সাংবাদিক পিটিয়ে প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে একদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের প্রাণকেন্দ্রে সমাবেশ করেছে ভুমিদস্যু সন্ত্রাসীরা। ফটো সাংবাদিক প্রিতমের উপর হামলাকারীরা ফের একই কায়দায় এই নারায়ণগঞ্জ শহরের একাধিক সাংবাদিক সংগঠেনের নেতাদের নিয়ে সমাঝোতার চেষ্টা চালিয়ে শহরের চাষাড়ায় সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের সাথে গোপন বৈঠক করায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে নগর জুড়ে ।
অপর দিকে শহরের কুখ্যাত ভুমিদস্যু জয়নাল আবেদীন পাঁচ (৫) হাজার টাকা পাঠিয়ে সন্ত্রাসী হামলার শিকার সাংবাদিক প্রিতমকে নিজ পক্ষে নেয়ার চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হয়েছে ।
অপর দিকে কুখ্যাত অপরাধীদের (জনপ্রতিনিধি নামধারী নেতা ও ভূমিদস্যু) পক্ষ নিয়ে ঘটনা মীমাাংশা করতে কয়েকজন নামধারী সাংবাদিক নেতারা তদ্বির চালিয়ে
ব্যর্থ হওয়ার খবরে নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিক মহলে সাংবাদিক নেতাদের বিরুদ্ধে ধিক্কারের সৃষ্টি হয়েছে ।
সাংবাদিকদের অনেকেই বলেছেন, সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যুদের হামলায় গুরুতর আহত সাংবাদিক প্রিতম কে একবারের জন্যও দেখতে যান নাই নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের কিংবা নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের কোন নেতা । অথচ এই সংগঠনের নেতাদের কেউ কেউ হামলাকারী ভূমিদস্যু নামলার আসামী সন্ত্রাসীদের সাথে গোপন বৈঠক করে সমাঝোতার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ।
সাংবাদিক প্রীতমের উপর এমন হামলার ঘটনায় একটি বারের জন্য সাংবাদিক নেতা দাবীদারদের কেউ কোন বিবৃতি কিংবা নিন্দা জ্ঞাপন করেন নাই ঘটনার তিন দিনেও ।
অভিযোগ রয়েছে অপরাধীদের পক্ষ নিয়ে সাংবাদিক নেতারা উল্টো মামলায় দ্রুত জামিন নিতে পরামর্শ দিয়ে যাতে আপাতত গ্রেফতার না করে সে লক্ষেও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে তদ্বির চালিয়ে যাচ্ছে ।
সাংবাদিক পিটিয়ে সাংবাদিক নেতাদের সাথে গোপন বৈঠক, সাংবাদিক নেতাদের সন্ত্রাসীদের সাথে আঁতাত করে হামলায় মামলার সমাঝোতার চেষ্টা করা, এখনো কোন নিন্দা জ্ঞাপন না করার এমন অসংখ্য অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিক নেরাদের কেউ কেউ বলেন, “চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক সংগঠনের নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন, সমাঝোতার চেষ্টা করেছেন এটি ঠিক । কিন্তু আমার নাম কোড করে নিউজ কইরেন না প্লিজ। আনাদের সাংবাদিক নেতাদের এমন কান্ডে আমি নিজেই লজ্জিত । বোঝেন ই তো আনাদের মধ্যএ কঠিন রাজনীতি রয়েছে । আমার নাম প্রকাশ করলে আমাকে নিয়ে মারপ্যাঁচ করবে ।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে আরো জানা যায়, বাংলাদেশ সচেতন নাগরিক কমিটি নারায়ণগঞ্জ জেলা শাখার উদ্যোগে ১৯৭১ পাকবাহিনী কর্তৃক গণহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে সম্মুখভাগে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান প্রীতমকে পিটিয়ে ও রক্তাক্ত জখমের অভিযুক্ত কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান ও হারুন অর রশিদ। ইতোমধ্যে প্রীতমের দায়ের করা মামলায় এ দুইজন আসামী।
