চিকিৎসক নেতাকে অপর চিকিৎসক নেতা ও তার অনুসারীরা পিটিয়ে আহত করার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে আরেকটি কলংক যুক্ত হলো। একই সাথে ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাচিপ নেতার অভিযোগ মামলা আকারে গ্রহণ করে আসামী গ্রেফতারের নজির সৃষ্টি করেছে নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি আনিচুর রহমান।
যা ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে চিকিৎসক আর পুলিশকে কেন্দ্র করে। একেই সাথে এই ঘটনায় কোন কোন গণমাধ্যম ভিন্ন ভিন্ন পক্ষালম্বন করে সংবাদ প্রচার করায় মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে নগরী জুড়ে ।
পিটুনীর শিকার স্বাচিপ নারায়ণগঞ্জ জেলার একাংশের নেতা ডাক্তার বিধান চন্দ্র পোদ্দার অভিযোগে বলেন, গণতান্ত্রিক ঐক্য পরিষদের প্যানেল পরিচিত অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় নারায়ণগঞ্জ জেলা গ্রন্থাগারের অডিটরিয়ামে। এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ডাক্তারসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা সাংবাদিক, আইনজীবী সহ বিভিন্ন পেশার লোকজন আসেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে স্বাচিপের তিনজন নেতাও ছিলেন। আমি যেহেতু নারায়ণগঞ্জ স্বাচিপ এর সাধারণ সম্পাদক জেলা বিএমএ এর সহ সভাপতি সেই হিসেবে আমাকে আগে থেকেই খবর দেয়া হয়েছিলো। কেন্দ্রীয় স্বাচিপের মহাসচিব উনি প্রথমে সোনালী ব্যাংকে এসে কিছু সময় বিশ্রাম নিয়ে “আমার সাথে একজন আসো তোমরা“ বলার পর আমি তার গাড়ীতে উঠে জেলা গ্রন্থাগারে আসি । গাড়ী থেকে নামার সাথে সাথেই দেখি ডাক্তার সোহেল, ডাক্তার নিজাম, ডাক্তার অলক এবং কয়েকজন ডাক্তার আগে থেকে অবস্থান করছেন। গাড়ী থেকে নামার সাথে সাথেই সোহেল, নিজাম বলে, “তুই এখানে কেন ?“ এ কথা বলেই চার পাঁচ জন আমাকে মারধর শুরু করে। কি কারণে আমাকে মারধর করলো আমি জানি না।
এমন ঘটনাটি ঘটে বুধবার (১ মার্চ) বিকেলে। ঘটনার পর বুধবার দিবাগত মধ্য রাতে পিটুনীর শিকার স্বাচিপ নারায়ণগঞ্জ জেলার একাংশের নেতা ডাক্তার বিধান চন্দ্র পোদ্দার থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও তিনি তা গণমাধ্যমে অস্বীকার করে বলেন, “আমি মৌখিকভাবে থানায় অবহিত করেছি ।”
অথচ দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্র থেকে জানা যায়, বুধবার মধ্যরাতে ফরিদপুর জেলার মধুখালী থানার স্বর্গীয় নলিনী কুমার পোদ্দারের পুত্র খানপুর ৩শ শয্যা হাসপাতালের ডক্টরস কোয়ার্টারের (বেলী) বাসিন্দা ডাঃ বিধান চন্দ্র পোদ্দার (৪৯) বাদী হয়ে স্বাচিপ নারায়ণগঞ্জ জেলার একাংশের নেতা সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আতিকুজ্জামান সোহেল (৪৭) এবং রিপন (৪৬)সহ আরো অজ্ঞাতনামা ৫/৬ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
এই মামলা দাযেরের কয়েক ঘন্টার মধ্যে বৃহস্পতিবার রাতে মামলার করিতকর্মা তদন্ত কর্মকর্তা দারোগা কামরুজ্জামান এজাহারভূক্ত আসামী রিপনকে গ্রেফতার করেন।
এমন ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় গণমাধ্যম কর্মীদেরকেও প্রবেশের ক্ষেত্রে ছিলো রহস্যজনক নানা বিধি নিষেধ। থানার মূল ফটকে এক প্রকার তালা বদ্ধ করার চিত্রও দেখা গেছে।
ডাক্তার নেতা কর্তৃক অপর ডাক্তার নেতাকে মারধর করার সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পরলে তাতে দেখা যায় স্বাচিপ নারায়ণগঞ্জ জেলার একাংশের নেতা ডাক্তার বিধান চন্দ্র পোদ্দারকে নিয়ে টানা হেচরা করছে স্বাচিপ নারায়ণগঞ্জ জেলার একাংশের নেতা সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আতিকুজ্জামান সোহেল।
এই ঘটনার পর পর স্বাচিপ নারায়ণগঞ্জ জেলার একাংশের নেতা সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ আতিকুজ্জামান সোহেল দাবী করেন, স্থানীয়দের চোখ রাঙ্গানী ও ক্ষমতার দম্ভ করে নানা কর্মকান্ড করে বেড়ান ডাক্তার বিধান চন্দ্র পোদ্দার। যেমন নারায়ণগঞ্জেন সকল ডাক্তারদের সরকারী স্টাফদের উপর উপর চোখ রাঙ্গানী ছিলো তার প্রতিদিনের কর্মকান্ড। নারায়ণগঞ্জে তিনি চাকরী না করলেও ৩শ শয্যা হাসপাতালে তার স্ত্রী ডাক্তার দিপান্বিতার চাকরীর সুবাদে ডাক্তারদের জন্য বরাদ্ধ কারা চারটি কোয়ার্টার (ফ্ল্যাট) দখল করে একটিতে চেম্বার, একটিতে ড্রাইভারের বাসস্থান, একটিতে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের বসবাস এবং আরকে টিতে নিজে বসবাস করছেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে । একই সাথে সরকারী এই হাসপাতালের ক্রয় সংক্রান্ত কমিটিতেও নাকি তার বিশাল প্রভাব বিস্তার করে চলেন । তাদের এমন কর্মকান্ডে বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস করে না । তাই ক্ষুদ্ধ হয়ে কেউ কেউ তর্ক বিতর্ক হতে পারে ।
তবে কোয়ার্টার দখলের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের সুপারেন্টেন্ড ডাক্তার আবুল বাসার বলেন, হাসপাতারের ডক্টরস কোয়ার্টার ডাক্তার বিধান চন্দ্র পোদ্দারের স্ত্রী ডাক্তার দিপান্বিতার নাম বরাদ্ধ আছে। অপর একটি ফ্ল্যাটে তার ড্রাইভার থাকেন । আর অন্যান্যগুলি খালী আছে । তার শ্বশুড় বাড়ির লোকজন থাকেন কিনা আমি জানি না। শনিবার এসে আপনারা দেখেন আসলে কে থাকেন ওই ফ্লাটে।
Discussion about this post