নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় স্ত্রীর চুক্তিতে ব্যাংক কর্মকর্তা স্বামীকে সড়ক থেকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে অপহরণ করে একটি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে নিয়ে মাথা ন্যাড়া করে রাতভর নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে।
৯৯৯ নম্বরে ফোন পেয়ে রোববার ভোরে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশ ওই ব্যাংক কর্মকর্তাকে মাথা ন্যাড়া ও হাত-পা বাঁধা অবস্থায় সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি খেজুরতলা এলাকায় অবস্থিত দীপ্তি নামক মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করে।
এ সময় দীপ্তি মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক মো. শফিউল আজম খোকনকে আটক করেছে পুলিশ।
মাদক নিরাময় কেন্দ্র থেকে উদ্ধার হওয়া ব্যাংক কর্মকর্তা শাহাদাৎ হোসেন ফতুল্লার বক্তবলী ইউনিয়নের লক্ষীনগর এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে।
তিনি অগ্রণী ব্যাংক নারায়ণগঞ্জ টানবাজার শাখার ব্যবস্থাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তার স্ত্রী রওশন আরা সাউথইস্ট ব্যাংক হেড অফিসের এক্সিকিউটিভ অফিসার। তারা স্বামী-স্ত্রী দুই শিশু সন্তান নিয়ে শহরের ডন চেম্বার এলাকায় আলোর বাড়ির ৫ম তলায় ভাড়া থাকেন।
ব্যাংক কর্মকর্তা শাহাদাৎ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করতে রাজি নয়। তার অভিযোগ, আমি মাদকাসক্ত নই, কিন্তু মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজন কেন আমাকে সড়ক থেকে মাইক্রোতে উঠিয়ে অপহরণ করে বেধড়ক মারধর করে আমার মাথা ন্যাড়া করে দেবে। আমি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিচার চাই।
শাহাদাৎ হোসেন গণমাধ্যম কে জানান, মাইক্রোতে উঠিয়ে কয়েকজন একসঙ্গে অনেক চড়-থাপ্পড় মারে। এরপর চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় দীপ্তি মাদক নিরাময় কেন্দ্রে। সেখানে প্রথমে আমার মাথা ন্যাড়া করে। এরপর আমার সম্পদ ও ব্যাংকে কত টাকা আছে জানতে চায়। তাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে দেরি হওয়ায় লাঠি দিয়ে হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে বেধড়ক পেটায়। একপর্যায়ে আমার হাত ও পা বেঁধে মারধর করে। রাতভর এভাবে নির্যাতন চালায়।
এ বিষয়ে জানতে দীপ্তি মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কাউকে পাওয়া যায়নি।
শাহাদাতের পরিবারের পক্ষ থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, এ ঘটনার আড়ালে তার স্ত্রী রওশন আরার হাত রয়েছে। তিনি মাদক নিরাময় কেন্দ্রের লোকজনের সঙ্গে চুক্তি করে শাহাদাতকে হত্যা করার পরিকল্পনা করেছেন। তদন্ত করলে পুরো বিষয়টি বেরিয়ে আসবে।
তবে রওশন আরা শাহাদাতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদ মাধ্যমে বলেন, শাহাদাতের সঙ্গে সাড়ে ৩ বছর আগে প্রেম করে আমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর আমাদের পরপর দুটি পুত্র সন্তান হয়। এরপর জানতে পারি শাহাদাৎ আমাকে বিয়ে করার আগে রত্না নামে এক হিন্দু ধর্মের মেয়েকে বিয়ে করেন। তাকে নির্যাতন করায় সে শাহাদাতকে বিচ্ছেদ করে অস্ট্রেলিয়া চলে যায়। সম্প্রতি তার মা ও বোনদের কথায় আমাকেও নানাভাবে নির্যাতন করতে থাকে। মন চাইলে আমাকে বাজার করে দিত আবার অনেক সময় তার মা-বোনদের সঙ্গে গিয়ে থাকত। আমার ও শিশু সন্তানদের খোঁজখবর নিত না। আমার সঙ্গে ভদ্র ভাষায় কথা বলত না। আমি ইচ্ছে করলে আইনের দ্বারস্থ হতে পারতাম কিন্তু স্বামীর সংসার করব বলে সব নির্যাতন সহ্য করেছি।
এ বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন বলেন, মাদক নিরাময় কেন্দ্রের পরিচালককে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত চলছে। এখনও ব্যাংক কর্মকর্তার পক্ষ থেকে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়নি। তবে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে ।
Discussion about this post