের এক দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে আসামিদের মধ্যে অস্ত্রধারী কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী তানভীর আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘প্রকাশ্যে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আজমেরী ওসমানের সহযোগী আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমের নেতৃত্বে জমি দখলের চেষ্টা করা হয়েছে। আমার ভাই ও ভাবিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়েছে, কিন্তু মূল হোতা, অস্ত্রধারীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।
তানভীর আরও বলেন, ‘ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজে অস্ত্রধারীদের দেখা গেছে, সেটি আমরা পুলিশের কাছে দিয়েছি। ওই ভিডিও ফুটেজে আজমেরী ওসমানের সহযোগী সনেট, সিজান, ডালিম, আমির হোসেনের হাতে গুলি করতে দেখা গেছে। কিন্তু পুলিশ অস্ত্রধারী আসামিদের গ্রেপ্তার করছে না। সেই অস্ত্রও উদ্ধার করছে না। পিজা শামীমসহ সহযোগীরা প্রকাশ্যে শহরে ঘুরে বেড়ালেও তাঁদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না।’
ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন জানান, গুলিবিদ্ধ দম্পতির অবস্থা এখন কিছুটা ভালো। তাঁরা পঙ্গু হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন। বর্তমানে বাড়িতে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হাসপাতালে নিয়ে ড্রেসিং করানো হচ্ছে তাঁদের।
গুলিবিদ্ধ মঈনুল হকের চাচা আবুল তালেব বলেন, ‘প্রকাশ্যে হামলা ও গুলিবিদ্ধ করলেও অস্ত্রধারী আসামিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত। দ্রুত অস্ত্রধারী আসামিদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
ওই ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত এবং পরিকল্পনাকারী, তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাই লাউ মারমা। তিনি বলেন, ‘আমরা ওই ঘটনার দিন অস্ত্র ব্যবহারের একটি ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি, সেটি নিয়ে আমরা কাজ করছি। সেই অস্ত্রগুলো বৈধ না অবৈধ, সেগুলো যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’
উল্লেখিত এমন সংবাদ প্রথম আলো তে প্রকাশিত হলেও সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ৯ দিন পর প্রয়াত জাতীয় পার্টির নেতা ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান রাইসুল হক পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করেছে পারভীন ওসমান ও তার ছেলে আজমেরী ওসমান।
২৫ মার্চ শনিবার দুপুরে ফরাজিকান্দায় অবস্থিত রাইসুল হক চেয়ারম্যানের বাড়িতে উপস্থিত হন তারা।
এসময় সংঘর্ষের বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি উল্লেখ করে ভুক্তভোগী পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন আজমেরী। একই সাথে থানায় দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করারও অনুরোধ জানানো হয়।
পারভেজের পরিবার জানায়, গুলিবিদ্ধ পারভেজ ও তার স্ত্রী সুমার খোঁজ খবর নেন তারা। পরে পুরো বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি উল্লেখ করে এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।
মামলা প্রত্যাহারের অনুরোধ করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে বলেন, ‘আমার সামনে এমন কোন কথা হয়নি। এই বিষয়ে তাদের কিছু বলতে শুনিনি। তবে আজকে তারা আমার ভাই ও ভাবীর খোঁজ খবর নিয়েছেন এবং দুঃখ প্রকাশ করেছেন।’
প্রসঙ্গত গত ১৬ মার্চ দুপুরে বন্দরের ফরাজিকান্দায় ৪৩ শতাংশ জমি দখল নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পিজা শামীমের নেতৃত্বে হোন্ডাবাহিনী প্রবেশ করে সেই জমিতে। জমির চারপাশে গাঁথুনি দেয়ার সময় প্রথমে রাইসুল হকের পরিবারের সাথে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে এলাকাবাসী একত্রিত হয়ে হোন্ডাবাহিনীকে ধাওয়া দেয়। এসময় চারটি দামী মোটরসাইকেলে রেখে পালানোর সময়ে বিক্ষুব্ধ জনতা দুটিতে আগুন ধরিয়ে দেয় ও অপর দুটি ভাঙচুর করে। হামলায় নারী সহ প্রায় ১০ জন আহত হয়। এদের মধ্যে দুজনের পা গুলিবিদ্ধ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে বেশ কিছু ফাঁকা গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। একের পর এক গুলিবর্ষনের শব্দে পুরো ফরাজিকান্দা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সংঘর্ষের সময় পায়ে গুলিবিদ্ধ হওয়া পারভেজের ছোট ভাই তানভীর বাদী হয়ে রাতে মামলা দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলো আজমেরী ওসমানের সেকেন্ড ইন কমান্ড মাসদাইরের মৃত রোস্তম আলী ডাক্তারের পুত্র আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম (৬০), ঢাকার নবীনগর হাউসিং সোসাইটির বাসিন্দা সেকান্দার মিয়ার পুত্র নূর মোহাম্মদ (৫৫), সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়ার মৃত শাহজাদার পুত্র রায়হান জাদা রবি (৪৫), রূপগঞ্জের ভুলতা মিয়াবাড়ী এলাকার মোসলেম উদ্দিনের পুত্র মামুন (৪৮), বন্দরের চুনাপুরা এলাকার হাবির পুত্র মনির হোসেন মনা(৫২), বন্দর খানবাড়ী এলাকার মৃত জুলমত আলী খানের পুত্র কবির (৫৫), আমির হোসেন (৩৮), উৎসব (৪০), মুকিত (৪৫), মুহিদ (৪০), পাঠান রনি (৪২) সহ অজ্ঞাত ২৫/৩০ জন।
যদিও ঘটনার পর ১৭ মার্চ প্রয়াত সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নাসিম ওসমানের পুত্র আজমীর ওসমান গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে এই হোন্ডা বাহিনী কিংবা সন্ত্রাসীরা তারে লোক না বলে দাবী করেছেন । তার নাম ব্যবহার করে অপরাধ করে থাকলে তাদের আইনের আওতায় আনার দাবীও করেছে আজমেরী ওসমান। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আজমেরী ওসমানের নাম জাড়ানো হচ্ছে বলেও দাবী করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
নারায়ণগঞ্জের আতংকের নাম হোন্ডা বাহিনী। পিজা শামীম ছাড়াও এর পূর্বে বিভিন্ন নামে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে সন্ত্রসাীরা এই হোন্ডা মহড়া দিয়ে আতংক সৃস্টি করতো নগরীতে । দিনে এবং রাতে আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমের নেতৃত্বে হোন্ডা বাহিনীর এমন তান্ডবের খবর সকলের ই জানা। ১৬ মার্চ বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দর উপজেলার ফরাজীকান্দা এলাকায় জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক আহ্বায়ক ও কলাগাছিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত রাইসুল হকের ছেলেদের জমি দখল করতে গিয়ে হোন্ডা বাহিনীর ব্যাপক তান্ডব চালিয়ে গুলিবর্ষণ করে । যা সকলের সকলেই দেখলেও এখনো আটক করতে পারে নাই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের। ফলে আতংক যেন আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে জনমনে । যে কোন সময় আবারো অঘটন ঘটানোর আশংকা করছে নগরবাসী।
Discussion about this post