নাারয়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামীলেীগের নেতৃত্বে কে আসছেন ? দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কে হচ্ছেন ? কারা কার কেন্দ্রে দৌড়ঝাপ চারাচ্ছেন ? তা নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। তবে দলে ত্যাগীদের মূল্যায়ন চান তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।
দুই যুগের বেশি সময় পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের মধ্যে উৎসাহ–উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। সম্মেলনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা। কেন্দ্রে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। তৎপরতা দেখা যাচ্ছে দলের নিষ্ক্রীয় নেতা–কর্মীদেরও।
রাত পোহলেই অর্থাৎ আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলন। এ জন্য চলছে প্রস্তুতি। নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইর ওসমানী পৌর স্টেডিয়ামে তৈরি করা হচ্ছে মঞ্চ। সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকার কথা দলের সাধারণ সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় নেতারা সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।
“যাঁরা ত্যাগী, পরীক্ষিত, তাঁদেরই কমিটিতে আসা উচিত। দলের ভেতরে কাউয়া ও হাইব্রিডদের কমিটিতে আসা উচিত নয়।”
এমনটি বলেছেন আবদুল হাই, সভাপতি, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ
তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সভাপতি হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি আবদুল হাই, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর নাম বেশি শোনা যাচ্ছে। তা ছাড়া এই পদে ওসমান শিবির থেকে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের নামও প্রচার করা হচ্ছে। আবদুল হাই গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সম্মেলন আয়োজনের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। যাঁরা ত্যাগী, পরীক্ষিত, তাঁদেরই কমিটিতে আসা উচিত। দলের ভেতরে কাউয়া ও হাইব্রিডদের কমিটিতে আসা উচিত নয়।’
সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বর্তমানে এই পদে থাকা আবু হাসনাতের সঙ্গে সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য আনিসুর রহমান ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের নাম শোনা যাচ্ছে। আনিসুর রহমান বলেন, ‘আমরা নতুন নেতৃত্ব চাই। এরপরও নেত্রী নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশের খোঁজ খবর রাখেন। তিনি যাঁদের নেতৃত্বে দেবেন, আমরা তাঁর সঙ্গেই কাজ করব।’
তবে আগামী নির্বাচনের আগে নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগে যাতে নতুন করে বিভক্তি সৃষ্টি না হয়, সে জন্য বর্তমান কমিটিই বহাল রাখার ইঙ্গিত দিয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, কেন্দ্র থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের নাম ঘোষণা করা হবে। কে জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হবেন, তা দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালে সর্বশেষ নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয়। ওই সম্মেলনে নাজমা রহমান সভাপতি ও শামীম ওসমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সম্মেলনের পর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে শামীম ওসমান দেশ ছেড়ে যান। পরবর্তী সময়ে এস এম আকরামকে আহ্বায়ক ও মফিজুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। তাঁরা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি।
আহ্বায়ক কমিটির সদস্যসচিব মফিজুল ইসলাম মারা গেলে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর আবদুল হাইকে সভাপতি, সেলিনা হায়াৎ আইভীকে জ্যেষ্ঠ সহ সভাপতি ও আবুল হাসনাতকে সাধারণ সম্পাদক করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। কমিটিতে সহসভাপতির দুটি পদসহ ছয়টি পদ শূন্য থাকলেও এখনো তা পূরণ হয়নি। ওই কমিটি এখনো দায়িত্বে রয়েছে।
দলের তৃণমূল নেতা–কর্মীদের মতে, যাঁরা দলের জন্য নিবেদিত, ত্যাগী ও পরীক্ষিত, তাঁদেরই কমিটিতে আসা উচিত। যাঁরা দলের দুঃসময়ে নেতা–কর্মীদের ফেলে পালিয়ে যান, তাঁদেরকে দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে দেওয়া উচিত নয়।
তবে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, দলের জন্য নিবেদিত, ত্যাগী ও সৎ নেতারই কমিটির গুরুত্বপূর্ণ এই দুই পদে আসা প্রয়োজন। এদিকে আগামী নির্বাচনের আগে বিভক্তি না তৈরি করে পুরোনো কমিটিই বহাল রাখা হবে বলে মনে করছেন কেউ কেউ। তবে নেতা-কর্মীদের বিগত সময়ের আমলনামা এবার বিবেচিত হবে। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন সরাসরি নারায়ণগঞ্জে এসে পর্যবেক্ষণ করেছে কেন্দ্রীয় নেতারা। কারা দলীয় প্রার্থীর বাইরে অবস্থান নিয়েছিলেন তাদের আমলনামা আছে কেন্দ্রের কাছে। সম্মেলনকে ঘিরে তাদের জবাব দেওয়া হবে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। এমন আভাস জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ বর্ধিত সভায় দিয়েছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের দিকেই তাকিয়ে আছেন নারায়ণগঞ্জের নেতারা।
সম্মেলন তৈরি হচ্ছে নৌকার আদলে মঞ্চ
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে নৌকার আদলে নির্মিত হয়েছে বিশাল মঞ্চ। মঞ্চের পেছনে থাকবে বিশাল এলইডি স্ক্রিন। বিশাল মঞ্চে ৪ সারির চেয়ার বসানো হচ্ছে। মঞ্চের প্রথম সারিতে বসবেন আমন্ত্রিত কেন্দ্রের ১৩ নেতা, নারায়ণগঞ্জ আওয়ামী লীগ দলীয় তিনজন সংসদ সদস্য, মেয়র, জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তী তিন সারিতে বসবেন জেলা আওয়ামী লীগের ৬৩ জন নেতা।
জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনকে ঘিরে ইতোমধ্যে ২০টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সম্মেলনস্থলের প্রধান ফটকও রয়েছে। মঞ্চের সামনে থাকছে ২৫ হাজার চেয়ার। প্রতিটি উপজেলা ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের ইউনিটের নেতাদের আলাদা আলাদা গেঞ্জি, ফেস্টুন ও ব্যানার থাকবে।
সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আগতদের মাঠের দুই পাশে একদিকে ১৫টি ও আরেকদিকে ১০টি মোট ২৫টি ভ্যানগাড়িতে পানির ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি ভ্যানে পানির ড্রামে থাকবে বরফের ব্যবস্থা। পানি পানের জন্য থাকবে ডিসপসিবল গ্লাস।
বিশাল এ আয়োজনে অনেক সাশ্রয় করে খরচ করা হয়েছে। তবে সার্বিকভাবে অনুষ্ঠানকে সাফল্যমণ্ডিত করতে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই খরচ করা হয়েছে। এখানে ২৫ হাজার নেতাকর্মীর বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
রোববার (২৩ অক্টোবর) দুপুরে নারায়ণগঞ্জের ওসমানী স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, কার্যকরী পরিষদের সদস্য অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাওছার, আনোয়ার হোসেন, সাহাবউদ্দিন ফরাজী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম শামীম ওসমান, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু।
Discussion about this post