নারায়ণগঞ্জের ক্লিন ইমেজের অধিকারী পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম ফুয়াদ জেলা শহরের চরমভাবে বিতর্কিত ও চিহ্নিত অপরাধীদের পাশে নিয়ে বলেছেন, “নারায়ণগঞ্জে কোনো চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। আইনের বেলায় আমি কোনো ছাড় দেই না। কেউ যদি আইন না মানে আমি অত্যন্ত কঠোর হবো।”
পুলিশ সুপারের পাশে দাড়িয়ে থাকা শহরের কুক্ষাত অপরাধীদের এমন ফটোসেশানের দৃশ্য দেখে উপস্থিত অনেকেই নগ্ন ভাষায় তীব্র সমালোচনা করে বলেন, কামারের দোকানে ধর্মের বাণী শোনাছেন এসপি জায়েদুল আলম ।
পুলিশ সুপার মাইকে দাড়িয়ে বক্তব্য প্রদানকালে মুখোশধারী অপরাধীদের অনেকেই ঘুরে ফিরে ছবি তোলার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় । নিজেদেরকে ব্যবসায়ী, ব্যবসায়ী নেতা, জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্ন সংগঠনের নেতা পরিচয় দিলেও এসপির পাশে দাড়িয়ে থাকা প্রায় সকলেই ঘৃন্য অপরাধের সাথে জড়িত । পুলিশ সুপার কি জানেন তাদের প্রকৃত পরিচয় ?
বৃহস্পতিবার দুপুরে নিতাইগঞ্জে ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে চলাকালে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জায়েদুল আলম ফুয়াদের পাশে অপরাধীদের অবস্থানের দৃশ্য দেখে অনেকেই উল্লেখিত মন্তব্য করেছেন।
পুলিশ সুপার তার বক্তব্যে বলেন, আমরা এক লাইনের বেশি কোন গাড়ি রাখবো না। আমরা সিটি কর্পোরেশন, হসপিটাল, ফায়ারসার্ভিস স্টেশনের বাইরে কোন গাড়ি রাখবো না। আবার আমরা কোন চাঁদাবাজিও করতে দিবো না। আমাদের কথা কাজ হবে একটাই। কিন্তু আমার আইন প্রয়োগ হবে কঠোর। এবং সঠিক কেউ যদি আইন না মানে আমি তার বিরুদ্ধে অত্যন্ত কঠিন হবো । আমি কিন্তু আইনের ক্ষেত্রে কোন ছাড় দেইনা। এটা আমার ব্যাকরণে নেই। আজ থেকে এই নিতাইগঞ্জের চেহারা কেমন হবে তা আপনারা ঠিক করবেন আমি চাইবো দুপুরের পর থেকে নিতাইগঞ্জের চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। আগামীতে সবাই এই নিতাইগঞ্জকে যাতে আগের ঐতিহ্যবাহী নিতাইগঞ্জ হিসেবে জানে ওইভাবে গড়ে তুলুন।
আপনারা জানেন গত বছর ডিসেম্বর মাসের ৩০ তারিখে এই নারায়নগঞ্জ জেলায় যোগদান করি। তার আগে প্রায় সাড়ে তিন বছর মুন্সিগঞ্জ জেলায় কর্মরত ছিলাম এবং এই নিতাইগঞ্জ দিয়ে আমি সারে তিন বছর আসা যাওয়া করেছি। সুতরাং আমি এই নিতাইগঞ্জ এর সমস্যা এবং এই সমস্যার কি সমাধান সেটা আমরা কিছুটা হলেও অবগত আছি। কিন্তু আপনারা জানেন বিশ্বব্যাপি যে মহামারি কোভিড-১৯ এর কারণে আপনাদের সাথে আমরা বসতে পারি নাই। আমার ইচ্ছা ছিলো যোগদানের এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনাদের সাথে বসার, কিন্তু সেটা হয়নি। মহান আল্লাহ আজকে আমাদের সুযোগ দিয়েছেন আমরা সবাই আজকে একসাথে বসেছি ।
নিতাইগঞ্জের যানজট নিরসনে পুলিশ প্রশাসনের সহায়তা করার উদ্দেশ্যে ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসপি জায়েদুল আরও বলেন, আমি একটি কথাই বলবো আপনারা এখানে স্থায়ী, আপনারা যুগ যুগ এখানে ব্যবসা বাণিজ্য করেন। আপনাদের কর্মসংস্থান এখানে। আমরা যারা আপনাদের সেবা করতে আসি, আমরা অল্প সময়ের জন্য আসি। হয়তো আমার প্রায় ৯ মাস হয়ে গেলো আর হয়তো কিছুদিন পর বা যে কোন সময় আমার বদলি হতে পারে, এটাই স্বাভাবিক। সুতরাং, এখানকার যে সমস্যা সেটা সমাধান হলে সবচেয়ে বেশি লাভবান আপনারাই হবেন। আর সেটাই আমাদের কাছে সবচেয়ে খুশির খবর হবে।
