রমজান মাস আসার আগে থেকেই ব্যবসায়ী চক্র যেন শুরু করে অসাধু পন্থায় কি করে অধিক মুনাফা আদায় কার যায়। নিত্য পন্য ছাড়াও এই রমজান মাস ও ঈদকে সামনে রেখে ভেজাল কারবারীদের মধ্যে রমজানের অন্যতম খাদ্য মুড়ি যে কি প্রক্রিয়ায় তৈরী হচ্ছে এবং কখনো গোপনে অন্ধকার ভোরে নৌ ও স্থল পথে আবার প্রকাশ্যেই একই পন্থায় পাইকারী বাজার দখল করেছে তার কোন হিসাব নাই আইন প্রয়োগকারী কোন সংস্থা কাছে।
একই পন্থায় ভারতীয় পন্যের প্রায় ২৫ টি চোরাই কারবারী সিন্ডিকেট নারায়ণগঞ্জের প্রায় সকল আইনশৃংখলা বাহিনীর নির্লজ্জ কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে এভাবেই রাতের আধারে আবার দিনের আলোতে অপরাধ সাম্রাজ্য চালিয়ে যাচ্ছে বিনা বাধায়।
একই সাথে রয়েছে নারায়ণগঞ্জে অসংখ্য অবৈধ সেমাই কারখানা। একেবারেই ঘোষনা দিয়ে একই পন্থায় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অসাধু কর্তাদের পূর্বে থেকেই ম্যানেজ করায় কোন সংস্থা ই এমন অবৈধ কর্মকান্ডে দিকে চোখ তুলেও তাকান না। গণমাধ্যম কিংবা সচেতন মহল অসাধু কর্তাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর পরও কোন অবস্থাতেই টনক নড়ে না আইনপ্রয়োগকারী কোন সংস্থার। ফলে অসাধু চক্রের আস্ফালন যেন বেড়েই চলেছে । অভিযোগ রয়েছে আগে থেকেই সকল সংস্থা ম্যানেজ থাকায় মুড়িতে বিষাক্ত হাইড্রোসস ও ইউরিয়া সার মিশানো হলে কার কি যায় আসে। এমন প্রক্রিয়ায় চলছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নির্লজ্জ কর্তারা। বছরের পর বছর জুড়ে এমন অপরাধীদের বিরুদ্ধে হাজারো গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করলোও ঘুম ভাঙ্গে না কর্ণকুম্ভের।
এমন অসাধু ব্যবসায়ীদের আস্ফারনের কারনেই বাজারে কোন পন্য সামগ্রীর অভাব না থাকলেও বছরজুড়েই নিত্য পণ্যের দাম নিয়ে হাহাকার লেগেই আছে। আর এমন অসাদু গুটি কয়েক কর্মকর্তা ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের। রোজার দিনগুলোতেও বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য থাকে লাগামহীন। অথচ প্রতিবারই রমজান এলে সরকারের সংশ্লিষ্টরা সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেন।
বলা হয়, রমজানে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে কঠোরভাবে বাজার পর্যবেক্ষণ করা হবে। বলা হয়, রমজানে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখা হবে। কিন্তু বাস্তবতা তথৈবচ। আদতে হয় না এসবের কোনোকিছুই। ঘটে না আশ্বাসের প্রতিফলনও।
এবারও দুয়ারে কড়া নাড়ছে সিয়াম সাধনার মাস পবিত্র মাহে রমজান। এরই মধ্যে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও একটু একটু করে আরও বাড়তে শুরু করেছে। শেষ পর্যন্ত আকাশছোঁয়া এ দাম কোথায় গিয়ে থামে, তা নিয়েই এখন দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের মানুষের যত চিন্তা।
গত কয়েকদিনের ব্যবধানে কি কোনো পণ্যের দাম বেড়েছে ? শুক্রবার সকালে এ প্রশ্নের জবাবে রাজধানীর তালতলা বাজারের মুদি ব্যবসায়ী হোসেন মিয়া বলেন, সব কিছুরই তো দাম বেড়ে রয়েছে, আর কতো বাড়বে ? কোনো পণ্যের দাম কমেছে কি না-এ প্রশ্নে তার সাফ জবাব, এ দেশে কোনোকিছুর দাম বাড়লে আর সেটা কমে না।
হোসেন মিয়া একটু কাঠখোট্টা মানুষ। এরপর আর কোনো কথা বলেননি। পাশের অন্য একটি মুদি দোকানে গিয়ে জানা গেল, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ছোলা, অ্যাংকর ডাল, বেসন ও ট্যাংয়ের দাম। আর আগে থেকে বাড়তি চিনি, তেল, আটা-ময়দার দাম কমেনি।
রমজান সামনে রেখে বাজারে অস্বস্তি বাড়ছে। উদ্বেগ বাড়ছে নিম্নআয়ের মানুষের। নিত্য পণ্যের বাড়তি দামে নাভিশ্বাস উঠছে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তাদের। এ-দোকান ও-দোকান ঘুরেও সাধ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারছেন না অনেকে। প্রতিদিনের ডাল-ভাতের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। অনেকে অতি প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে চুপচাপ বাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
তালতলা বাজারে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় রং মিস্ত্রি সুজাউলের। তিনি বলেন, প্রতিদিনই বউ (স্ত্রী) বলে রোজার জন্য চিনি-ছোলা-ডাল কিনে রাখতে। প্রতিদিনই ভাবি নেবো। কিন্তু কোনো দিনই প্রয়োজনের সব বাজার করে ঘরে ফিরতে পারি না। বাড়তি কেনা তো অনেক দূর।
