নারায়ণগঞ্জের বন্দরের আমিন আবাসিক এলাকায় ষোল ভবনের দেড়শ’ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কথা জানিয়েছে তিতাস৷ অভিযানে অবৈধ সংযোগ নেওয়ার অপরাধে এক লাখ পঞ্চান্ন হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়
এমন অভিযান সমাপ্ত করার মাত্র এক ঘন্টার মধ্যেই আবার অজ্ঞাত স্থান থেকে পুরাতন ও নতুন গ্যাস রাইজার এনে তা স্থাপন করে ফের চালু করেছে গ্যাস চুরির মহোৎসব। প্রায় প্রত্যেকটি বাড়িতেই চালু হয়েছে অবৈধ গ্যাস।
এমন গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাওয়া গেলো এমন অপরাধের সত্যতা ।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানান, বন্দরের আমিন আবাসিক এলাকার একটি প্রভাবশালী চক্রকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই ফের স্থাপন করা হয়েছে রাইজার । বন্দর উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিন গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর নারায়ণগঞ্জের চাষাড়া থেকে এক ব্যাক্তি প্রথম দফায় প্রায় ৪০ টি রাইজার বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একজন সন্ত্রাসীর কার্যালয়ে নিয়ে আসে। কার্টুনের ভিতর থেকে এই রাইজার বিতরণ করা হয় । এরপর বৃহস্পতিবার রাতের আঁধারেই লাগানো হয় অবৈধ সংযোগ। বন্দরের এই সন্ত্রাসী বিগত নাসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর হিসেবে অংশগ্রহণ করে পরাজিত হলেও তার চাঁদাবাজি, লুটপাট, দখল বাণিজ্য, অস্ত্রের মহড়াসহ সকল অপরাধ করেই যাচ্ছে শাসক দলের নেতাদের শেল্টারে । আর তিতাস গ্যাস চুরি তো সাধারণ বিষয়।
সূত্রটির দেখানো থেকে আরো জানা যায় প্রায় প্রতিটি বিচ্ছিন্ন করা অবৈধ তিতাসের সংযোগ আবার স্থাপনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন ও তিতাসের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে মুঠোফোনে গ্রীন সিগন্যাল আসে, “আপাতাত আর অভিযান চলবে না তাই এখন আবার রাইজার লাগাতে পারেন।” এমন সিগন্যাল পেয়ে বৃহস্পতিবার রাতেই রাইজার স্থাপনের পর তা চাউলের খালী বস্তা দিয়ে ঢেকে রেখে তার উপর কিছু আবর্জনা ফেলে রাখা হয়েছে যাতে সাধারণতঃ চোখে ধরা না পরে এই বাড়িতে তিতাসের সংযোগ রয়েছে । এভাবেই শুরু হয়েছে ফের গ্যাস চুরি।
কোন কোন বাড়ির মালিক এমন কান্ড করছে এমন প্রশ্ন জানতে চাইলে সূত্রটি আরো বলেন, এই এলাকার বহুতল ভবনের প্রায় সকল মালিক ই বহিরাগত। ভিন্ন এলাকা থেকে এই বাড়ির মালিকরা জমি কিনে নতুন বাড়ি করছে । আর তারা সকলেই এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের মোটা অংকের নানাভাবে নানা নামে চাঁদা দিয়েই অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে । আর এই সন্ত্রাসী আর বহিরাগত বাড়িওয়ারাদের নাম প্রকাশ্যে বলতে গেলেই তে মহা বিপদ ঘটে যাবে চোখের পলকেই । বুঝতেও পারবেন না এরা কত ভয়ংকর । প্রতিটি এলাকায় ওই সন্ত্রাসীদের কিশোর গ্যং রযেছে। এ সময় একটি গ্যাসের রাইজারের উপর চাউলের খালী বস্তার ছবি তুলতে গেলেও কিশোর সন্ত্রাসীদের কয়েকজন বলেন, “ভাই এখানে কার কাছে আইছেন ?“
এই সূত্রটি আরো জানায়, বন্দর এলাকা ছাড়াও প্রায় প্রতিটি এলাকয় এমন অসাধুদের সাথে সম্পর্ক রেখেই বিচ্ছিন্নের পর আবার সংযোগ চলছেই । ফতুল্লা ও সিদ্ধিরগঞ্জে তো গ্যাস চুরির বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছেই । এমন কান্ডে তো কেউ কোন ভ্রুক্ষেপ করে না।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আমিন আবাসিকের দু’টি ব্লকে উপজেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিনের নেতৃত্বে এ অভিযান চলে৷ এই সময় বিপুল পরিমান অবৈধ পাইপ ও রাইজার জব্দ করা হয় ৷
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুরাইয়া ইয়াসমিন জানান, আমিন আবাসিক এলাকার অধিকাংশ বাড়ির মালিকরা অবৈধভাবে তিতাসের গ্যাস সংযোগ নিয়ে একেক বাড়িতে পনের থেকে বিশটি করে চুলা ব্যবহার করে আসছেন। তাদের কারণে বৈধ গ্রাহকরা গ্যাস সংকটে ভুগছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে অবৈধ গ্যাস সংযোগের প্রমাণ পাওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়। অবৈধ সংযোগ ব্যবহারের দায়ে সংযোগগুলো বিচ্ছিন্নসহ দশ বাড়ির মালিকের কাছ থেকে মোট এক লাখ পঞ্চান্ন হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
Discussion about this post