বছরের শুরুতেই ৩ জানুয়ারী (মঙ্গলবার) রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের একটি কমিউনিটি সেন্টারে নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের বর্তমান প্রধান অভিভাবক (মুরুব্বী) সেলিম ওসমান নিজ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মন্তব্য করায় ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র ।
সকলের মুখেই উচ্চারিত হচ্ছে ‘হাম্মাজান আর ভাইজান’ গ্রুপ ঘিরে। চায়ের আড্ডা থেকে শুরু করে ঘরোয়া পরিবেশের আলোচনায়ও এই ‘হাম্মাজান আর ভাইজান’ গ্রুপ নিয়ে চলছে একেকজনের একক রকম বিশ্লেষণ। যা নতুন বছরে নতুন ‘টক অব দ্যা টাউন’ এ পরিণত হয়েছে ।
এমন ‘হাম্মাজান আর ভাইজান’ গ্রুপ গিরে সেলিম ওসমানের সমালোচনা ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইনশৃংখলা বাহিনীর প্রতি নির্দেশনার খবর প্রচারের পর নগরীর অনেকেই বলেছেন এমনটি ওসমান পরিবারের সাথে মানায় না । আবার অনেকেই বলেছেন, কারো কারো উস্কানীতে কি এমন হতে পারে ! এমন নানা সমালোচনা আলোচনা চলছে নগরীজুড়ে ।
নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ওসমান পরিবারের বর্তমানের প্রধান অভিভাবক ও সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান মঙ্গলবার রাতে তার বক্তব্যে বলেছেন ‘বর্তমানে কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলেপেলের জন্ম হয়েছে। তাদের একজন নেত্রী আছে, তিনি তাদের কাছে হাম্মাজান হিসেবে পরিচিত। হাম্মাজান যেই হোক না কেন, কোনো অবস্থাতেই ব্যবসায়ীর ক্ষতি করা যাবে না। আবার ভাইজান গ্রুপ নামে আরেক গ্রুপের জন্ম হয়েছে।
লম্বা লম্বা চুল রেখে মোটরসাইকেল দিয়ে আমার ফ্যাক্টরির ভেতরে গিয়ে আমার মালিককে ধমকা-ধমকি করে। আমার ঝুটের দাম নির্ধারণ করে। কারা তারা ? জেলা প্রশাসনের ডিসি সাহেব, এসপি সাহেব আপনারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। জেলা প্রশাসককে আহ্বান করব, আগামী ১৫ দিনের মধ্যে আপনি এসব উচ্ছৃঙ্খল ছেলেপেলেরা কোথা থেকে মোটরসাইকেল পায় সেগুলো খোঁজ নেন। কে কার ফ্যাক্টরি ঢোকে, ঝুট চায়, সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। ব্যবস্থা না নিলে নারায়ণগঞ্জে আমরা ব্যবসা স্থগিত করে দেব।’
নগরীতে মোটরসাইকেল শোডাউন দেওয়া হয়। কে করে, কোথা থেকে মোটরসাইকেল কিনল, কীভাবে এগুলা রাস্তার মধ্যে নামে, কীভাবে বিকেএমইএ’র ফ্যাক্টরিতে ফ্যাক্টরিতে ঝুট ব্যবসায়ী সৃষ্টি হয়। যেটাকে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছিল সেটা আবার কীভাবে হয় ?’
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ী নেতা সেলিম ওসমান আরো বলেন, ‘আমরা রাস্তায় নামতে জানি। আমরা রাস্তাঘাট বন্ধ করে দেব। কার নতুন নতুন গাড়ি আসে, কোথা থেকে ইনকাম ট্যাক্স দেয়, তাদের আয়ের উৎস কোথায়, এগুলো ধরা কঠিন ব্যাপার না। অতীত দিয়ে কাজ করবেন না, বর্তমান দিয়ে কাজ করবেন। কে কী ছিল সেটার ওপর হিসাব করবেন না। বর্তমানে কে কোথায় আছে, কার কী কার্যক্রম সেটা দিয়ে বিচার হবে। আমি ঘোষণা দিলাম, ডিসি সাহেব, এসপি সাহেব আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। র্যাব, শিল্প পুলিশ তো নারায়ণগঞ্জে ঘুমাতে আসেননি। আমরা কিন্তু সবসময় সহযোগিতা করেছি।’
হুঁশিয়ারি দিয়ে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমি এখনো মরি নাই। ভয় পাবেন না। ও যদি আমার বাপও হয় তাকে কোনো রকমের ছাড় দেওয়া হবে না। আপনারা সরাসরি বলতে না পারলে লিখিতভাবে বিকেএমইএ, নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের কাছে জমা দিবেন। হাম্মাজানের ডরে ব্যবসায়ীরা যদি পকেট থেকে পয়সা দিয়ে দেন, তাহলে আপনাদের থেকে বড় দোষী আর কেউ হবে না।’
ব্যবসায়ীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সেলিম ওসমান আরও বলেন, ‘আপনারা সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা রাখেন। আপনাদের শক্ত হতে হবে। সেই ২০০০ সনে যেভাবে শক্ত হয়েছিলেন সেভাবে শক্ত হবেন। সাদা পতাকা না, প্রয়োজনে লাল পতাকা নিয়ে আমরা বের হবো। কোনো মায়ের সন্তান জন্মাবে না যে নারায়ণগঞ্জে সন্ত্রাস করবে। মোটরসাইকেল বাহিনী চলবে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা আপনাদের ফ্যাক্টরি নিয়ন্ত্রণ করবেন। আমরা এত মানুষ যদি একত্র হই, তাহলে এমন কোনো মায়ের বেটা জন্মাইছে যে তারা বাহাদুরি করবে? তারা কখন কোন দল করে তারও কোনো ঠিক নাই। সে যদি আমার বাপও হয় তাহলেও তারে কোনো ছাড় নাই।’
ওসমান পরিবারের কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকলে তাদের বিরুদ্ধেও আওয়াজ তোলার আহ্বান জানান সেলিম ওসমান। তিনি বলেন, ‘কেউ কোনোদিন বলবেন না যে ওসমান পরিবারের সদস্য। হাতের পাঁচটা আঙুল কাউকে এক রকম করে দেয় নাই। ওসমান পরিবারের পাঁচটা আঙুল কিন্তু আলাদা আলাদা আছে। সব কিন্তু এক সমান না। সুতরাং আপনাদের ভয়ের কোনো কারণ নাই।
তিনি আরও বলেন, ‘নম্বর ছাড়া মোটরসাইকেল রাস্তায় বের হচ্ছে চান্দা তোলার জন্য। দুই-চাইরটাকে ধরেন না, ধরে জিজ্ঞেস করে ওর কোন বাপে ওরে মোটরসাইকেল কিনে দিসে ? ওর কার্যক্রম কী, কোন আয় দিয়ে ও মোটরসাইকেল চালায় ? প্রশাসনকে এ দায়িত্ব নিতে হবে। প্রয়োজনে আমাদের ব্যবসায়ীদের ৪৮টা সংগঠনের সঙ্গে বসে সত্যতা যাচাই করেন। গোয়েন্দা খবর নেন, আমি সত্যি বলছি কি না। কোনো ধরনের আপস আপনারা করবেন না।’
উল্লেখিত এমন মন্তব্যে তোলপাড়ের ঝড় বইছে নগরীতে । উচ্চারিত হচ্ছে লাখো মন্তব্য নগরবাসীর মুখে ।
Discussion about this post