নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নিউজিল্যান্ডে সন্ত্রাসীর গুলিতে নিহত নারায়ণগঞ্জের ওমর ফারুকের লাশ জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হলেও শোকে বাসছে নারায়ণগঞ্জের বন্দরবাসী । হাজারো এলাকাবাসী ছাড়াও স্থানীয় কাউন্সিলর, জনপ্রতিনিধি, নারায়ণগঞ্জ সিটি কপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী শোকাহত পরিবারের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে শান্তনা দেন ।
পরিবারের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরশেনের মেয়র ডা: সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, ওমর ফারুক নিশ্চিত শহীদের মৃত্যুবরণ করেছে। আমি দোয়া করি আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করবেন। এই ধরনের মৃত্যু আমরা কখনোই আশা করিনি। নিউজিল্যান্ড সরকারের তাৎক্ষণিক ভূমিকার ব্যাপারে সে দেশের সরকারকে ধন্যবাদও জানান আইভী । মেয়র আইভীকে কাছে পেয়ে এলাকাবাসী বন্দর এলাকায় ওমর ফারুকের নামে একটি সড়কের নামকরণ করার দাবী জানালে আইভী গণমাধ্যমকে বলেন, এ ব্যাপারে আমি স্থানীয় কাউন্সিলরের সাথে কথা বলবো। কাউন্সিলর বিষয়টি নিয়ে অফিসিয়ালি প্রস্তাব করবে । তারপর সিটি করপোরশেনের পক্ষ থেকে যথাসাধ্য বিবেচনা করা হবে । নিউজিল্যান্ডের এ ঘটনাকে অনাকাঙ্খিত ঘটনা বলে গণমাধ্যমের কাছে উল্লেখ করেন।
আজ বুধবার সকাল দশটায় বন্দর উপজেলার সিরাজদৌলা মাঠে জানাজা শেষে পৌনে এগারোটায় বন্দর কবরস্থানে তার দাফন সম্পন্ন হয়। ওমর ফারুকের পরিবারের স্বজনরা ছাড়াও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শত শত এলাকাবাসী এতে অংশ নেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে এগারোটায় ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ওমর ফারুকের লাশ এসে পৌঁছায়।
পরে সেখান থেকে পরিবারের স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হলে মধ্য রাতে বন্দর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকায় নিজ বাড়িতে আনা হয়। তখন থেকেই নিকট আত্মীয়-স্বজনরা বাড়িতে আসতে শুরু করেন। সকালে গোসল শেষে ওমর ফারুকের মরদেহ বাড়ির সামনে রাখা হলে এলাকবাসী ও দূর-দূরান্ত থেকে তার বন্ধুবান্ধব এবং স্বজনরা বাড়িতে এসে ভীড় জমান শেষবারের মতো ওমর ফারুকের মুখটি দেখতে। জানাজার আগ মূুহুর্তে কফিনের সামনে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন ওমর ফারুকের মা রহিমা বেগম, তিনমাসের অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী সানজিদা জামান নিহা ও তিন বোনসহ শোকার্ত স্বজনরা। এসময় কান্নাবিজড়িত কন্ঠে ওমর ফারুকের স্বজনরা গণমাধ্যমকে জানান, কেউই আশা করেননি ওমর ফারুক এভাবে লাশ হয়ে বাড়িতে ফিরবে। একমাত্র উপার্জনকারী ওমর ফারুককে হারিয়ে পরিবারের অসহায় অবস্থার কথাও তারা তুলে ধরেন।
নিহত ওমর ফারুকের অন্ত:সত্ত্বা স্ত্রী সানজিদা জাহান নিহা বলেন, আমার স্বামীকে তো আর আমি ফিরে পাবো না। কোনভাবেই তার শূণ্যতা পূরণ হবার নয়। সে ছিল পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে এই পরিবারে আমি, আমার বৃদ্ধা শাশুড়ি এবং অবিবাহিত একটি ননদ নি:স্ব হয়ে গিয়েছি। তিনি বলেন, সরকারের কাছে আমার একটাই দাবী, সরকার যেন আমাদের এই পরিবারটির কথা ভুলে না যায়। এর বেশি আমার আর কিছু বলার নেই।
উল্লেখ্য, গত ১৫ মার্চ শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ আল-নূর মসজিদে জুম্মার নামাজের সময় বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর গুলিতে ৫০ জন নিহত ও ৪৭জন আহত হন। এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশী ছিলেন ৫ জন। এদের মধ্যে একজন নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার রাজবাড়ি এলাকার ওমর ফারুক। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতার জন্য ২০১৫ সালে নিউজিল্যান্ডে পাড়ি জমান বাবাহারা তিন বোনের একমাত্র ভাই ওমর ফারুক। ২০১৭ সালে দেশে এসে বিয়ে করেন একই এলাকায়। গেলো বছরের ১৬ নভেম্বরে আবারো দেশে এসে বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে কিছুদিন কাটিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি ফিরে যান নিউজিল্যান্ডে। এই ছিল পরিবারের সাথে ওমর ফারুকের শেষ দেখা।
Discussion about this post