আড়াইহাজারে সরকারি জায়গায় গ্রামবাসীর লাগানো বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছ কেটে নিয়েছেন স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করতে গেলে গাছের মালিকদের এলাকাছাড়া করার হুমকি দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ওই নেতার বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত দেলোয়ার হোসেন আড়াইহাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক। তাঁর দাবি, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) সড়ক প্রশস্ততার কাজে সহায়তা করতে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মৌখিক নির্দেশে গাছগুলো কেটেছেন। সে জন্য সরকারি কোষাগারে টাকাও জমা দিয়েছেন। আর ইউএনও বলছেন, তিনি কাউকেই গাছ কাটার নির্দেশনা দেননি।
গাছ কাটার বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করে দেলোয়ার হোসেন জানান, ইউএনও রফিকুল ইসলাম তাঁকে ডেকে নিয়ে গাছ কাটার নির্দেশনা দিয়েছেন। পরে দায়িত্ব বোধের জায়গা থেকে গাছগুলো কেটেছেন। এসবের মূল্যবাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছেন।
সরকারি জায়গায় এলাকাবাসীর লাগানো গাছ দরপত্র ছাড়া কীভাবে কেটেছেন জানতে চাইলে দেলোয়ার বলেন, ‘গাছগুলা বন বিভাগের। বিষয়টা তারা জানত না। জানার পর ইউএনও সাব আমারে গাছগুলা কেটে দিতে বলছে। তাড়া হুড়ার কারণে টেন্ডার হয় নাই। ’
দেলোয়ারের এমন কথায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন ইউএনও রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মৌখিকভাবে কাউকে গাছ কেটে নিতে বলার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা গাছের মালিকদের বলেছিলাম, যাঁরা গাছ লাগিয়েছেন তাঁরাই গাছ পাবেন। তবে সে জন্য সরকারি নিয়ম অনুযায়ী বন কর্মকর্তার মাধ্যমে সেসব গাছের মূল্য নির্ধারণ করে মূল্যের একটি অংশ সরকারের কোষাগারে জমা দিতে হবে।’
কেউ গ্রামবাসীকে ভুল বুঝিয়ে গাছ কেটে নিয়ে থাকলে তদন্ত করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ইউএনও।
ক্ষতিগ্রস্ত গাছ মালিক ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ফরিদাবাজার এলাকায় গত কয়েক দশক ধরে এলাকাবাসী পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পাশে বিভিন্ন ফলদ ও বনজ গাছের চারা লাগিয়ে আসছেন। এক মাস আগে এলাকায় মাইকিং করে নদীর পাড়ে থাকা গাছগুলো কেটে নেওয়ার জন্য গাছ মালিকদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। লোকজন গাছ কাটতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন তাঁদের বাধা দেন। গত ১৫ দিনের তিনি শতাধিক গাছ কেটে নেন। স্থানীয় বাজার মূল্যে কেটে ফেলা গাছগুলোর মূল্য ১০ লাখ টাকার বেশি বলে গাছের মালিকরা জানিয়েছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, ফরিদাবাজার ঘাট থেকে উতরাপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পর্যন্ত প্রায় ১ কিলোমিটার এলাকার ছোটবড় শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। কোনো কোনো গাছ অর্ধেক কাটা হয়েছে। কাটা গাছের গুঁড়ি পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড় ও প্রভাকরদী-ভুলতা সড়কের পাশে ফেলে রাখা হয়েছে।
সেখানে অন্তত ছয়জন গ্রামবাসীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাঁরা বলেন, সরকারি দলের প্রভাব খাটিয়ে দেলোয়ার হোসেন তাঁর লোকজন দিয়ে গাছগুলো কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে বাধা দেওয়ায় দেলোয়ার হোসেন ফোন করে তাঁদের হুমকি দিয়েছেন। বলেছেন, এলাকায় থাকতে চাইলে চুপ থাকতে হবে।
আড়াইহাজার উপজেলা বন কর্মকর্তা সাব্বির হোসেন বলেন, ‘সড়ক প্রশস্ততার কারণে এসব গাছ কাটার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এলজিইডি থেকে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছিল। পরে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখলাম, এসব গাছের মালিক আমরা না। তখন নিয়ম অনুযায়ী ফরম-৩–এর মাধ্যমে বিষয়টি এলজিইডিকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন, ‘গাছ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বন বিভাগকে চিঠি দিয়েছিলাম। তারাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক। আমরা কাউকে গাছ কাটার অনুমতি দিতে পারি না।’
Discussion about this post