বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে নতুন মোড় নিয়েছে আইনশৃংখলা বাহিনীর তদন্তে । একদিকে তদন্ত একাধিক সংস্থার দাবী ফারদিন নূর পরশ আত্মহত্যা করেছে । অপরদিকে পরিবারসহ দেশের সাধারণ মানুষ মনে করেন এটি নতুন নাটক। এমন বিতর্কের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা প্রযুক্তিগত তথ্য উপস্থাপন করে । তাদের তদন্তের বিষয়টি তুলে ধরে জাগো নিউজ প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করেছে। এই প্রতিবেদন হুবহু তুলে ধরা হলো।
অপরদিকে নানা কারণে এই তদন্তকারী সংস্থা বিগত দিনে এই নারায়ণগঞ্জে বিতর্কিত কর্মকান্ড ঘটানোর কারণে অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছে না এই নতুন প্রযুক্তিগত তথ্য। অনেকের দাবী এই দেশে জজ মিয়ার নাটক মঞ্চায়িত হয়েছে । এই নারায়ণগঞ্জে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা সাত জনকে খুন করে কত ই বা নাটক করেছে । বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশের মৃত্যূ / হত্যাকান্ড কিংবা আত্মহত্যা নিয়ে যেন আর কোন নাটক মঞ্চায়িত না হয়। এমনটি দাবী অনেকের
রাত ২টা ৩৪ মিনিটে রাজধানীর ডেমরার সুলতানা কামাল ব্রিজের প্রায় মাঝখানে আসেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ। এসময় তার মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্রিজের ঠিক মাঝ বরাবর দেখা যায়। ব্রিজের তারাবো প্রান্ত থেকে মাঝখান পর্যন্ত দূরত্ব ৪০০ থেকে ৫০০ মিটার। রাত ২টা ৩৪ মিনিট ৯ সেকেন্ডে সুলতানা কামাল ব্রিজের রেলিং ক্রস করেন ফারদিন।
প্রযুক্তি সহায়তায় ফারদিনের মোবাইল লোকেশন ও সিসিটিভি ফুটেজের ভিডিও একই সময়ে তাকে শনাক্ত করা হয়। রাত ২টা ৩৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডে ফারদিনের মোবাইল সিম স্লটে পানি ঢুকে নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে পড়ে। সেটি পরবর্তী সময়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়।
পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রযুক্তির মাধ্যমে পাওয়া তথ্য, বিভিন্ন আলামতের ফাইন্ডিংস ও সিসিটিভি ফুটেজের দৃশ্য সময় ও লোকেশন সম্পূর্ণভাবে মিলে যায়। এজন্য ছায়াতদন্তকারী সংস্থা পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাবের দাবি, ফারদিন স্বেচ্ছায় ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।
ফারদিনের মোবাইল নম্বরের আইপিডিআর (ইন্টারনেট প্রটোকল ডিটেইলস রেকর্ড) বিশ্লেষণে এসব তথ্য জানা গেছে।
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ বুয়েটে ভর্তির পর তার প্রথম সেমিস্টারে রেজাল্ট ছিল ৩.১৬। আর মারা যাওয়ার আগের সেমিস্টার অর্থাৎ সর্বশেষ সেমিস্টারের রেজাল্ট ছিল ২.৩১। সবশেষ গত কয়েক সেমিস্টারে তার রেজাল্ট খারাপের দিকে যায়। এটি বাসার লোকজন বা আত্মীয়স্বজন কেউ জানতেন না।
ফারদিন নূর পরশ হত্যা মামলার তদন্ত নতুন মোড় নিয়েছে। তিনি ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে দাবি করছে মামলার তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ ও ছায়া তদন্তকারী সংস্থা র্যাব।
তদন্ত সংস্থার দাবি, পরীক্ষার ফল খারাপ হওয়া ও বিদেশ যেতে অর্থ জোগাড় করতে না পারাসহ বেশ কিছু হতাশা থেকে এই তরুণ স্বেচ্ছায় আত্মহননের পথ বেছে নেন।
এর আগে ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেছিলেন, ফারদিন আত্মহত্যা করতে পারে না। তার দাবি- ‘এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।’
‘আমি হাসিমুখে আত্মহত্যা করবো’ : ফারদিন
