নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট :
নিতাইগঞ্জে লবন ব্যবসার অন্তরালে নারায়ণগঞ্জ শহরের সূতারপাড়া এলাকার পরেশ চন্দ্র সাহার ছেলে লাভলু সাহা ওরফে প্রলয় কুমার সাহা (৫৯) ও শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার শিদলপুরা এলাকার হাশেম সওদাগরের ছেলে মো. বিলাল হোসেন প্রকাশ কাদের (২৮)। প্রথমে ১শ পিছ স্বর্ণের বারসহ আটক করা হয় দুজনকে । তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পৃথক অভিযান চালিয়ে আরো ৬০০ পিস স্বর্ণের বারসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে জোরারগঞ্জ থানা পুলিশ।
উদ্ধার হওয়া স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৩২ কোটি টাকা । এতো বড় স্বর্ণ চোরাকারবারীর সাথে জড়িত নারায়ণগঞ্জ শহরের নিতাইগঞ্জ সূতারপাড়ার বাসায় খোজ নিতে গেলে স্বর্ণসহ গ্রেফতার হওয়া লাভলু সাহার বড় ভাই পরিতোষ সাহা ও তার পরিবারের সকলেই স্বীকার করে তারা লবণের ব্যবসার সাথে জড়তে । চট্টগ্রাম থেকে লবন পাইকারী এনে নারায়ণগঞ্জে সরবরাহ করে লাভলুসহ একটি সিন্ডিকেট । কোন দিন লাভলু সাহা এই ব্যবসা করেছে বলে তাদের জানা নাই বলে জানান।
এমন শীর্ষ স্বর্ণ চোরাকারবারীর ঘটনায় তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে নারায়ণগঞ্জসহ সর্বত্র ।
জানা যায়, চট্টগ্রামে দুই ঘণ্টার ব্যবধানে পৃথক দুটি ঘটনায় ৭শ’ স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এসব স্বর্ণের বাজার দর প্রায় কোটি টাকা। এ ঘটনায় মোট চারজনকে আটক করা রয়েছে। তবে বারগুলো কোন জায়গা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বা কারা এনেছে, সেই ব্যাপারে আসামিদের সন্দেহজনক বক্তব্যের কারণে পুলিশ এখনো সুনির্দিষ্ট কিছু বলতে পারছে না।
আটককৃতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ সদরের নিতাইগঞ্জ গ্রামের মৃত পরেশ চন্দ্র সাহার ছেলে প্রলয় কুমার সাহা (৫৯), শরীয়তপুর জেলার ডামুডা থানার ছোট শিদলপুরা গ্রামের হাশেম সওদাগরের ছেলে বিলাল হোসেন প্রকাশ কাদের, চুয়াডাঙা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার দর্শনা পৌরসভার আজমপুর গ্রামের মৃত শহীদুল ইসলামের ছেলে রাকিব (৩৪) এবং একই এলাকার মোবারক পাড়া গ্রামের আলী হোসেনের ছেলে করিম খান কালু (৩৪)।
গতকাল রোববার বেলা ১১টায় নগরীর সিআরবি এলাকায় একটি প্রাইভেট কারে তল্লাশি চালিয়ে ১শ’ পিস স্বর্ণের বারসহ দুইজনকে আটক করে ডিবি পুলিশ। এ স্বর্ণ উদ্ধারের দুই ঘণ্টার মাথায় দুপুর ১ টা নাগাদ মীরসরাইয়ে জোরারগঞ্জ থানাধীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সোনাপাহাড় এলাকায় একটি পাজেরো গাড়ি থেকে আরও ৬শ’ পিস সোনার বার উদ্ধার করা হয়। এ সময় দুইজনকে আটক করা রয়েছে।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. মশিউদ্দৌলা রেজা জানান, গোপন খবরের ভিত্তিতে ঢাকামুখী একটি পাজেরো মিতসুবিসি (চট্টমেট্টো-ঘ-১৮-২১৪৪) গাড়ি আটক করা হয়। পরে ওই গাড়ি তল্লাশি চালিয়ে তেলের ট্যাংকির পাশে বিশেষ ব্যবস্থায় লুকানো ৬০টি প্যাকেট উদ্ধার করা হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে ১০টি করে মোট ৬শ’টি স্বর্ণের বার পাওয়া গেছে। এ সব স্বর্ণের আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ২৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা।
এক প্রশ্নের জবাবে জোরারগঞ্জ থানার ওসি ইফতেখার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আটক দুই ব্যক্তি নিজেদের ড্রাইভার ও ক্যারিয়ার (বহনকারী) হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। তাদের কথাবার্তা সন্দেহজনক মনে হয়েছে। আসলে তারা ব্যবসায়ী। এছাড়া চুয়াডাঙাতে খবর নিয়ে জেনেছি যে ফরিদ নামে তাদের একজনের নামে এর আগেও একটি চোরাচালানের মামলা রয়েছে। এছাড়া ওই অঞ্চলটিতে প্রায় সময়ই সোনা উদ্ধারের ঘটনা ঘটে।
এদিকে এ ঘটনার আগে বেলা ১১ টায় নগরীর সিআরবি এলাকা থেকে একটি প্রাইভেট কার তল্লাশি চালিয়ে আরও ১শ’ পিস স্বর্ণের বার উদ্ধারের পাশাপাশি দু’জনকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশ।
মীরসরাইয়ে উদ্ধারকৃত সোনার বারের ব্যাপারে আসামিরা পুলিশকে জানায়- তারা রেলস্টেশনের সামনে থেকে বারগুলো এনেছে। তবে সিআরবিতে উদ্ধারকৃত সোনার বারগুলো বদরশাহ মাজার এলাকা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে বলে ওই ঘটনায় আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান।
এ দুটি উদ্ধার ঘটনার সাথে কোনো যোগসাজস রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে গণমাধ্যমকে জানান নগর গোয়েন্দা পুলিশের বন্দর জোনের উপ কমিশনার এস এম মোস্তাইন হোসেন।
এর আগে উদ্ধার কার্যক্রমের বিষয়ে লালদীঘিতে ডিবি পুলিশের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, কোতোয়ালী থানাধীন সিআরবি এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে ১০০ পিস স্বর্ণের বার, ১টি প্রাইভেটকার সহ দুইজন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা (বন্দর) বিভাগ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটককৃতরা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম থেকে সোনার বার নারায়াণগঞ্জ এলাকায় পাচার করে বলে পুলিশের কাছে জানায়। উদ্ধারকৃত সোনার বারের ওজন ১১ কেজি ৬৬২ গ্রাম। এর বাজার মূল্য ৪ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।
ডিসি এসএম মোস্তাইন বলেন, দু’জনের মধ্যে একজন চালক, অন্যজন বহনকারী হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে।
শীঘ্রই এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান তিনি। তবে বিমান ও স্থল পথের যেকোন একটি দিয়ে এসব সোনা চট্টগ্রামে এসেছে বলে ধারণা করছেন তারা।
পতেঙ্গা থানার ওসি উৎপল বড়ুয়া গণমাধ্যমে বলেন, গত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে দুইটি স্বর্ণের চালান উদ্ধারের ঘটনায় মামলা হয়েছে। এবং আসামীদের জিজ্ঞাসাবোদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে ।
Discussion about this post