নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
কোন অবস্থাতেই থামছে না পরিবহণ সেক্টরের নৈরাজ্য । বৈধতা না থাকলেও নারায়ণগঞ্জে সকল গণপরিবহণ চলছে ফিল্মী ষ্টাইলে। নারায়ণগঞ্জের পরিবহণের নানা দূর্ণীতি, লুটপাট, ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নাম করে প্রতিদিন জিপির নামে সকল পরিবহণ থেকে বিশাল চাঁদা আদায় হচ্ছে জেলা পুলিশের নাম করে । এই জিপির চাাঁদার টাকায় জেলা পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট প্রায় সকল আইনশৃংখলা বাহিনীকে ম্যানেজ করায় নারায়ণগঞ্জের প্রায় সকল গণপরিবহণ কোন ধরণের আইন না মেনে বছরের পর বছর যাবৎ চালিয়ে যাচ্ছে লুটপাট ।
নারায়ণগঞ্জ থেকে চলাচলরত ঢাকাগামী সকল পরিবহণে একেকজন গঢফাদার প্রতিদিন বিশাল চাঁদা আদায় করে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে অবৈধ পন্থায় চালিয়ে যাচ্ছে সেবার নামে লুটপাটের মহাযজ্ঞ ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন পরিবহণ মালিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা পরিবহণ ব্যবসা করতে এসে কি পরিমাণ ভোগান্তিতে আছি তা প্রত্যেক পরিবহণ মালিক হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন । প্রতিটি পরিবহণ মালিক ব্যংকের মাধ্যমে অথবা সূদে টাকা এনে একটি পরিবহণ কিনে লাইনে দেয়া থেকে শুরু করে প্রতিদিনই গুণতে হচ্ছে বাড়তি টাকা । ঠিক মতো সংসার চালানোর টাকাও নেয়া যায় না এই ব্যবসা করে । নানা অজুহাতে টাকা নিয়ে প্রতিটি পরিবহণ মালিক নিঃস্ব হয়ে পরেছে । যেমন বন্ধন, উৎসব, আনন্দ পরিবহণ থেকে প্রতিদিন নানা অজুহাতে নিচ্ছে টাকা । শহরের চাষাড়া থেকে অবৈধভাবে পরিচালিত মুন্সীগঞ্জগামী ৪৫টি লেগুনা থেকে জিপি নামক চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে ২৬০ টাকা করে, সিদ্ধিরগঞ্জগামী ৪০টি লেগুনা থেকে ২৫০ টাকা, লিংক রোড়ের লেগুনা থেকে ২২০ টাকা, হিমাচল পরিবহণে প্রতিদিন প্রতিটি গাড়ী থেকে ১৮৩০ টাকা করে জিপি নামক চাঁদা দিতে বাধ্য হচ্ছে পরিবহণ মালিকরা। ৪০/৪২ টি হিমাচল থেকে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হচ্ছে ৭০/৭৫ হাজার টাকা । শুধু মাত্র হিমাচল থেকেই প্রতিমাসে ২০/২৫ রাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চাঁদাবাজচক্র। প্রতিদিন বিশাল টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে প্রকাশ্যেই । যা দেখে, জেনে শুনে চোখ বন্ধ করে বরখেছে নারায়ণগঞ্জের প্রশাসন ।
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতাদের পাশাপাশি জিপির নামে এমন চাঁদাবাজির একটি বিশাল অংক জেলা পুলিশের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা হাতিয়ে নিচ্ছে বছরের পর বছর জুড়ে । শুধুমাত্র পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তার কারণে নারায়ণগঞ্জের কোন পরিবহণ সঠিক আইন মেনে চলে না বলেও জানায় কয়েকজন পরিবহণ ব্যবসায়ী । পুলিশকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিলে অবৈধ পন্থায় চলাচলরত পরিবহণের মাসোয়ারা দিলেই কোন আইন লাগে না পরিবহণ ব্যবসা করতে । শুধুমাত্র বাই সাইকেল ছাড়া আর সকল পরিবহণ থেকে বিশাল অংকের চাঁদা দিলেই সকল অবৈধ পরিবহণ যেন বৈধ হয়ে যায় । নইলে একটি রিক্সাও বাদ যাবে না । প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত সদর উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ২০/৩০/৪০টি অটো/ব্যাটারী চালিত রিক্সা ও সিএনজি আটক করে । আটকের পর কন্সষ্টেবল /এটিএসআইদের মাধ্যমে শুরু হয় ১/ ২ আবার কখনো কখনো ৫ হাজার টাকার বিনিময়ে গাড়ী ছাড়ানোর হিড়িক। প্রতিদিন নিম্নে বিশাল চাঁদাবাজি ছাড়াও ৫০ হাজার টাকা পুলিশের পকেটে না আসা পর্যন্ত অবৈধভাবে চলাচলের অভিযোগ এনে আটকের পর শুরু হয় বেচাকেন । এ যেন বেচাকেনার এক বিশাল হাট বাজার ।
অপরদিকে এক সময়ের পাত্তি মিস্ত্রি দিদার, লোকমান ও সোহেল লেগুণা, সিএনজিসহ সকল অবৈধভাবে চলাচলরত পরিবহণ থেকে বিশাল চাদাবাজি করে বর্তমানে বিশাল ধন সম্পদের মালক । এই পাত্তি মিস্ত্রি দিদার নিজেকে স্থানীয় সংসদ সদস্যদের নাম ব্যবহার করে পরিবহণ মালিক/ ড্রাইভারদেরকে নানাভাবে হুমকিও দেয় ।