ফারদিন নূর পরশ কয়েক বছর একজন মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত চ্যাটিং করতেন। ফারদিন তার মনের কথা ওই মেয়ের সঙ্গে শেয়ার করতেন। তাদের দুজনের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই মেয়ের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি তদন্তকারী সংস্থা।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, ফারদিনের ডিজিটাল ডিভাইস পর্যালোচনা করে ও প্রযুক্তির সহায়তায় একজন মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চ্যাটিংয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। সেই মেয়েকে ফারদিন তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো লাগা-মন্দ লাগার কথা শেয়ার করতেন।
অজ্ঞাতপরিচয় ওই মেয়ের সঙ্গে চ্যাটিংয়ের একপর্যায়ে ফারদিন লিখেন, ‘আমি সুখে আত্মহত্যা করবো। কত যে শান্তি যে। হাসিমুখে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে।’
যেভাবে নিখোঁজ হন ফারদিন-
গত ৪ নভেম্বর বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর ডেমরার কোনাপাড়ার নিজ বাসা থেকে পরীক্ষার কথা বলে বুয়েটের হলের উদ্দেশ্যে বের হন ফারদিন। বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে তিনি সায়েন্সল্যাব মোড়ে তার পরিচিতার সঙ্গে দেখা করেন। এরপর সেখান থেকে নীলক্ষেত ও ধানমন্ডিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে সাত মসজিদ রোডে একটি রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা করেন।
রাত আনুমানিক ৮টার সময় ফারদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। পরে রিকশাযোগে রামপুরার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। আনুমানিক রাত পৌনে ১০টার দিকে রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ফারদিন রিকশা থেকে নেমে যান এবং কিছুক্ষণ রামপুরা ব্রিজ এলাকায় ঘোরাফেরা করেন।
রামপুরা থেকে জিনজিরা, পুরান ঢাকা ও গুলিস্তানে যান ফারদিন-
র্যাব জানায়, প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণে দেখা যায়, রামপুর ব্রিজ থেকে ফারদিন কেরানীগঞ্জের জিনজিরা, বাবুবাজার ব্রিজ সংলগ্ন এলাকা, পুরান ঢাকার জনসন রোড ও গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট এলাকায় যান।
যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় ১৯ মিনিটে তারাবো বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ড নামেন ফারদিন-
সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়, রাত ২টা ১ মিনিটে (সিসিটিভি ফুটেজ টাইম ২টা ৩ মিনিট) যাত্রাবাড়ীর বিবিরবাগিচা থেকে ফারদিনকে লেগুনায় উঠতে দেখা যায়। রাত ২টা ২০ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের অপর পাশে তারাবো বিশ্বরোডের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লেগুনা থেকে নেমে যান তিনি।
তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমে জানা যায়, রাত ২টা ২৬ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজের তারাবো প্রান্তে ফারদিনের অবস্থান ছিল। রাত ২টা ৩৪ মিনিটে ব্রিজের প্রায় মাঝখানে আসেন। এসময় তার মোবাইল নেটওয়ার্কও ব্রিজের ঠিক মাঝ বরাবর দেখা যায়। রাত ২টা ৩৪ মিনিট ৯ সেকেন্ডে ব্রিজের রেলিং ক্রস করেন ফারদিন।
নদীতে ঝাঁপ দেওয়ার ৪৮ সেকেন্ড পর মোবাইল নেটওয়ার্ক অকার্যকর-
রাত ২টা ৩৪ মিনিট ১৬ সেকেন্ডে সুলতানা কামাল ব্রিজের ওপর থেকে স্বেচ্ছায় নদীতে ঝাঁপ দেন ফারদিন। রাত ২টা ৩৪ মিনিট ২১ সেকেন্ডেশীতলক্ষ্যা নদীর পানিতে পড়েন ফারদিন। রাত ২টা ৩৫ মিনিট ৯ সেকেন্ডে ফারদিনের মোবাইল সিম স্লটে পানি ঢুকে নেটওয়ার্ক অকার্যকর হয়ে যায়। রাত ২টা ৫১ মিনিটে তার হাতের ঘড়িতে পানি ঢুকে সেটি অকার্যকর হয়ে পড়ে।
তদন্তকারী সংস্থার দাবি, ফারদিন নূর পরশ গত কয়েক বছর একজন মেয়ের সঙ্গে নিয়মিত চ্যাট করতেন। নিজের মনের কথা ওই মেয়েকে জানাতেন। তাদের দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক না থাকলেও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তবে তদন্তের স্বার্থে ওই মেয়ের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি তদন্তকারী সংস্থা।
