আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নারায়ণগঞ্জে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । নারায়ণগঞ্জের সর্বত্রই যেন অপরাধীরা বীরদর্পে তাদের সকল ধরণের অপরাধ চালিয়ে যাচ্ছে । কোথায় নেই অপরাধীরা ? ধর্মীয় উপসনালয়, শ্মশান কিংবা কবরস্থান কোথাও বাকী নাই অপরাধীদের নিশ্চিন্তে পদচারণা । নারায়ণগঞ্জের সর্বত্র অপরাধীরা যার যার ইচ্ছে মাফিক আইনশৃংলা বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তাদেরকে ম্যানেজ করে চাল চুরি, তেল চুরি, চিনি চোরাই কারবারি, লবণ চোরাই কারবারী, গম চোর চক্রের সিন্ডিকেট, পরিবহণ সেক্টরের কুখ্যাত অপরাধীচক্র, সর্বত্র মাদক ব্যবসায়ীদের অবাধ বিচরণ চলছে সমানতালে ! এ যন মগের মুল্লুক !
নারায়ণগঞ্জের সর্বত্রই যেন কোন না কোন পন্থায় অপরাপধী চক্র তাদের কর্মকান্ড অব্যাহত রখেছে । অতিসম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ র্যাব ১১ একাধিক অভিযান চালিয়ে সড়কের উপর চিহ্নিত চাঁদাবাজ, তেলচোর, জুয়াসহ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে । এরপরও কি থামানো গেছে অপরাধীদের ? এমন প্রশ্ন উত্থাপন করে নগরীর অনেকেই বলেছেন, “আজব এই নারায়ণগঞ্জের আসলেই কোন বাপ মা নাই !”
নরায়ণগঞ্জ নগরীর মাত্র কয়েক কিলোমিটার সড়কের ফুটপাতে কারা চাঁদাবাজি করছে তা কে না জানে ? নগরীর সকলেই কি অন্ধ ? নাকি আইনশৃংখলা বাহিনী নারায়ণগঞ্জবাসীকে অন্ধ মনে করেন ? ফুটপাত থেকে চাঁদা, প্রকাশ্যে টানাবাজরের সূতা চুরির ভাগবাটোয়ারা, লবণের চোরাই কারবারী , নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যবসা, গম চোরদের সিন্ডিকেটের বিশাল অপকর্ম, নগরীর সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার প্রকাশ্য তেলচুরি কে না জানেন ? শুধু না জানার অভিনয় করে যাচ্ছেন নারায়ণগঞ্জের আইনশৃখলা বাহিনী ! এমন ক্ষোভ প্রকাশ করে মন্তব্য করেছেন আমজাদ হোসেন নামের একজন প্রবীন ব্যবসাযী ।
নারায়ণগঞ্জের আইনশৃংখলা পরিস্থিতি যে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে তার কয়েকটি জ্বলন্ত উদহারণ হলো : প্রকাশ্য পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে সারাদিন রাত মাদকে হাট পরিচালিত হচ্ছে খোদ পুলিশের শেল্টারে । চাঁদমারী বস্তিতে চিৎকার করে মাদক বিক্রি হচ্ছে একাধিক লাইনম্যান দিয়ে আর বস্তির বিপরীত পাশে পুলিশ দাড়িয়ে তা পাহাড়া দেয় নির্লজ্জের মতো । কতটা ভয়ংকর পরিস্থিতি হলে এমন অবস্থা হতে পারে তা অনুমান করাই কঠিন । অপরদিকে নগরীর ফতুল্লার পাগলা এলাকার মেরী এন্ডারসনে মাদক বিক্রির প্রকাশ্য চিত্র সকলেই দেখলেও চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখানোর পরও পুলিশ এখানে নির্বিকার । তারা জানেই না এই মেরী এন্ডারসনে মাদক বিক্রি হয় প্রকাশ্যেই । এ ছাড়াও বিগত দিনে দায়ের করা মাদক মামলা চার্জসীটে মেরী এন্ডারসনের মাদকের গডফাদার তানভীর আহমেদ টিটুকে নাকি খুজেই পায় নাই মর্মে আইনশৃংখলা বাহিনী সম্প্রতি আদালতে চার্জসীট দাখিল করায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে নগরীজুড়ে ।
