‘নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ওসমান পরিবারের পক্ষ হয়ে দুর্বৃত্তদের পক্ষ হয়ে জনগণের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। ওসমান পরিবারের সাথে ভাগ বাটোয়ারায় এই নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ও প্রশাসন মিলেমিশে একাকার হয়েছে। তাই নারায়ণগঞ্জের মানুষ জিম্মি হয়ে পড়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর ক্ষোভ প্রকাশ করে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি রোববার (৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের সামনে মেধাবী কিশোর ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১১৮ মাস উপলক্ষে আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে এমন মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘রাস্তায় ফেলে মেয়র আইভীর উপর যারা হামলা করলো, গুলি করতে চাইলো, সেই শামীম ওসমানের পা-চাটা বাহিনী, পা-চাটা কুকুররা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে গুলি করলো, সেগুলো সমস্ত দৈনিকে আসলো। সারাদেশের মানুষ দেখলো, বিশ্ববাসী দেখলো কিন্তু নারায়ণগঞ্জর পুলিশ দেখলো না, তাদের চোখে পড়ে না। তিনদিন আগে তারা প্রতিবেদন দিয়েছে, অভিযোগপত্র দাখিল করেছে।’
রফিউর রাব্বি বলেন, ‘সারা শহরের মানুষ দেখলাম, অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা দেখলো না। তাদের ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হলো। এই শাহ্ নিজামকে কমিউনিটি পুলিশের সদস্য বানিয়েছেন আপনারা। এই সমস্ত গডফাদাররা আপনাদেরই অংশ।’
‘পুলিশে থাকুন আর প্রশাসনে থাকুন আপনাদের জবাব দিতে হবে’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই স্বাধীন বাংলাদেশে এই ধরনের দুর্বৃত্তায়ন কোনভাবেই বরদাস্ত করা যাবে না। বর্তমান সরকার কিয়ামত পর্যন্ত আপনাদের পাহারা দেবে না। গডফাদাররা দেশ ছেড়ে পালাবে, সময় এসেছে। আপনাদের রাস্তা আপনারা ঠিক করুন। জনগণের পক্ষে আসুন। ত্বকীর ঘাতকরা যারা শহরে দাবড়ে বেড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।’
দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা না দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি। তিনি বলেন, ‘ঘাতকরা চিহ্নিত, অভিযোগপত্র তৈরি কিন্তু আদালতে জমা দেওয়া হচ্ছে না। ত্বকীর ঘাতকরা শহরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে।’
ত্বকী, সাগর, রুনি, তনুসহ দেশের সকল হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন তিনি।
প্রতিমাসের মতো আয়োজিত আলোক প্রজ্বালন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়। জোটের সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদর সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব কবি হালিম আজাদ, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান মাসুম, নাগরিক কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট এবি সিদ্দিক, সিপিবি জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, বাসদ জেলা সমন্বয়ক নিখিল দাস, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, সমমনার সভাপতি দুলালা সাহা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরের শায়েস্তা খাঁ সড়কের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। এর দুদিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়।
Discussion about this post