ফাতেমার সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল প্রবাস ফেরত ইউনুছ আলীর। পরে প্রেমিকা ফাতেমা বিয়ের চাপ দেওয়ার জের ধরে তাকে ডেকে এনে শারীরিক সম্পর্কের এক পর্যায়ে ফাতেমাকে শ্বাসরোধে হত্যা পরে ঘাতক প্রেমিক ইউনুছ আলী।
সেই হত্যাকান্ড ধামাচাপা দিতে পাশের নির্মাণাধীন ঘরের ভিটি খুড়ে লাশ বালি চাপা দেয় ঘাতক ইউনুছ আলী নিজেই। নির্মাণাধীন বাড়ির মালিককে ঘরের ভিটি কংক্রিটের ঢালাই করার জন্য অর্থ দেয়ারও প্রস্তাব দেয় ঘাতক ইউনুছ আলী। তবে দু’দিন পরে ওই নির্মাণাধীন ঘর থেকে লাশের পচা গন্ধ বেরিয়ে পড়লে খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
চাঞ্চল্যকর ওই হত্যা মামলার তদন্তভার পেয়ে মাত্র ৪৩ দিনের মধ্যে হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ। ঘাতক প্রেমিক ইউনুছ আলীকে গ্রেফতার করা হয়েছে সিলেটের জৈন্তাপুর ভারতীয় সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকা থেকে।
১২ ডিসেম্বর শনিবার নারায়ণগঞ্জের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পুলিশ সুপার মো: মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। নিহত ফাতেমা আক্তার আড়াইহাজার থানার গহরদী এলাকার বিল্লাল হোসেনের মেয়ে। সে মানিকপুর এলাকায় মামা ইলিয়াস মোল্লার বাড়িতে ভাড়া থাকতো। ঘাতক ইউনুছ আলী আড়াইহাজারের বিশনন্দী এলাকার আব্দুরের পুত্র।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের ১৫ আগষ্ট আড়াইহাজার থানার বিশনন্দী ডেংপাড়া এলাকায় ডালিমের নির্মাণাধীন ঘরের বালু ভর্তি ভিটি হতে অজ্ঞাত মহিলার অর্ধ গলিত লাশ উদ্ধার করে গোপালদী তদন্ত কেন্দ্রের এসআই মুক্তার হোসেন। পরে এসআই মুক্তার হোসেন বাদি হয়ে আড়াইহাজার থানায় মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটির তদন্তভার পায় পিবিআই।
তদন্তকালে পিবিআই জানতে পারে, ঘাতক ইউনুছ আলী অবিবাহিত এবং ৯ বছর মালয়েশিয়ায় চাকরি করে গত ফেব্রুয়ারীতে ছুটিতে দেশে আসে। ইউনুছরা পূর্বে মানিকপুর এলাকায় থাকতো। নিহত ফাতেমার নানা নানী বিভিন্ন অজুহাতেই উনুছকে তাদের ঘরে থাকতো এবং ইউনুছকে ভিকটিম ফাতেমার সহিত বিয়ের প্রস্তাব দেয়। পাশাপাশি বাড়িতে থাকা অবস্থায় ভিকটিম ফাতেমার সঙ্গে ইউনুছের প্রেমের সর্ম্পক হয়।
ইতোমধ্যে ইউনুছ আলীর পরিবার আড়াইহাজার থানার বিশনন্দী ডেংপারায় নতুন বাড়ি করে সেখানে চলে যায়। বিভিন্ন সময়ে ইউনুছ আলী মানিকপুরে অবস্থিত তাদের পুরাতন খালি বাড়িতে আসত এবং উক্ত খালি বাড়িতে ফাতেমার সঙ্গে প্রেম ও ভালবাসার সর্ম্পক তৈরী করে এক পর্যায়ে ভিকটিমের সাথে শারীরিক মেলামেশা শুরু করে। তাদের প্রেমের বিষয়টি উভয় পরিবারের লোক সহ প্রতিবেশিরা জেনে যায়। ইউনুছের পরিবার তাদের সম্পর্কের বিরোধীতা করেই ইউনুছের বিয়ের জন্য কনে দেখা শুরু কর।
অপরদিকে ইউনুছ প্রেমিকা ফাতেমা আক্তার এর সহিত মেলামেশার ফলে ফাতেমা গর্ভবতী হওয়ার আশংকা এবং ইউনুছের জন্য কনে দেখার বিষয় জানতে পেরে ইউনুছকে বিয়ে করার জন্য চাপ দেয়। কিন্তু ইউনুছ ফাতেমাকে বিয়ে করতে রাজি ছিলনা।