নারায়ণগঞ্জে অপরাধীদের সংখ্যা একতটাই মারাত্মক যে, পরিবহণ সেক্টরের প্রায় পুরোটাই যেন অবৈধদের দখলে চলে গেছে। ট্রাফিক ব্যবস্থা যেন মুখ থুবরে ভেঙ্গেই পরেছে । নগরীতে এমন কোন পরিবহণ নাই যেখানে বৈধতার সাথে ব্যবসা চালাচ্ছে এই সেক্টরের লোকজন । বন্ধন পরিবহণ, উৎসব পরিবহণ, শীতলক্ষা পরিবহণ, বন্ধু পরিবহণ , প্রতিটি সড়কে লেগুণা ছাড়াও মানবিক কারণ দেখিয়ে পুরো নগরী যেন দখল করে নিয়েছে অটো ও ব্যাটারী চালিত রিক্সা ।
এমন অসংখ্য ঘটনা ছাড়াও নারায়ণগঞ্জ শহরের র্যাব কার্যালয়ের নাকের ডগায় সোহেল নামের এক চাঁদাবাজের সহযোগিকে ফুটপাত থেকে চাঁদা আদায়কালে হাতেনাতে আটক করে র্যাব। আটকের পর থানায় হস্তান্তর করলে মাত্র দুই চারদিনে মধ্যেই চাঁদাবাজ চক্র জামিনে মুক্ত হয়ে ফের প্রকাশ্যে আরো বেপরোয়া গতিতে চাঁদাবাজি চালাচ্ছে বীরের বেশে ।
নগরীর স্থলপথে হাজারো এমন অপরাদের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষা ও বুড়িগঙ্গা নদীতে কি পরিমাণ অপরাধ কার্যক্রম প্রতিনিয়তঃ পরিচালিত হচ্ছে তার খবর সকলে জানা থাকলেও শুধু অজানা থাকে আইনশৃংখলা বাহিনীর অসাধৃু কর্মকর্তাদের কাছে । প্রতিমাসে মাসোয়ারা গ্রহণ করায় অপরাধীদের আস্তানার ধারেকাছে ভিড়তেও মাঠ পর্যায়ের আইনগ্রয়োগকারী বাহিনীর সদস্যদের উপর অলিখিত মৌখিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে রাখেন উর্ধতন কর্মকর্তারা।
শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ২০১৯ সালের ১৭ মে র্যাব ১১ অভিযান চালিয়ে চার হাজার ৬২০ লিটার চোরাই তেলসহ ছয়জনকে আটক করলেও এখনো পর্যন্ত তেলচোরদের মূল হোতা কাউন্সিলর আক্তার, তেলচোর বারেক, তেলচোর মানিক, তেলচোর নাসির, তেল চোর বিল্লাল, তেলচোর আবদুল্লাহ কে আজো গ্রেফতার করা সম্ভব হয় নাই । এর কারণ হিসেবেই তেলচোর আক্তার, মানিক, আবদুল্লাহ, নাসিরের সাফ জবাব তারা এখন আর তেলচুরি করেন না ।
অথচ আশ্চর্য হলেও সত্য এই তেলচোর চক্রের সকলেই বীরদর্পে নদী থেকে তেলচুরির মহোৎসব চালিয়ে একাধিক বাড়ি, গাড়ী ও সম্পদের মালিক হয়েছেন । এই তেল চোর চক্রের সকলেই সমস্বরে দম্ভাকারে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসিকে মাসশেষে লাখ টাকা, বন্দর থানার ওসিকে লাখ টাকা, ডিবি পুলিশের ওসিকে মাস মেসে ২ লাখ টাকা, র্যাবের লোকজনকে মাস শেষে মোটা অংকের টাকা দিয়েই এই ব্যবসা করে আসতেছি । কোনভাবেই এই ব্যবসা বন্ধ হবে না।
Discussion about this post