নারায়ণগঞ্জে কি না ঘটছে ! সব সম্ভবের এই প্রেক্ষাপটে নারায়ণগঞ্জে যেমন ব্যবসা বাণিজ্যের দিক থেকে এগিয়ে তেমনি রাজনৈতিক দাঙ্গা হাঙ্গা, কুটনীতিসহ সকল ধরণের অপরাধ এই জেলায় অহরহ ই ঘটে চলেছে সমানতালে। আর এই নারায়ণগঞ্জে অপরাধীরা যেন নিরাপদ মনে করে সকল ধরণের ঘাঁটি বানাতে চেষ্টা করে। নগরীর চাষাড়ার বালুর মাঠে এক সময়ের অত্যন্ত দরিদ্র একজন ব্যক্তি (যার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে জোড়ালোভাবে) শত কোটি টাকার ভবন তৈরী করছেন পুরো নগরবাসীকে হতবাক করে ! আবার নগরীর সেই পুরাতন স্টেডিয়ামের পাশে এক সময়ের নৌকার মাঝি ফজর আলী বিতর্কিত সম্পত্তি কিনে তৈরী করছেন বহুতল ভবন ! তেমনি নাইরেজিয়ান একটি প্রতারক চক্রের সঙ্গে সহযোগি হিসেবে কাজ করে বিশাল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে রূপগঞ্জে । তিনি কয়েকবছর আগেও একজন সামান্য কুলি হিসেবেই সকলের কাছে পরিচিত ছিলেন !
বিপ্লব লস্কর নামের এক ব্যক্তির কোটি টাকা দামের ডুপ্লেক্স বাড়ি, দামি গাড়িসহ কয়েক কোটি টাকার সম্পদের খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তারা বলছে, এই ব্যক্তি একসময় কুলি ছিলেন। ঢাকায় প্রতারণার মাধ্যমে এই সম্পদ গড়েছেন তিনি।
বছর দশেক আগে বিপ্লব নাইরেজিয়ার একটি প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। সিআইডি জানিয়েছে, চক্রটি বিদেশ থেকে পার্সেলের মাধ্যমে উপহার পাঠানোর নাম করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করত। বিপ্লব প্রতারক চক্রের সদস্য হিসেবে নিজেকে শুল্ক কর্মকর্তা (কাস্টমস অফিসার) পরিচয় দিয়ে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে টাকা আদায় করতেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) গত সেপ্টেম্বরে ঢাকা থেকে বিপ্লবকে গ্রেপ্তার করে। মানুষের সঙ্গে প্রতারণা, জালিয়াতি ও অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের বিষয়টি তদন্ত শুরু করে সিআইডি অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগ। তদন্ত শেষে অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) প্রতিরোধ আইনে বিপ্লবের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। গত সোমবার সিআইডির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিপ্লবের জমিসহ বাড়ি জব্দ করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত।
সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান গতকাল শুক্রবার বলেন, বিপ্লবের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে অর্ধশতাধিক মামলা রয়েছে। দুটি মামলায় তিনি এখন কারাগারে।
বিপ্লবের বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার গেরাখোলায়। সিআইডি ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বিপ্লবের বাবা কুলিগিরি করে সংসার চালাতেন। এখন তিনি স্থানীয় একটি বাজারে আখের রস বিক্রি করেন। তাঁর ছয় সন্তান। পরিবারে অভাবের কারণে বিপ্লবের স্কুলে যাওয়া হয়নি।
বিপ্লবের গ্রামের বাসিন্দা মাসুদ শেখ বলেন, ‘পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর জানতে পারলাম তিনি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করতেন। তবে তাঁর বাবা ও ভাইয়েরা খুব সাধারণ জীবনযাপন করেন।’
বিপ্লব জমি কিনে বাড়ি করেছেন ঢাকার পূর্বাচলের কাছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের ইছাপুরা টেকনোয়াদ্ধায়। সেখানে গিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি এক বছর আগে জমি কিনেছিলেন এক চিকিৎসকের কাছ থেকে। দাম পড়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সেখানে বাড়িটি করতে তাঁর প্রায় তিন কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। বিপ্লব গ্রেপ্তার হওয়ার পর দুই সন্তান নিয়ে বাড়িটি ছেড়ে যান তাঁর স্ত্রী।
রূপগঞ্জে বিপ্লবের বাড়িতে গিয়ে গতকাল শুক্রবার দেখা যায়, ফটক বন্ধ। বন্ধ দরজায় ঝুলছে আদালতের জারি করা জব্দ করার নির্দেশনা। সিআইডি সূত্র জানায়, বিপ্লব যে চক্রের সদস্য ছিলেন, সেই চক্রটি চালাত বাংলাদেশে বসবাসকারী নাইজেরীয় কয়েক জন প্রতারক। তাঁরা বাংলাদেশি ব্যবসায়ী, শিক্ষক ও চাকরিজীবীদের বন্ধুত্বের কথা বলে ডলার বা দামি উপহার পাঠানোর প্রস্তাব দিতেন। উপহার পাঠানোর কথা বলার কিছুদিন পর বিপ্লব নিজেকে শুল্ক কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে উপহারের গ্রহীতাকে ফোন করে নানাভাবে ভয় দেখিয়ে টাকা চাইতেন।
Discussion about this post