তদন্তকারী কর্মকর্তারা বলছেন, ফারদিনের ডিজিটাইল ডিভাইস পর্যালোচনা করে ও প্রযুক্তির সহয়তায় একজন মেয়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে চ্যাটিংয়ের তথ্য পাওয়া গেছে। সেই মেয়ের সঙ্গে ফারদিন তার ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালো লাগা-মন্দ লাগার কথা শেয়ার করতেন।
ফারদিন হতাশা ও টাকার জন্য নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করে তদন্তকারী সংস্থা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। অন্যদিকে র্যাব সরাসরি আত্মহত্যা না বলতে চাইলেও স্বেচ্ছায় ডেমরা সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন বলে দাবি করে।
অজ্ঞাত ওই মেয়ের সঙ্গে ফারদিন চ্যাটিংয়ে লিখেছেন, ‘আমি সুখে আত্মহত্যা করতে যাচ্ছি। কত শান্ত যে হবে। হাসিমুখে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে।’
আরেক চ্যাটিংয়ে ফারদিন লিখেছেন, ‘বৃদ্ধ হতে চাই না। আমার এক বন্ধুর পরিকল্পনা ৩০ বছর বয়সে মারা যাবে।’
ফারদিন আরও লিখেছেন, ‘কখনো ইচ্ছা হয় যে এমন হতে পারে। যেন ঘুমের মধ্যে নিজেকে মেরে ফেলি। কি শান্তি!’
এছাড়া আত্মহত্যা নিয়েও ওই মেয়ের সঙ্গে বিভিন্ন কথাবার্তার চ্যাট রয়েছে ফারদিনের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে র্যাবের লিগ্যাল আ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জাগো নিউজকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ, ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টসহ অন্য সব সংশ্লিষ্ট আলামত বিবেচনায় র্যাবের তদন্তে বের হয়ে আসে বুয়েট ছাত্র ফারদিন স্বেচ্ছায় সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে নদীতে ঝাঁপ দিয়ে মারা গেছেন।
তিনি বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ফারদিনের মৃত্যু সংক্রান্ত অন্য কোনো সূত্র/আলামত পাওয়া গেলে, তবে তা বিবেচনায় নিয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।
আত্মহত্যা করবেন সিদ্ধান্ত নিয়েই বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন ফারদিন: ডিবি
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জাগো নিউজকে বলেন, ফারদিনের মৃত্যুর ঘটনা আমরা তদন্ত করেছি। তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, আমরা তার মানসিক স্বাস্থ্যের কথা বলেছি। বান্ধবী বুশরাকে রামপুরায় নামিয়ে দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর ব্যাখ্যা দিয়েছি। আসলে তার সঙ্গে কেউ ছিল না, একা একাই বিভিন্ন স্থানে ঘুরেছেন।
তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী থেকে লেগুনায় করে ডেমরার সুলতানা কামাল সেতুর একপাশে তিনি নামেন। কিন্তু তিনি চনপাড়ার দিকে যাননি, সেখানে কোনো ঘটনাও ঘটেনি। ঘটনার ৩৮ দিন তদন্ত শেষে এটিকে আমরা আত্মহত্যার ঘটনা বলেছি। এ বিষয়ে বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থী এসে তিন ঘণ্টা আমাদের সঙ্গে কথা বলেছে। আমরা তার পরিবার, বন্ধু-আত্মীয়দের বলেছি ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন।
ডিবিপ্রধান আরও বলেন, ফারদিন সেদিন রাতে বাবুবাজার ব্রিজ ও সুলতানা কামাল ব্রিজে যান। অথচ গত দুই বছরেও তিনি এসব এলাকায় যাননি। ফারদিন দুই বছরে ফোনে ৫২২টি নম্বরে কথা বলেছেন। আমরা সবার কাছে খোঁজখবর নিয়েছি।
ফারদিন বিভিন্ন ধরনের বই পড়তেন উল্লেখ করে হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় হতাশার কথা বলেছেন। এক বান্ধবীকে লিখেছেন, ‘৩০ বছরের বেশি কারও বাঁচার দরকার নাই’।