এ ছাড়াও অতিরিক্ত ভাড়া আদায়সহ ফিটনেস বিহীন ও অদক্ষ চালক দিয়ে নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহন গুলো চলছে কোন ধরণের বাধা ছাড়াই । আর অদক্ষ চালক হওয়ায় প্রতিদিনই ঘটছে দূর্ঘটনা। পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে গণপরিবহণে হয়রানি বেড়েই চলেছে। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, এই নৈরাজ্য এখন আর কমার অবস্থায় নেই । বরং প্রতিনিয়তঃ যেন নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে । কারণ হিসেবে অনেকেই বলেছেন, প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়মিত মাসোয়ারা পেলে কে কার কথা চিন্তা করে । আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অসাধু সদস্যরা চায় মাসোয়ারা । আর এই মাসোয়ারা ই জনগণের বিপরীতে কাজ করে প্রশাসন।
জানা গেছে, এখন রাজনৈতিক নেতাদের কব্জায় পরিবহন খাত। অর্থাৎ পরিবহনে প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্য দিন দিন বাড়ছে । এ খাতে চলমান নৈরাজ্যের নেপথ্যে অনেকাংশেই রাজনৈতিক প্রভাবকেই দায়ী করে নানাভাবে অনেকই অভিযোগ তুললেও নানা হুমকি ধমকির কারণে কেউ মুখ খুলতে সাহস করে না । স্থানীয় এমপিসহ ক্ষমতাসীন দলের নেতা, চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর ও তাদের পরিবারের সদস্যদের মালিকানায় বেশিরভাগ পরিবহন রয়েছে বলেও দাবী করে সাধারণ ব্যবসায়ীরা । এমন জোড়ালো অভিযোগের অড়িও ভিডিও বেকর্ড রয়েছে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর দপ্তরে ।
গণপরিবহনের আরো এক ব্যবসায়ীর সাথে আলাপকালে নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা যে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে তা তুলনামূল অনেক বেশি । কিন্তু বিভিন্ন সেক্টরে চাঁদা দেয়াসহ ক্ষমতাসীনদের দখলে পরিবহন সেক্টর থাকায় তারা যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে। আর এব্যাপারে যাত্রী লাঞ্ছিত হওয়ার ভয়ে প্রতিবাদ করছে না।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে আরো জানা গেছে, বন্ধন, উৎসব ও বন্ধু পরিবহনে প্রায় ৫০ শতাংশ যথাযথ কাগজ-পত্র ছাড়াই সড়কে চলাচল করছে। আর অদক্ষ চালকের হাতেই চলছে আনন্দ পরিবহন। এর ফলে নারায়ণগঞ্জে আনন্দ পরিবহনে সবচেয়ে বেশি দূর্ঘটনা ঘটেছে। ১৫ মার্চ হস্পতিবারও ফতুল্লার পাগলায় আনন্দ পরিবহনের ঢাকাগামী একটি বাস (ঢাকা মেট্টো -১১-৪০৬২) একটি অটো রিকশাকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই অটো রিকশার চালক কামাল (৩৫) নিহত হন। দূর্ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা গাড়িটি ভাংচুর করে এর চালক রবিউল আউয়ালকে গণধোলই দিয়ে পুলিশে সোর্পদ করে।
এর আগেই আনন্দ পরিবহনের চাপায় অসংখ্য প্রানহানীর ঘটনা ঘটেছে। এদিকে, ফিটনেস ছাড়াই চলছে বাধন, দূরন্ত ও শীতলক্ষা পরিবহন। ফিটনেস না থাকলেও দাপটের সাথে চলছে এই পরিবহনগুলো। আর এসি বাস সার্ভিস শীতল পরিবহনের শ্রমিকারাও আইনকে তোয়াক্কা না করে ইচ্ছে মত সড়কে চলাচল করছে। অন্যান্য পরিবহনের চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে শীতল পরিবহন। যেখানে বিআরটিসর এসি বাসের তুলনা ভাড়া অনেক বেশি আদায় করা হচ্ছে। আর হিমাচল পরিচনেও যাত্রী ভোগান্তির অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও নতুন করে সড়কে চাষাড়া টু মুক্তরপুর, চিটাগাং রোড ও সাইনবোর্ডে চালু হয়েছে লেগুনা হিসেবে পরিচিত পরিবহনগুলো। আর এই পরিবহনগুলো অবৈধ স্ট্যান্ড ও পাকিংয়ের কারণে শহরে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অদক্ষ চালক ও শিশুরা চালকের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে।
নারায়ণগঞ্জ পরিবহণ সেক্টরের এমন নৈরাজ্যের বিষয়ে জানতে, জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার ডিআই টু সাজ্জাদ রুমন বিস্তারিত তথ্য জানার পর নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, এমন বিশাল অভিযোগ অবশ্যই পুলিশের পক্ষ থেকে খতিয়ে দেখা হবে ।
Discussion about this post