করোনাকালের এই প্রেক্ষাপটে স্বাস্থ্য মন্ত্রী থেকে শুরু করে সকলেই যখন ত্রাহিত্রাহি অবস্থা, একদিকে প্রতারক সাহেদ ও ডা. সাবরিনা কান্ড নিয়ে তটস্থ স্বাস্থ্য বিভাগের সকলেই তখন অসংখ্য অভিযোগের পরও বাণিজ্যিক জেলা নারায়ণগঞ্জে কেমিস্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির নাম ভাংগিয়ে ব্যাপকভাবে চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে নানা অপরাধের হোতা শাহজাহান খান । শাহজাহান খানের এমন অপকর্মে তোলপাড় সৃষ্টি হলেও চাদাবাজ এই চক্রটিকে থামানো যাচ্ছে না কোন অবস্থাতেই !
নারায়ণগঞ্জ শহর – বন্দরসহ অন্যান্য এলাকার অনেকের দাবী সমিতির নাম ব্যবহার করে শাহজাহান খানের এমন অপকর্মে খুটির জোর কোথায় ?
জানা যায়, ঔষধ ব্যবসায়ীদের স্বার্থে গড়া অন্যতম সংগঠন কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতি। তবে করোনাকালে নারায়ণগঞ্জ শাখা কমিটির কতিপয় নেতাদের অনৈতিক কর্মকান্ডে ক্ষুদে ঔষধ ব্যবসায়ীদের জন্য এখন মরার উপর খড়ার ঘাঁ পরিণত হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, এমআরপি (সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য) বাস্তবায়নের নামে বিভিন্ন ফার্মেসী দোকানীদের থেকে প্রতিনিয়ত বেআইনীভাবে অভিযান পরিচালনার নামে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষাধিক টাকা।
এমনই অভিযোগে অতিষ্ট হয়ে ইতমধ্যে অনেক ভুক্তভোগীরা নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার, জেলা প্রশাসক সহ জেলা ঔষধ প্রসাশন কর্মকর্তা ও বন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছে। তারপরেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে অভিযানের নামে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে নারায়ণগঞ্জ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খাঁন ও তার কতিপয় লোকজন। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তা ছাড়া এমন অভিযান চালানোর কোন অধিবার নেই বলে জানিয়েছে বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকতাগণ।
সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খাঁন এর নেতৃত্বে নারায়ণগঞ্জের চিটাংরোড, কাচপুর এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানেই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসময় বিভিন্ন ফার্মেসী দোকানীকে এমআরপি নামে তাদের কমিশন বানিজ্যের স্বার্থে নির্ধাারিত মূল্য থেকে কিছু কম মূল্যে ঔষধ বিক্রি করার কারণে জেলার প্রশাসনিক কর্মকতাদের মিথ্যা ভয় দেখিয়ে ফার্মেসী বন্ধ করে দেয়ার হুমকী দিয়ে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শাহজাহান গং। ওই সময় কাঁচপুর এলাকার শাহাদাৎ ম্যাডিকেল কর্ণার থেকে ১০ হাজার, বিসমিল্লাহ ফার্মেসী থেকে ৯ হাজার ৫০ এবং চিটাংরোডের আমুলিয়া ফার্মেসী, খাঁন ফার্মেসী, আল সাফা ড্রাগ হাউজ, মনোয়ারা ফার্মেসী, আল আমিন ফার্মেসী, ইনসাফ ফার্মেসী, ফার্মেসী প্লাস, মেডিসিন কর্নার থেকে ৫ হাজার করে ৪০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে শাহজাহান গং।
এমন অনৈতিক কর্মকান্ডের শিকার হওয়া ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, র্সবনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে, ৯ হাজার ৫০ টাকা, কেউ ১০ হাজার, আবার কেউ এরও অধিক টাকা দিতে বাধ্য হয়েছে শাহজাহান খাঁন গং এর কাছে। যাদের একজন ভুক্তভোগী বিসমিল্লাহ ফার্মেসীর মালিক আজিজুল জানান, আমি নিজেও অনেক ধার দেনা করে এই ফার্মেসী চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করে আসছি। আমার এখানে অনেক সময়ই গরীব অসহায় ভিখারীও ঔষধ ক্রয় করতে আসে। এদের কাছে ১০ টাকাও যদি কম রাখি এতে করে তাদের জন্য উপকার হয়। আমরাও তো অনেককে দান করি। সে হিসেবে করোনাকালে আর্থিক সংকট বিবেচনা করে ঔষধের দামটা আমার নিজ ব্যবসা থেকে ভুর্তুকি দিয়ে গরীবদের কম দামে মাঝে মাঝে ঔষধ কিছুটা কম দামে দেই। আর এমন নিছক অযুহাতকে পুজিঁ করে আমাদেরকে এমআরপি বাস্তবায়নের কথা বলে নানা ভয় দেখিয়ে ৯ হাজার ৫০ টাকা নিয়ে গিয়েছে শাহজাহান খাঁন ও তার লোকেরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন ভুক্তভোগী জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সকল দোকানদারকে ১ হাজার টাকা করে প্রতি ফার্মেসী দোকানারকে চাঁদা দিতে বলেছিল নারায়ণগঞ্জ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খাঁন। আর তা দিতে অস্বিকার জানানোর কারণেই অভিনব কৌশলে এই চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। আর তা না হলে প্রশাসন দিয়েও হয়রানী করাবে বলেও হুমকী দিয়েছে শাহজাহান খান।
অন্যদিকে এ বিষয়ে গণমাধ্যমের সাথে নারায়ণগঞ্জ কেমিষ্ট এন্ড ড্রাগিষ্ট সমিতির সভাপতি শাহজাহান খাঁন এর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে সকল অভিযোগ অস্বিকার করে বলেন, আমরা নকলবাজ ঔষধ ব্যবসায়ীদের জন্য অভিযান পরিচালনা করি। তবে এবার অভিযান চালাইনি। নামাজ পড়তে গিয়েছিলাম। নামাজ শেষে একটি দোকানে বসেছিলাম। তাদের সকল অভিযোগ মিথ্যা।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম জানিয়েছেন, এ ধরণের অভিযান কোন সংগঠনের নেতা করতে পারেনা। তারা আমাদের অথবা প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের জানাতে পারে। তবে অভিযান চালিয়ে জরিমানা করে টাকা নেয়াটাও তাদের অধিকার নেই।
এদিকে এ বিষয়ে জেলা পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলমের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে জানান, যেহেতু অসংখ্যক অভিযোগ আমাদের কাছে জমা থাকে তাই আমরা অনেক অভিযোগই দ্রুত আমলে নিতে পারিনা। তবে কোন ভুক্তভোগী যদি থানায় অভিযোগ করে অবশ্যই থানা পুলিশ এ বিষয়ে কার্যকরি ব্যবস্থা নিবে। অবশ্যই এ জেলায় আমরা কোন অনিয়ম কিংবা দূর্ণিতি হলে কঠোর হস্তে দমন করবো।
Discussion about this post