এমন ঘটনায় দফায় দফায় তদন্ত করছে পুলিশ । ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসলাম হোসেন তদন্তকালে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি । তদন্ত করছি । অপরাধী যারাই হোক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে । আমরা জানি না হামলাকারীরাই হামলা চালিয়ে তালাবদ্ধ করেছে কিনা । দারোগা প্রবীর কুমার বলেন, এই তালা খোলার দায়িত্ব আমাদের না । মালিক পক্ষ এখনো ভয়ে পালিয়ে আছেন । বুধবার রাত ১০টায় সন্ত্রাসী হামলার পর পাম্পটিতে তালা দেয়া হলে সাহাবদ্দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশন পাম্পের কর্মচারী তুহিন ছাড়া আর কাউকেই খুজে পাওয়া যায় নাই । ভয়ে মুখ খুলতেও চায় নাই এই তুহিন ।
নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
লাইনে অপেক্ষা করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ সেলিম ওসমানের গাড়িতে গ্যাস নেওয়ার জন্য অনুরোধ করাকে কেন্দ্র করে ফতুল্লার একটি সিএনজি পাম্পে ভাঙচুর চালিয়েছে এমপির অনুসারী আওয়ামী লীগ নেতারা ।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লার শিবু মার্কেট এলাকায় ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোডের পাশে অবস্থিত সাহাবদ্দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনে বুধবার ২৮ আগস্ট রাত ১০টার এ ঘটনা ঘটে। হামলা চালিয়ে ক্লোজ সাটিক ক্যামেরা ভাংচুরসহ তান্ডব চালিয়ে পাম্পটি তালা মেরে চলে যায় হামলা কারীরা।
বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) সকাল থেকেই এ রিপোর্ট লেকাকালনি সময় বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত পাম্পটি বন্ধ থাকলেও পুলিশ পাহাড়া ছিলো লক্ষনীয় ।
বৃহস্পতিবার দুপুর বিকেল সাড়ে ৪টায় সরেজমিনে পাম্পটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, চারদিকে সুনশান নিরবতা । চারিপাশে অনেক লোকজন থাকলেও কেউ কোন কথা বলছেন না । একমাত্র কর্মচারী তুহিন কথা বলছেন ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কমর্মকর্তা আসলাম হোসেনের সাথে । পাম্পের দুই তলা ভবনের সামনে ভাঙা সিসি ক্যামেরা পড়ে আছে। ভবনের গেট ও ক্যাশ কাউন্টারে ঝুলছে তালা ।
এ সময় দারোগা প্রবীর কুমারসহ পুলিশের কয়েকটি গাড়ী উপস্থিত হলে, তুহিন অকপটেই বলতে থাকেন, এই পাম্পে তালা মেরেছে হামলাকারী ব্যবসায়ী নেতারা । এমপি সাহেব তো ব্যবসায়ী নেতা । এমপি সাহেব তার লোকজন ফোনে ডেকে এনে এই হামলা চালানোর পর তারাই তালা এনে গেইটে তালা দেয় । ক্যাশের ভিতরে মালিক সাহাবুদ্দিন বসা ছিলো তাকে মারধর করেছে কিনা তা জানি না । পরক্ষনেরই অনেক লোকজন হামলা চালালে সকল কমর্চারীরা পালিয়ে যায় ।
কর্মচারী তুহিন স্থানীয় বাসিন্দা ও পাম্পটির আশেপাশের দোকানিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত রাতে সাড়ে আটটার দিকে এমপি সেলিম ওসমান গাড়ি সাহাবদ্দিন সিএনজি ফিলিং স্টেশনে আসে। এ সময় গাড়ির ভেতরেই ছিলেন এমপি। এমপির ড্রাইভার গাড়িটি লাইন অনুযায়ী না নিয়ে লাইন ভেঙ্গে যেতে চাইলে পাম্পের লোকজন বাধা দেয়। এ নিয়ে এমপির ড্রাইভার ও পাম্পের লোকজনের মধ্যে তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এক পর্যায়ে গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসেন এমপি সেলিম ওসমান। ওদিক থেকে পাম্পের ম্যানেজারও বেরিয়ে আসেন ভেতর থেকে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে পড়েন সেলিম ওসমান। এক পর্যায়ে এমপি ঘটনাস্থল ত্যাগ করে চলে যান। পরে রাত দশটার দিকে স্থানীয় আওয়ামী ও যুবলীগের শতাধিক নেতাকর্মী এসে পাম্পে ভাঙচুর চালায়।