রমজানের আর অল্প কিছুদিন বাকি, তাই সুজাউলের মতো অনেকেই রোজার দিনগুলোতে প্রয়োজনীয় পণ্য কিনে রাখতে চান। কিন্তু সাধ থাকলেও সাধ্যের সীমাবদ্ধতা আছে তাদের। অনেকে বাজারে গিয়ে দরদাম করেই ফিরে আসছেন। কেউ কেউ দাম একটু কমার অপেক্ষা করছেন। তবে বিগত বছরগুলোর মতো এবারও যে রমজানে নিত্য পণ্যের বাজার লাগামহীন থাকবে, সেটা বুঝতে বাকি নেই সীমিত আয়ের মানুষের। আর সে কারণেই তাদের যত অস্বস্তি।
রোজায় ইফতারি তৈরিতে সাধারণত ছোলা, অ্যাংকর ডাল, বেসনের বেশি ব্যবহার হয়। গত কয়েকদিনে এসব পণ্যের দাম হু হু করে বেড়েছে। এমনকি শরবত তৈরির জন্য যে ট্যাং লাগে বাজারে সেটার এখন রীতিমতো সংকট।
যেসব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে, তারাও বিক্রি করছেন গত রমজানের থেকে কেজিপ্রতি প্রায় ২০০ টাকা বাড়তি দামে। বর্তমান বাজারে ট্যাং ১৪০০-১৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
এ দিকে বাজারে গত এক মাসে ছোলার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। মাস খানেক আগে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮০-৮৫ টাকা দরে, যা এখন ৯৫-১০০ টাকা। ছোলার সঙ্গে ছোলাবুটের দামও বেড়েছে ৫-১০ টাকা। বাজারে প্রতি কেজি ছোলাবুট বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়।
এছাড়া অ্যাংকর ডাল কেজিতে ১০ টাকার মতো বেড়ে ৭০-৮০ টাকা এবং একইভাবে বেসনের দাম বেড়ে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
গত কয়েক মাস ধরেই বাজারে সরকার নির্ধারিত দামে তেল-চিনি মিলছে না। বেঁধে দেওয়া দামে প্রতি লিটার খোলা পাম তেল ১১৭ টাকায় বিক্রির কথা থাকলেও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। একইভাবে সরকার নির্ধারিত প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল ১৬৭ টাকার পরিবর্তে বিক্রি হচ্ছে ১৭২ থেকে ১৭৫ টাকায়।
খোলা চিনির ক্ষেত্রে নির্ধারিত দাম ১০৭ টাকা হলেও এখনো খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি ১১৫ থেকে ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১২০-১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল চিনি (দেশি) বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা দামে।
এ দিকে মসলার বাজারে আদা-রসুনের বাড়তি দাম কমেনি। উল্টো পেঁয়াজের দাম সপ্তাহ ব্যবধানে ৫ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৪০ টাকা এবং আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০-৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্য দিকে মাছ-মাংস এখন অনেকটাই স্বল্প আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে গেছে। মুরগির বাজার এক-দেড় মাস ধরেই অস্থির। দফায় দফায় বেড়ে ব্রয়লারের কেজি এখন ২৫০-২৫৫ টাকা। সোনালি জাতের মুরগির কেজি ৩৪০-৩৫০ টাকা। প্রতি হালি ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকা দরে।
মাসের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম প্রায় ৫০ টাকা বেড়ে এখন প্রতি কেজি ৭৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে মানভেদে রুই-কাতলার কেজি হয়েছে ৩৫০-৪০০ টাকা। চাষের তেলাপিয়া পাঙাশও ২০০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ দিকে সবজির বাজারে ইফতার শুরুর আগেই বেড়ে গেছে লেবুর দাম। এক হালি লেবু আকার ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকা পর্যন্ত। একই কারণে বাড়ছে বেগুনের দামও। গোল বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০ টাকা দরে। তবে লম্বা বেগুন ৫০-৭০ টাকা, যা সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ২০ টাকা বেড়েছে।
নারায়ণগঞ্জ মহানগরীর দিগুবাবুর বাজারের ব্যবসায়ী মুকুল বলেন, রমজান ঘনিয়ে আসছে। তাই বেগুন-লেবুর চাহিদাও বেড়েছে। অনেকে রমজানের আগেই বেশি পরিমাণে কিনে ঘরে মজুত রাখছেন। এ কারণে বাজারে চাহিদা বাড়ায় দামও বেড়েছে। বাজারের খুব কম ব্যবসায়ী খুঁজে পাবেন যারা স্বল্প ব্যবসায় তুষ্ট থাকেন । সকলেই কেমনে অসাধু উপায়ে রাতারাতি টাকার বস্তা বানাবেন সেই প্রতিযোগিতায় আইনশৃংখলা বাহিনীর অসাধুদের সাথে লিয়াজােঁ করেই অপরাধ করে জনসাধারণ কে ঠকাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে। নইলে নাকের ডগায় এতো অপরাধ হচ্ছে কেমনে।
Discussion about this post