নারায়ণগঞ্জের রাজনীতিতে ওসমান পরিবার যেন ফ্যাক্টর । অপ্রতিরোধ্য। রাজনীতিতে দীর্ঘকাল যাবৎ টানাপোড়নের পাশাপাশি দাবড়িয়ে বেড়াচ্ছে এই পরিবারের অনেকেই । ওসমান পরিবারের রাজনীতি ঘিরে সর্বত্রই যেন আলোচনা সমালোচনা । ওসমান পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নিজেদের মধ্যে কামড়া কামড়ি ছাড়াও তাদের নাম ব্যবহার করে সকল ধরণের অপরাধ ঘিরে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জে । এই অবস্থায় কি বলবেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা ?
নতুন বছরে নতুন করে এবার প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের নিয়েও উঠেছে ব্যাপক দূর্ণীতির অভিযোগ। খোদ শাসক দলের বারবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত অপ্রতিরোধ্য মেয়র ডাক্তার সেলিনা হায়াৎ আইভী বরাবরের মতো সকল অনিয়ম দূর্ণীতির প্রতিবাদের মতোই এবারো এই নতুন বছরে স্থা্নীয় সংসদ সদস্য এবং ওসমান পরিবারের বর্তমানের প্রধান অভিভাবক (মুরুব্বী) জাতীয় পার্টির সেলিম ওসমানকে ঈঙ্গিত করে কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, “এখন অনেকের টনক নড়েছে। খান বাহিনী চাই না, হোন্ডা বাহিনী চাই না, অমুক বাহিনী চাই না বলছেন। এই চার বছর কী করলেন ? এই চার বছর কোথায় ছিলেন ? ত্রিশ বছর যাবৎ এই শহরকে জিম্মি করে রেখেছেন আর হঠাৎ ইলেকশন সামনে আসায় এই কথাগুলো বলে জনগণের ভোট পাওয়ার আশা করছেন।”
একই সাথে মেয়র আইভী, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নিজ দায়িত্ব পালনের জোড় তাগিদ দিয়ে কঠোর সমালোচনা করে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ থেকে লক্ষ লক্ষ কোটি কোটি টাকা নিচ্ছেন । সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী এমন কেউ নাই, একদম ওপেন সিক্রেট । তাইলে কাজ করবেন না কেন ?
বছরের শুরুতই ৩ জানুয়ারী মঙ্গলবার সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ‘হাম্মাজান আর ভাইজান’ গ্রুপ নিয়ে বক্তব্য দিয়ে প্রশাসনের প্রতি পদক্ষেপ নেয়ার জোড় দাবী তুলেন। এর দুই দিন পর অর্থাৎ ৬ জানুয়ারী শুক্রবার বন্দর উপজেলার এক সমাবেশে বক্তব্য দিয়ে বন্দরের কুখ্যাত সন্ত্রাসী সকল অপরাধের অন্যতম হোতা খান মাসুদকে নিয়ে কঠোর মন্তব্য করেন।একজন সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের এমন মন্তব্যে এখনো তোলপাড় চলছে নগরীজুড়ে ।
যে খান মাসুদ হাতের তুরি বাজিয়ে পুলিশী ব্যর্থতাকে চ্যালেঞ্চ করে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের চুরি যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ মোবাইল ফোন উদ্ধারসহ সকল ধরণের অসাধ্য কাজ অনায়াসে করেছেন অর্ডার দেয়ার সাথে সাথেই । সেলিম ওসমানের চুরি হওয়া মোবাইল ফোন পুলিশ উদ্ধার করতে না পারলেও খান মাসুদ ই দেখিয়ে দিয়েছে অসাধ্য কান্ড । আবার এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী প্রতিদিন যার অন্ততঃ ৮/১০ টি ফেনসিডিল ছাড়া কাজ করতে পারে না সেই অপরাধী খান মাসুদ পুলিশের অস্ত্র ছিনতাইয়ের মামলায় র্যাবের হাতে আটক হলে তাকে ক্রসফায়ার থেকে রক্ষা করতে রাতভর সকল ধরণের তদ্বির করেছেন সেলিম ওসমান নিজেই। সেই খান মাসুদ অতি সম্প্রতি সূতা ডাকাতিসহ ব্যাপক চাঁদাবাজি করছে ।
খোদ বন্দর থানার পুলিশের একজন কর্মকর্তা ও খান মাসুদের নির্ভরযোগ্য এক সহযোগীর রেকর্ডকৃত বক্তব্য থেকে জানা যায়, থানার ওসিকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা দিয়েই , ঘাটের চাঁদাবাজি, অটো রিকশার চাঁদাবাজি, ভূমিদস্যুতা, চুরি ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ, অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার, নদীর ঘাট দখল, নদীতে চাাঁদবাজি, গ্যাস চুরি, বিদ্যুৎ চুরি, অন্যের বাড়ি দখল, ব্লাক মেইলিংসহ সকল ধরণের অপরাধ করতে ডালিম, মেতরা মাসুদ, হোসেন, নাদিম, লুৎফর, নাককাটা রাজু, চিনারদী রাজু চক্র সকল ধরণের অপরাদের সাথে জড়িত। হত্যা, আত্মহত্যা, জিম্মি, দখল, মোবাইল চুরি, মাদকসহ সকল অপরাধের কর্মকান্ডের নেপথ্যে কুখ্যাত অপরাধী খান মাসুদ চক্র অতিষ্ঠ করে তুলেছে পুরো বন্দরবাসীকে । বন্দরে সকল ধরণের অপরাধ ছাড়াও ডালিম, মেতরা মাসুদ, হোসেন, নাদিম, লুৎফর, নাককাটা রাজু, চিনারদী রাজুর রযেছে একেকটি ভয়ংকর বাহিনী। যাদের ফিরিস্তি প্রকাশ হলে গা শিউরে উঠার মতো অপরাধ অবিরাম চালিয়ে জিম্মি করে রেখেছে পুরো বন্দরবাসীদের।
সন্ত্রাসী ছাড়া ভোটের রাজনীতিতে বন্দরের সফলতার মুখ দেখবে না সেই কুখ্যাত খান মাসুদকে ঘিরে এমন সমালোচনা পর কয়েকটি উচ্ছিষ্টভোগি প্রচার মাধ্যম বন্দরের শীর্ষ এই অপরাধের স্বপক্ষে রম্য রচনা প্রচার করছে ।
সবশেষ গতকাল ৮ জানুয়ারী রোববার সন্ধ্যায় নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে বক্তরা বলেন, “নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ওসমান পরিবারের পক্ষ হয়ে দুর্বৃত্তদের পক্ষ হয়ে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। ওসমান পরিবারের সাথে ভাগ বাটোয়ারায় এই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ও প্রশাসন মিলেমিশে একাকার হয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে।”
একের পর এক এতা ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের মহানগরী ছাড়াও জেলার সর্বত্র ই সমালোচনার ঝড় উঠেছে নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বরত আইনশৃংখলা বাহিনীর বিরুদ্ধে । নারায়ণগঞ্জের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি মারাত্মক অবণতি হওযায় সর্বত্রই শীর্ষ কর্মকর্তাদের মহাদূর্ণীতিবাজ বলেও সকলেই মন্তব্য করছেন । এই অবস্থায় কি বলবেন ডিসি এসপিসহ নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্তারা।
Discussion about this post