বুধবার ২৪মার্চ বিকেলে শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সামনে উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভাটি অনুষ্ঠিত হয়। ওই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন মহানগর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা। তাঁর পাশেই উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান ও হারুন অর রশিদ। তারা দুইজন ব্যানার ধরে দাঁড়িয়ে ছিলেন।
অপরদিকে ২৩মার্চ বেলা ১২টায় লিংক রোডস্থ জেলাখানার বিপরীতে দোকানপাট ভাঙ্গচুর ও লুটপাটের ছবি তুলতে গেলে তার উপর হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত দৈনিক সংবাদচর্চা পত্রিকার স্টাফ ফটো সাংবাদিক মাহমুদুর রহমান প্রীতম ঘটনার দিনই এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন।
লিখিত অভিযোগে সাংবাদিক প্রীতম উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন লিংক রোডে অবস্থিত জেলা কারাগারের বিপরীতে একটি জমির উপর নির্মিত দোকানপাটে ভাঙ্গচুর ও লুটপাট চালানোর সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে নিজের নিকন ডি ৭০০ মডেলের ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলেন তিনি। ছবি তুলতে দেখে সন্ত্রাসীরা তার দিকে তেড়ে আসে, পরে সে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিলে এক সময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী খ্যাত হাজী রিপন তার হাতে থাকা লোহার হাতল দ্বারা সাংবাদিক প্রীতমের মাথায় আঘাত করে রক্তক্ষরণ ঘটায়। একইসময়ে কাউন্সিলর শফিউদ্দিন প্রধান ও হারুন অর রশিদ এবং ৪০/৫০ জন হামলাকারী লোহার রড, লোহার পাইপ, কাঠ, বাঁশসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র দ্বারা তাকে বেদম মারধর করে রক্তাত্ব জখমসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে তার সাথে থাকা নিকন ডি ৭০০ মডেলের ক্যামেরা, স্যামসাং এম ২১ মডেলের একটি স্মার্টফোন, পকেটে থাকা আট হাজার ৩০০ টাকা, জাতীয় পরিচয় পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের মূল কপিসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এসময় তার মাথা ফাটিয়ে, হাত ভাঙ্গা, পিঠে অজস্র কাটা, রক্তাত্ব জখমসহ শরীরের সকল স্থানে নীলাফুলা জখম করে।
সাংবাদিক প্রীতম জানান, শুধু ঐখানে ই না, আমি নিজের জীবন বাঁচাতে দৌড়ে এসে চায়ের দোকানে আশ্রয় নেই, সেখানেও সন্ত্রাসীরা আমার উপর হামলা চালায়। এসময় চায়ের গরম পানির ক্যাটলি দিয়ে আঘাত করে আমার কপাল ফাটিয়ে দেয় হামলাকারীরা।
পরে স্থানীয়দের সহযোগীতায় আমাকে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট খানপুর হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও নারায়ণগঞ্জ ট্রাক মালিক সমিতির সেক্রেটারী শফিউদ্দিন প্রধান বলেন, ‘বিষয়টি অনাকাংখিত। আল জয়নাল দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মালিক সমিতির জায়গা দখল নেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এর ধারাবাহিকতায় সকালে আমাদের জায়গায় সীমানা প্রাচীর তুলতে শুরু করে। এর খবর শুনে আমরা মালিক সমিতির লোকজন ও শ্রমিকেরা মিলে সেখানে যাই। ওইসময় আল জয়নালের লোকজন পালিয়ে যায়। পরে আমরা ভেতরে বসে কথা বলছিলাম। ওইসময় বাইরে ঝগড়ার খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখি একজনকে মারধর করছে। শ্রমিকেরা জানায় সে আল জয়নালের লোক এবং মোবাইলে ছবি তুলছে। এজন্য তারা তাকে মারধর করেছে। এসময় প্রীতম জানায় সে সাংবাদিক তখন তাকে উদ্ধার করে ৩০০ শয্যা হাসপাতালে পাঠাই।’
Discussion about this post