হযরত খাদিজা (রা.) এর কথা স্মরণ করে পুলিশ সুপার বলেন, আপনারা জানেন আমরা যারা মুসলমান বা অন্য ধর্মের আছেন সবার ধর্মেই বইয়ে ব্যবসা নিয়ে সবচেয়ে বেশি উল্লেখ করা আছে আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার সহধর্মীনি হযরত খাদিজা (রা.) তিনিও ব্যবসা করতেন। এই ব্যবসা করাটা আমি মনে করি ধর্মের কাজ। এটা মানুষের সেবার কাজ এটা ইবাদত হিসেবে নিতে হবে। আমার ব্যবসার কারণে কেউর ক্ষতি হক সেটা আমরা নিশ্চই চাইনা। আমরা নিশ্চই সঠিক ভাবে কাজটা করতে চাই।
নিতাইগঞ্জ ব্যবসায়ীদের অপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করে এসপি জায়েদুল আলম বলেন, করোনার মধ্যে নিতাইগঞ্জ থেকে আপনারা যে পরিমান পূরন দিয়েছেন, যে পরিমান কাজ করেছেন, যার কারনে আমি মনে করি দেশের ভোজ্য পন্যের দাম বাড়ে নাই। এটা সম্ভব আমি মনে করি এই নিতাইগঞ্জ এর ব্যবসায়ী সমাজ ও শ্রমিক সমাজ। আপনারা রাতদিন কাজ করেছেন আমি দেখেছি আপনারা আপনাদের এইখানে সুরক্ষিত ভাবে নিজেদের ঝুকি নিয়েও কাজ করে গেছেন। আমরা দেখেছি এই নিতাইগঞ্জে কখনও এক লেনে ট্রাক থাকে কখোনো ২লেনে আবার কখোনো ৩ লেনে কখোনো পুরো রাস্তা জুড়ে থাকে। আমি মনে করি এটা আমাদের ব্যবস্থাপনা আমাদের ম্যনেজম্যন্ট এর ত্রুটির জন্য আমি কাউকে দোষারোপ করবো না। সিস্টেম যদি না থাকে সেখানে কোন কিছুতেই কাজ হয়না আমরা চাচ্ছি এটা সিস্টেমে নিতে একটা ব্যাবস্থাপনায় যেতে যদি এই ব্যাবস্থাপনা সঠিক ভাবে কাজ করে তাহলে আমরা এটায় বহাল থাকবো যদি ব্যবস্থাপনা চেন্জ করতে হয় তাহলে করবো আপনাদের সহমতে আমরা একটি পুনাঙ্গো ব্যাবস্থাপনায় যেতে চাই। আজকে যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে তা মেনে নিবো।
অনুষ্ঠান চলাকালে উপস্থিত অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এসপি জায়েদুল আলম যতটুকু জেনেছি ওনি ক্লিন ইমেজের অধিকারী। কিন্তু তিনি কাদেরকে পাশে রেখে বক্তব্য দিচ্ছেন । তার পাশে রয়েছে অপরাধীদের হোতারা । নারী কেলংকারী, টোকাই থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক, সরকারি সম্পদ ও রাজস্ব লুন্ঠনকারী এবং বিভিন্ন মামলার আসামীরা এই অনুষ্ঠানের ছবি তুলে নানাভাবে প্রচার চালিয়ে আরো অপরাধের মাত্রা বাড়িয়ে দিবে । পুলিশ সুপার অনুষ্ঠানে আসার আগের এদের বিষয়ে কোন খোজখবর নিলেন না কেন ?
আটা-ময়দা মিল সমিতির সভাপতি মো. মতিউর রহমানের সভাপতিত্বে আরো উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোস্তাফিজুর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য এড. হোসনে আরা বাবলী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আব্দুল কাদির, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) সালেহ উদ্দিন আহমেদ, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান, নাসিক ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, নাসিক ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু, সদর মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাই প্রমুখ ।
Discussion about this post