গত ১০ আগষ্ট বিকেলে ইউনুছ মোবাইল ফোনে ভিকটিম ফাতেমা আক্তারের সঙ্গে কথা বলে তাকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে সন্ধ্যার পরে তাদের নতুন বাড়ির পিছনের গাছ গাছালী বেস্টিত জায়গায় ভিকটিমকে রেখে বাড়ি আসে। ওই দিন রাত ১০টার দিকে ইউনুছ তার বাড়ি থেকে ফাতেমার নিকট গিয়ে তার সঙ্গে শারীরিক মেলামেশা করে এবং একপর্যায়ে কৌশলে ফাতেমার পিছনদিক থেকে বাহুদিয়ে গলা চেপে ধরে এবং শ্বাসরোধ হওয়া পর্যন্ত স্বজোরে ধরে রেখে ফাতেমাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। ফাতেমাকে হত্যা করার পর তার লাশ আসামীর নতুন বাড়ির পিছনের গাছ গাছালী বেস্টিত জায়গা থেকে ঘটনাস্থল ডালিমের নির্মাণাধীন ঘরের বালু ভর্তি ভিটিতে এনে কোদাল দিয়ে গর্ত করে বালু চাপা দেয়। বালু চাপা দেয়ার পরে ঘটনাস্থল ঘরের মালিক ডালিম মিস্ত্রি নিয়ে কাজ করার সময় দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য ডালিম মিস্ত্রিদেরকে নিয়ে তার বাড়ি যায় তখন ডালিমের মা শরিফা ঘটনাস্থলে বসে মালামাল পাহাড়া দেয়ার সময় আসামী ইউনুছ ঘটনাস্থলে আসে এবং শরিফাকে জিজ্ঞাসা করে কখন ঘরের ভিটি পাকা করবে। তখন শরিফা বলে টিনের কাজ শেষে ভিটি পাঁকা করবে, তখন ইউনুছ বলে দ্রুত ভিটি পাঁকা করে ফেলেন, যদি টাকা লাগে আমার কাছ থেকে নিবেন।
ডালিম ঘরের কাজ করা অবস্থায় গত ১৫ আগষ্ট ভিটি হতে দুর্গন্ধ পায় এবং কোদাল দিয়ে বালু সরায়ে ভিকটিমের অর্ধপচা লাশ পেয়ে এলাকার লোকজনদের খবর দিলে স্থনীয় লোকজন পুলিশ এর নিকট খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে লাশ মর্গে প্রেরন করে এবং অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা রেকর্ড করে তদন্ত শুরু করে। পরবর্তীতে মামলার তদন্তভার পেয়ে পিবিআই নারায়ণগঞ্জ মামলার তদন্ত শুরু করে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে আসামী ইউনুছকে গত ১০ ডিসেম্বর সিলেটের জৈন্তাপুর থানার বাংলাদেশ ভারতের সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় এক ঘন্টা ব্যাপী এক দু:সাহসিক অভিযান পরিচালনা করে গ্রেফতার করে আসামীকে নিয়ে নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার থানা এলাকায় অভিযান করে যে কোদাল দিয়ে গর্ত করে ভিকটিমের লাশ বালু চাপা দেয়া হয় সেই কোদাল ইউনুসের দেখানো মতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের মোকাবেলায় ইউনুছের পুরাতন বাড়ি থেকে জব্দ করা হয়।
অভিযানকালে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল সেট, সিম, জাতীয়পরিচয়পত্র, গলারহার, কানেরফুল, হাতব্যাগ, ওড়না গোপালদী বাজার গাজীপুরা ব্রীজ থেকে হাড়িদোয়া নদীতে ফেলে দেয় বলে আসামী জানায়, উল্লেখিত স্থানে অভিযান করে উক্ত মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করা হয় কিন্তু সম্ভব হয়নি। ১০ ডিসেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে ঘাতক ইউনুছ। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
Discussion about this post