নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
জেলা মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অসাধূ কর্মকর্তা নানা অপরাধের হোতা সমছুল আলম মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে কোন ধরণের তদন্ত ছাড়াই নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়াস্থ নূর মসজিদের পাশেই মদের আস্তানার ( বার ) অনুমোদন দিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছে নগরবাসীর মাঝে । দীর্ঘদিন যাবৎ শহরের চাষাড়া বালুর মাঠ এলাকার প্যারাডাইস ক্যাবলস টাওয়ারে মদের বার স্থাপন করতে ভাড়া দেয়ার খবরে ফুসে উঠে নগরবাসী । এমন ঘটনায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র ।
নারায়ণগঞ্জ জেলার কিছু অসাধু চক্র, রাজনীতিবিদ, জেলায় কর্মরত সরকারী কর্মকর্তা এবং সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন কর্মকর্তা বিশাল তদ্বির ও লাবিং করে ব্লু পিয়ার রেস্টুরেন্টের অন্তরালে মদের আস্তানার (বার) অনুমোদন নেয় গাজী মুক্তারে শ্যালক রাশেদ খান।
নূর মসজিদ লাগোয়া এমন মদের কারবারের খবরে নগরবাসী ফুসে উঠলেও পুরো জেলাবাসীকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে মদের বারের কর্মকান্ড অব্যাহত রাখে মদের আস্তানার মালিক কথিত আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মুক্তার । গেলে বছর ১৪ জুলাই মদ/ বিয়ার বেচাকেনার অনুমতি পেলেও এই বারের আস্তানা মেরামত ও সাজসজ্জার কাজ শুরু করে উদ্ভোধনের দিনক্ষনও নির্ধারণ করে গাজী মুক্তার । গেলো বছর নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে চাষাড়ায় কয়েকজন মন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করে এই মদের আস্তানা উদ্ভোধন করার ঘোষনা দিলেও রাজধানীতে ক্যাসিনো ব্যবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে যুবলীগের কয়েকজন রাঘরবোয়াল ধরা পরে তোলপাড় সৃষ্টি হলে পিছ পা হয় গাজী মুক্তার । এরপর মুক্তারের কয়েকজন শেল্টারদাতা রাতারাতি গ্রেফতার হলে নারায়ণগঞ্জে মদের আস্তানা উদ্ভোধন প্রক্রিয়া আটকে যায় । এরপরও থেমে থাকে নাই মদের আস্তানার কার্যক্রম ।
সম্প্রতি রেষ্টুরেন্টের কর্মকান্ড পরীক্ষামূলক চালু করেছে বলে শহরে চাউর রয়েছে । অচিরেই অতি গোপনে শহরের টানবাজারের দুটি মদের দোকান /নারায়ণগঞ্জ ক্লাবের মদের লাইসেন্সধারীদের ইতিমধ্যেই ম্যানেজ করেছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে । নারায়ণগঞ্জ ও রাজধানীর কয়েক হাজার মদের লাইসেন্সধারীদের সকল তথ্য সরবরাহ এবং বার চালু করতে যা যা করতে হবে তার সকল দিক নির্দেশনা দিয়ে সার্বিক সহযোগিতা করছে নারায়ণগঞ্জ জেরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সামছুল আলম । মাদক ব্যবসায়ীদের দমনের পরিবর্তে মাদক ব্যবসায়ী/সেবীদের লালন-পালনকারী সামছুল আলমের এমন কর্মকান্ডে এবার চাষাড়ায় গড়ে উঠা মদের আস্তানা ( বার ) বন্ধের জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন নূর মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুস সালাম।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) জুম’আ নামাজের খুতবায় বয়ানকালে তিনি এই অনুরোধ জানান।
জুম্মার নামাজের খুতবায় নূর মসজিদের খতিব মাওলানা আব্দুস সালাম জানিয়েছেন, একটি মসজিদের পাশে মদের আস্তানা (বার) কোনো ভাবেই কাম্য নয়। আমরা সরকার, প্রশাসনের প্রতি বিনীত অনুরোধ রাখছি, এই মদের বার এখান থেকে তুলে দিন। সরকার মুসল্লিদের এই অনুরোধে সাড়া দিবেন বলেই আমি বিশ্বাস করি।
