বন্দরে ফরাজিকান্দা এলাকায় জমি জমি দখলকে কেন্দ্র করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া গুলি বর্ষনসহ অগ্নি সংযোগের ঘটনায় আতংক বিরাজ করছে । দুই পক্ষের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়াতে গুলিবর্ষণের ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত ১০ জন। জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে দুটি মোটর সাইকেল। ভাঙচুর করা হয়েছে আরো কয়েকটি গাড়ি।
বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে সাড়ে ১২টায় বন্দরের নাসিম ওসমান সেতু পাশে ফরাজিকান্দা বাজারের পাশে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যাকষদর্শী এলাকাবাসী ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীমের নেতৃত্বে মুকিত, ডালিম, সিজারসহ ৪০-৫০ জনের সন্ত্রাসী বাহিনী এ হামলায় অংশ নেয়। তারা অন্তত ১৫-২০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। ঘটনার সময় পুলিশও সেখানে উপস্থিত ছিলেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান।
এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়েছেন ফরাজিকান্দা এলাকার প্রয়াত চেয়ারম্যান রাইসুল হকের ছেলে মঈনুল হক পারভেজ (৪২)। আহত হয়েছেন তার স্ত্রী সোমা আক্তার (৩২), মা মাহফুজা হক (৬৫) এবং বিল্লাল হোসেন (৪৫) নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। গোলাগুলির ঘটনার পর এলাকাবাসী দু’টি মোটর সাইকেলে আগুন দেয়। মোটর সাইকেল দু’টি হামলাকারীদের বলে জানান স্থানীয়রা।
তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতুর টোল সুপারভাইজার জহিরুল আলম বলেন, ‘পাশের মসজিদে জহুরের নামাজ পড়তে গেছিলাম। তখনই ঘটনা ঘটে। পাশের বাজারের জমি নিয়ে ঝামেলা হয়। ১৫-২০ রাউন্ড গুলির আওয়াজ পাইছি। প্রচুর হোন্ডা ছিল। কয়েকজন রাম দা, চাপাতি হাতে ঘোরাঘুরি করতেও দেখছি। মাসখানেক আগেও এই জমি নিয়ে ঝামেলা হইছে।’
পারভেজের ছোট ভাই তানভীর আহমেদ বলেন, ‘একমাস আগে পিজা শামীমের নেতৃত্বে একটি সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে কে বা কারা সাইনবোর্ডটি খুলে ফেলে। দুইদিন আগে রাত একটা বাজে পিজা শামীম ও তার হোন্ডা বাহিনী আমাদের বাড়িতে এসে সাইনবোর্ড খুলেছি কেন জানতে চেয়ে হুমকি-ধমকি দেয়।’
‘আজকে সকাল সাড়ে দশটার দিকে এসে তারা বাজারের চারদিকে বাঁশের বেড়া দিকে থাকে। চারদিকে তাদের হোন্ডাবাহিনী। পরে আমার ভাই ৯৯৯ এ পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে আইসাও তাদের থামাতে পারেনি। পুলিশের সামনেই সোয়া একটার দিকে তারা হামলা করে। গুলি লাগে আমার ভাইয়ের বা পায়ে। তাকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হন ভাবীসহ আরও কয়েকজন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’
আহত পারভেজের চাচা আবু তালেব বলেন, তার ভাই প্রয়াত রাইসুল হক ছিলেন জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক ও কলাগাছিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। সেতুর উত্তর পাশের জমিতে এখন ফরাজিকান্দা বাজার। এই জমিটির মালিক ছিলেন হাজী জহুরা বেগম। নিঃসন্তান এই নারী তার দুই সন্তানের নামে জমি লিখে দেন। জমিটি ৩০-৪০ বছর আগে তাদের কাছ থেকে কেনেন রাইসুল হক। আলী হায়দার শামীম ওরফে পিজা শামীম সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে জমিটি দখল নিতে আসেন।’
ক্রয় করার সময় জমির পরিমাণ ৬৬ শতাংশ থাকলেও পরে তৃতীয় শীতলক্ষ্যা সেতু ও সড়ক নির্মাণের জন্য সাড়ে নয় শতাংশ অধিগ্রহণ করা হয়। বাকি সাড়ে ৫৬ শতাংশ জমি দীর্ঘবছর যাবৎ রাইসুল হকের পরিবার ভোগদখল করে আসছেন বলেও জানান আবু তালেব।
তিনি বলেন, ‘জমির কাগজপত্র নিয়া বসুক। তারা যদি তাদের নামে কিছু দেখাতে পারে তাহলে নিবে, আমরা দেখাতে পারলে আমরা নেবো। হিসাব তো এইখানে ক্লিয়ার। কিন্তু এইভাবে সন্ত্রাসীগিরি কইরা তো কোন সমাধান হয় না।’
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বন্দর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) তসলিম উদ্দিন বলেন, ‘জমি সংক্রান্ত বিরোধে দুইপক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। সেখানে গোলাগুলির মতো ঘটনা ঘটেছে বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। একজন এখন পর্যন্ত গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে তথ্য পেয়েছি। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করলে সে অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা রয়েছে।’
পুলিশ ঘটনাস্থলে ছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুইপক্ষের ঝামেলা হচ্ছে ৯৯৯ এ এমন সংবাদ পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। প্রথমে অল্পসংখ্যক পুলিশ সেখানে ছিল, পরে আরও পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক আছে।’
Discussion about this post