তিনি আরও বলেন, আবার কাউকে লিখেছেন, ‘যদি মারা যাই, বন্ধু সাজ্জাদ কষ্ট পাবে’। আরেকজনকে লিখেছেন, ‘কোনো একদিন শুক্রবার সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে আমি আত্মহত্যা করেছি’। ফারদিন শুক্রবারই আত্মহত্যা করেছেন।
‘বন্ধুদের সঙ্গে তার কথা পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে ফারদিন হতাশায় ভুগছিলেন। তাছাড়া তার মরদেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন ছিল না, ধস্তাধস্তির আলামতও নেই। তার মোবাইল-টাকা পকেটে ছিল, হাতে ঘড়ি ছিল। কোনোকিছু খোয়া যায়নি। বুয়েটের ৪০ জন শিক্ষার্থীও এসব আলামত দেখে একমত পোষণ করেছেন।’
ফারদিন আত্মহত্যা করতে পারে না, নাটক সাজানো হচ্ছে: ফারদিনের বাবা
ফারদিন নূরের বাবা কাজী নূর উদ্দিন বলেন, আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর এখন আত্মহত্যার নাটক সাজানো হচ্ছে।
তদন্ত নিয়ে অসন্তুষ্টি জানিয়ে তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলেরা অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছে। সব ধরনের পরিস্থিতির সঙ্গে চলতে পারা আমার ছেলে আত্মহত্যা করতে পারে না।
ঘটনার দিন বুয়েটের উদ্দেশ্যে বের হওয়ার আগে ফারদিন চুল কাটিয়েছিল এবং সেভ করেছিল বলে জানান তার বাবা। এসময় তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আত্মহত্যার আগে কি কেউ চুল কাটায় ও সেভ করে?
ফারদিনের মরদেহের দুটি ছবি দেখিয়ে কাজী নূর উদ্দিন বলেন, আমি ফারদিনের মরদেহ দেখেছি, তার মাথায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্যই শুরু থেকে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হয়েছে। বিভ্রান্ত করা হয়েছে।
উপস্থিত সাংবাদিকদের অনুরোধ জানিয়ে ফারদিনের বাবা বলেন, সাংবাদিক ভাইদের আমি অনুরোধ করে বলছি, আপনারা আমার সঙ্গে সুলতানা কামাল ব্রিজে চলেন। আমি ব্রিজ থেকে লাফ দেবো, সেখান থেকে পড়লে কতটা আঘাত লাগে আপনারা দেখবেন।
বুয়েট প্রশাসনের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, বুয়েটের ভিসি এবং প্রশাসন কি জানতেন ফারদিন আত্মহত্যা করেছে। তারা আমার পরিবারকে সান্ত্বনা পর্যন্ত দেননি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেউ আমার ও আমাদের সঙ্গে দেখাও করেননি। আমার ছেলে বুয়েটে ভর্তি না হলে এমন পরিণতি হতো না।
ডিবির এই তদন্ত নিয়ে নারাজি দেবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এরপরও কি আর নারাজি দিতে হবে।
ডিবির সঙ্গে একমত, তবে এক জায়গায় গ্যাপ রয়েছে: বুয়েট শিক্ষার্থীরা
বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিনের উদ্ধার আলামতগুলো দেখে মনে হয়েছে প্রায় সবকিছু ঠিক আছে। তবে কিছু জায়গায় গ্যাপ রয়েছে মনে হয়েছে। প্রাইমারি গ্যাপ হলো- যে ব্রিজে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে সেই ব্রিজে কীভাবে গেল, কার সঙ্গে গেল।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আলামতগুলো আমাদের দেখানো হয়েছে। এগুলো আমাদের কাছে প্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে। আমাদের পয়েন্টগুলো ডিবিকে জানিয়েছি। ডিবি আমাদের পয়েন্টগুলো নিয়ে কাজ করবে।
তারা আরও বলেন, লেগুনাচালক নাকি বলেছেন, ফারদিনের সঙ্গে আরেকজন ছিলেন। তাহলে আরেকজন কে ছিলেন? এ বিষয়টি ক্লিয়ার না। এছাড়া বাকি প্রমাণাদি মোটামুটি ডিবি কংক্রিট দেখিয়েছে। ডিবির কাজের ধরন দেখে আমরা মোটামুটি সন্তুষ্ট।
আত্মহত্যার বিষয়টি আপনারা ক্লিয়ার হয়েছেন কি না- জানতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বলেন, আত্মহত্যার বিষয়টি তারা সেভাবে ইনফরমেশন দেখায়নি। ভবিষ্যতে এই জায়গাতে (আত্মহত্যা) ডিবি কাজ করতে পারে। ডিবিও বলেছে তারা আত্মহত্যার মোটিভ নিয়ে কাজ করবে।
Discussion about this post