এদিকে ইতোমধ্যেই চাষাড়ায় নূর মসজিদের পার্শ্ববর্তী প্যারাডাইজ ক্যাসেলের ৯-১১ তলায় স্থাপিত ব্লু পেয়ার নামক বার চালু করা হয়েছে। উদ্বোধনপূর্বক প্রাথমিক পরীক্ষামূলকভাবে এটি শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কোনো রকম আপত্তিতেও দমছে না এর মালিক আওয়ামী লীগ নেতা গাজী মুক্তার। বরং তিনি সাংবাদিকদের শায়েস্তা করারও হুমকি দিয়েছেন বলে সম্প্রতি পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে এই কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি অ্যাড. মাহবুবুর রহমান মাসুম।
সূত্র জানায়, একজন সাংবাদিক নেতা ইতোপূর্বেই বার মালিকের কাছ থেকে বেশ কিছু টাকাও হাতিয়ে নিয়েছেন সাংবাদিক ম্যানেজ করার নামে। এ ব্যাপারে স্থানীয় গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশ হয়েছিলো। অন্যদিকে একটি মানবাধিকার সংগঠনের তথা কথিত নেতা নারকোটিকসকে সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলেও খবর শোনা যাচ্ছে। এই ব্যক্তি গণমাধ্যমকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেই নারকোটিকসের সহকারি পরিচালক সামসুল হায়দারকে সাহস যোগাচ্ছেন বলে খবর রয়েছে।
এদিকে মসজিদের পাশে একটি মদের বার কী করে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়ে, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (নারকোটিকস) সমালোচনা করেছেন নগরবাসী। তারা বলছেন, এখানে বিপুল অঙ্কের টাকার খেলামেলা হয়েছে। যার কারণে, বারের লাইসেন্স প্রদানের শর্তাবলি ভঙ্গ করেই চাষাড়ায় মসজিদের পাশে ব্লু পেয়ার নামে মদের বারের অনুমোদনের জন্য নারকোটিকস সদর দফতরে এনওসি দিয়েছে নারায়ণগঞ্জ নারকোটিকস।
এদিকে চাষাড়ায় কোনো ভাবেই মদের বার হতে দিবে না, এমন হুঙ্কার ছেড়ে জ্বালাময়ী বক্তব্য রেখেছিলেন শহরের ধর্মীয় নেতা মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মাওলানা তামিম বিল্লাহসহ আরও অনেকেই। কিন্তু তারা বর্তমানে সকলেই চুপসে গেছেন। বলা হচ্ছে, বার মালিক ওই আওয়ামী লীগ নেতার সাথে তাদের গোপন আঁতাত হয়েছে। যার কারণে তারা এ নিয়ে আর কোনো কথা বলছেন না।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম ১৫ জানুয়ারি বিকেলের দিকে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করতে আসলে ক্লাব সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বার প্রসঙ্গে তীব্র আপত্তি তুলেন এবং এই বার বন্ধের জন্য জোড় দাবি করেন। অন্যথায় সকল সাংবাদিককে সাথে নিয়ে বার গুঁড়িয়ে দিয়ে আসবেন বলেও পুলিশ সুপারকে জানান তিনি।
মাসুম যুক্তি তুলে ধরে বলেছেন, ছোট্ট একটা শহর নারায়ণগঞ্জ। বিভিন্ন জেলা থেকেই লোকজন এসে থাকছে এখানে। নানা অঘটনও ঘটে এই শহরে। এরমধ্যে এমন একটি বার যদি শহরের উপর চালু হয় তাহলে শহরের পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হবে। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে বারের সামনেই একটি ঐতিহ্যবাহী মসজিদ, সাথেই রয়েছে প্রেস ক্লাব। বার চালু হলে মুসল্লিরা যাবে কোথায়, আর আমরা সাংবাদিকেরাইবা যাবো কোথায় ? তাই জনস্বার্থে এই বার বন্ধ করতে হবে, এখানে বার চালু করতে দিতে পারি না।
Discussion about this post