নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লায় নিখোঁজ হওয়া বাংলা ক্যাট কোম্পানির দুই প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জিসানের লাশ উদ্ধারের একদিন পর লিখন সরকারের লাশও উদ্ধার হয়েছে।
শনিবার (১১ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টায় মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর থানা এলাকায় ধলেশ্বরী নদী থেকে পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে।
এর আগে শুক্রবার একই জেলাধীন ধলেশ্বরী নদী থেকে নিখোঁজের চারদির পর উদ্ধার হয় প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জিসানের লাশ। এদিকে দুই প্রকৌশলীর নিখোঁজের পর নদী থেকে লাশ উদ্ধারের ঘটনার তদন্তে নেমেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নারায়ণগঞ্জ।
মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মো. আনিচুর রহমান গণমাধ্যমে লিখন সরকারের লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, দুপুরে ক্রাউন সিমেন্ট কারখানার কাছাকাছি ধলেশ্বরী নদীর তীরে লাশটি ভেসে উঠলে স্থানীয়রা পুলিশকে জানায়।
পরে মুন্সীগঞ্জ সদর থানা পুলিশ ও নৌ-থানা পুলিশ যৌথভাবে লাশটি উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। খবর পেয়ে নিহত লিখন সরকারের স্বজনরা গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।
তিনি আরো বলেন, সুরতহালে নিহতের শরীরে আঘাতের তেমন কোন চিহ্ন এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। তবে দীর্ঘ ছয়দিন নদীতে থাকার কারণে লাশে পঁচন ধরেছে। স্বজনদের দাবির প্রেক্ষিতে লাশ ময়না তদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে এটি হত্যাকান্ড নাকি দূর্ঘটনা। তিনি জানান, ময়না তদন্ত সম্পন্ন হলে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
এর আগে শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) বেলা এগারোটায় নিখোঁজের পাঁচদিন পর লিখন সরকারের সহকর্মী বাংলা ক্যাট কোম্পানির প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান জিসানের পেট কাটা লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল।
শুক্রবার বেলা এগারোটায় মুন্সীগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান এলাকায় ধলেশ্বরী নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়। পরে মুন্সীগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে জিসানের লাশ শনিবার বিকেল সাড়ে চারটায় তার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। স্বজনরা জানান, লাশ গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানার সুলতানাবাদ এলাকায় নিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
এদিকে নিহত জিসানের স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পরিদর্শক নাসির উদ্দিনের নের্তৃত্বে একটি টীম শনিবার মুন্সীগঞ্জে গিয়ে লাশের সুরতহালসহ পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলেছেন। পাশাপাশি বাংলা ক্যাট কোম্পানির প্রশাসনিক কর্মকর্তা (হড অব সিকিউরিটি এন্ড সেফটি) আশিক মাহমুদ এবং বুড়িগঙ্গা এন্টাপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারি সজীব ও তার কর্মচারী পায়েলের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তদন্তের বিষয়টি স্বীকার করে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক নাসির উদ্দিন বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানতে পেরে আমরা থানা পুলিশের পাশাপাশি স্বপ্রণোদিত হয়েই তদন্ত শুরু করেছি। যেহেতু বিষয়টি স্পর্শকাতর, দুইজন প্রকৌশলী পাঁচ ছয় দিন নিখোঁজ থাকার পর তাদের লাশ উদ্ধার হয়েছে, তাই অমি নিজেই ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ দেখেছি। পারিপার্শ্বিক অবস্থা থতিয়ে দেখেছি।
পিবিআইয়ের এই কর্মকর্তা আরো বলেন, মুন্সীগঞ্জে গিয়ে অমি নিহতদের স্বজনদের সাথে কথা বলেছি। তাদের অভিযোগগুলো গুরুত্ব সহকারে নিয়ে আমরা সব বিষয় পূংখানুপূঙ্খভাবে খতিয়ে দেখছি। কোন আলামত যেন নষ্ট না হয়ে যায় সেই বিষয়টিও আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। পাশাপাশি যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বুড়িগঙ্গা এন্টাপ্রাইজের মালিক সজীব, তার কর্মচারী পায়েল এবং বাংলা ক্যাটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আশিক মাহমুদের সাথেও আমি কথা বলেছি। ভিকটিপ পরিবার যদি মামলা করে আর যদি আমাদেরকে তদন্তভার দেয়া হয় তাহলে আমরা সরাসরি তদন্ত করব। তার আগে থেকেই আমরা সেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। বিষয়টি হত্যাকান্ড কিনা সেটা দুইজনের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। এর আগ পর্যন্ত আমরা নিহত দুইজনের মোবাইল ফোনের কললিস্ট পর্যবেক্ষণ করব। ঘটনার কয়েকদিন আগে থেকে কাদের সাথে তাদের বেশি কথা হয়েছে সেই বিষয়গুলো খতিয়ে দেখব। কারো সাথে শত্রুতা আছে কিনা সেটিও আমাদের তদন্তের পর্যায়ে রয়েছে।
লাশ বুঝে নেয়ার পর জিসানের বড় ভাই মো. শোয়েব আহমেদ জানান, জিসানের লাশ অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়নি। তার দাবি, মরদেহের মুখমন্ডলে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন এবং পেট কাটা ছিল। মুখ এবং পেট দিয়ে রক্তক্ষরণের আলামত দেখা গেছে। তাই এটি হত্যাকান্ড বলে দাবি করে জিসানের বড় ভাই শোয়েব আহমেদ প্রশাসনের কাছে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়েছেন। শোয়েব আহমেদ আরো বলেন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছি। প্রয়োজনে আমরা মামলা করব। যারা আমার বাইকে হত্যা করেছে তাদের দ্রুত গ্রেফতার চাই।
জিসানের মামা শওকত শওকত আল হোসাইন দাবি করেন, নদীতে ডুবে তার মৃত্যু হয়নি। জিসানকে হত্যা করা হয়েছে। যেহেতু তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ক্ষত চিহ্ন পাওয়া গেছে, তাই এটি স্পষ্টভাবে হত্যাকান্ড বলে মনে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমার ভাগিনার লাশ আমরা অক্ষত পাই নি। তিনি বলেন, জিসানের মুখ দিয়ে রক্ত বের হয়েছে, পেট কাটা রয়েছে এবং সেখান দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে। আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করছি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ জানুয়ারি দিনগত রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রাজাপুর এলাকায় বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের ভেকু মেরামতের কাজ শেষ করে ফেরার পথে নিখোঁজ হন বাংলা ক্যাট কোম্পানির দুই মেকানিক্যাল ইনিঞ্জনিয়ার মাহফুজুর রহমান জিসান ও লিখন সরকার। এ ঘটনায় জিসানের স্ত্রী রাকিয়া সুলতানা রাজধানীর আশুলিয়া থানায় বাদি হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। তবে জিসানের পরিবার শুরু থেকেই দাবি করে আসছেন, এ ঘটনার সাথে ফতুল্লার রাজাপুর এলাকার বুড়িগঙ্গা এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারি সজীব ও তার কর্মচারী পায়েলকে দায়ী করে আসছেন। তাদের দাবি, সজীব ও পায়েল ঘটনার বিষয়ে সবকিছু জানেন। কেননা জিসান ও লিখন নিখোঁজের বিষয়টি সজীব একদিন গোপন রেখেছেন এবং তার সাথে যোগাযোগ করলে বিভিন্ন সময়ে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া সজী
Discussion about this post