নাম প্রকাশ না কারার অনুরোধ করে অনেকেই বলেন, চিল্লাচিল্লি শুইনা এসে দেখি পাম্পে ঝামেলা হচ্ছে । অনেক লোকজন পাম্পের ভিতর । কেউ কেউ বাংচুর করছে । আবার কেউ কেউ নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে । পরে আইসা দেখি হেলাল, ফায়জুলসহ আরো কয়েকজন আওয়ামী লীগের নেতারা আসছে। পরে অনেক হৈ-চৈ হয়। ক্যামেরাও ভাঙচুর করে।
পাম্পের পাশেই কয়েকটি টিন শেডের ঘর। সেখানে বসবাস করেন কয়েক পরিবার। নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক তারা বলেন, হৈ-চৈ শুনে ঘর থেকে বের হয়ে আসি। পরে দেখি কিছু পোলাপান বিল্ডিংয়ের ভেতরে ঢুকে গেছে, ক্যামেরা ভাঙতাছে। কেউ আবার বাথরুমের পাশ দিয়ে বিল্ডিংয়ের ছাদে উইঠা যায়। ভেতর থেকে কিছু ল্যাপটপও লুটপাট চালানো হয় বলেও জানান তারা। পরে পাম্পের লোকেরা পাম্পে তালা মেরে চলে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চায়ের দোকানি বলেন, সবই একই দলের। পাম্পও আওয়ামী লীগ, যারা ভাঙচুর করেছে তারাও আওয়ামী লীগ। হেলাল, ফায়জুল, আজমতসহ স্থানীয় অনেক বড় বড় নেতা আইছিল। হেরাই তালা মাইরা দিছে পাম্পের গেইটে ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ দেখে অনেকেই আরো বলেন, ব্যবসাযী নেতা খালেদ হায়দার খান কাজল সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের ফোন পেয়ে চাষাড়া থেকে একটি দল নিয়ে শিবু মার্কেটের দিকে রওনা দেন এবং ওদিকের আজমত, গিয়াসউদ্দিন ও ফতুল্লা থানা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ফায়জুল ইসলামকেও কল করেন। পরে একত্রিত হয়ে সবাই পাম্পের দিকে ছুটে যান। এবং পাম্পটির সিসি ক্যামেরা ও একটি মেশিন ভাঙচুর চালায়।এমন ঘটনার বিষয়ে জানাতে সাহাবুদ্দিন আহমেদের বাড়ীতে উপস্থিত হলে তার, তার চাচাতো ভাই ইসহাক বলেন, সাহাবুদ্দিন ভাই কারো সাথে দেখা করবো না । কালকে রাইতে তারে মারধর করছে সে এখন অসুস্থ । পাম্পে এমপি সাবের লোকজন ভাংচুর ও মারধর কইরা তালা মাইরা দিছে । সকাল থেইক্কা অনেকেই আইলেও কারো সাথে কথা বলেন নাই ।
ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি আসলাম হোসেন বলেন আমরা অভিযোগ পেয়েছি । তদন্ত চলছে । কেউ আইনের বাইরে নয় । পাম্প বন্ধ রয়েছে মালিক পক্ষ চাইলে আমরা নিরাপত্তা দেবো । জানমালের কোন ক্ষতি যাতে না হয় সে জন্য পুলিশ কড়া নজরদারীতে রয়েছে ।এমন গুরুতর অভিযোগের বিষয়ে সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান, ব্যবসায়ী নেতা কাজলসহ অনকের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও গণমাধ্যমের সাথে কথা বলতে চান নাই কেউ ।
এমন ঘটনায় জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ইন্সপেক্টর সাজ্জাদ রুমন বলেন, ঘটনাটি কেন্দ্র করে পুলিশের কাছে অভিযোগ এসেছে । তদন্ত চলছে । পরে বিস্তারিত জানানো হবে আসলে কি ঘটেছিলো ।
Discussion about this post