করোনাভাইরাসে ঝুঁকিপূর্ণ জেলা নারায়ণগঞ্জে সন্দেহভাজন আক্রান্ত লোকজনের নমুনা সংগ্রহে হিমশিম খাচ্ছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। সরকারি দুটি হাসপাতালের মাত্র দুজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট দিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে হচ্ছে ।
এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইমতিয়াজ ও জেলা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ জাহিদ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ।
করোনা আক্রান্তের প্রদুর্ভাবের শুরু থেকে নারায়ণগঞ্জের সর্বস্তরের জনসাধারণ এবং সুধী সমাজের অনেকের পাশাপাশি সকল রাজনৈতিক দলেন নেতারা দাবী তুলেছিলেন, গুরুত্বপূর্ণ এই জেলায় করোনা আক্রান্তদের জন্য অত্যন্ত একটি ল্যাব তৈরী করা হউক । দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেওএমন দাবীর কোন কর্ণপাত করে নাই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সহ শীর্ষকর্মকর্তাদের কেউ ।
দেশের অন্যান্য জেলার চাইতে সরকারের রাজস্ব আহরণে এবং গণ বসতির দিক দিয়ে নারায়ণগঞ্জের অবস্থান শীর্ষে থাকার পরও শুধু মাত্র নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে এখনো পর্যন্ত এই জেলা অবহেলিত রয়েছে বলে সমালোচনা করেছেন অনেকেই ।
এমন অবহেলার বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জ দেশের অর্থনীতিতে মূখ্য ভূমিকা পালন করে এটা সর্বজন স্বীকৃত । এরপরও কেন নারায়ণগঞ্জে করোনা নিয়ে কোন ল্যাব হচ্ছে না এমন প্রশ্নে এককথায় তিনি বলেন , নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক দ্বন্ধের কারণে । শাসক দলের এক নেতা বলেন , ল্যাব করতে হবে আর আরেক নেতা বলেন নব নিমিত কোর্ট ভবনে তৈরী করতে হবে ল্যাব । এ নিয়ে শুরু হয়েছে রশি টানাটানি । এমন অনেক অপরাজনীতি রয়েছে নারায়ণগঞ্জের শাসক দলেন নেতাদের মধ্যে । বাদ দেন সব নেতাদের । সকলে মিলিত হয়ে দেশের সকল পত্র পতিকায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশের ব্যবস্থা করলে হয়তো সরকারের টনক নঢ়বে । নইলে নেতাদের স্বার্থ নিয়ে নেতারা কাজ করবেন । জনসাধরণের গলায় ঝুলে থকাবে ঘন্টা । এভাবেই সরল ভঙ্গিতে তীব্র সমালোচনা করেন এই কর্মকর্তা ।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় শহর ও সিটি এলাকায় নমুনা সংগ্রহের জন্য শহরের খানপুরে অবস্থিত ৩০০ শয্যার নারায়ণগঞ্জ হাসপাতালে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও একজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট এবং শহরের মণ্ডলপাড়ায় অবস্থিত ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের একজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও একটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে ।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মাধ্যমে শতাধিক জনের বেশি নমুনা সংগ্রহ করে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া আইইডিসিআর নিজ উদ্যোগেও অনেকের নমুনা সংগ্রহ করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমেও নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হচ্ছে আইইডিসিআরে। তবে জেলা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে নারায়ণগঞ্জে জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবি জানানো হচ্ছে। গত বুধবার ৪৬টি রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন পরীক্ষাগার স্থাপনের দাবি জানিয়ে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, দেশে করোনাভাইরাসের ঝুঁকিপূর্ণ জেলা হিসেবে নারায়ণগঞ্জের নাম ঘোষণা করেছে আইইডিসিআর। বেশি ঝুঁকিপূর্ণ সিটি এলাকা। তাই এই মুহূর্তে সন্দেহভাজন রোগীদের আরও বেশি পরীক্ষা করা প্রয়োজন। পরীক্ষার জন্য বেশি বেশি নমুনা সংগ্রহ করা প্রয়োজন। কিন্তু মাত্র দুজন ল্যাব টেকনোলজিস্ট ও দুটি অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে গিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তাঁরা ।
ওই কর্মকর্তা বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি এখন জাতীয় দুর্যোগ । এই পরিস্থিতিতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোকে এগিয়ে আসা প্রয়োজন । বিশেষ করে বেসরকারি ক্লিনিক-হাসপাতালগুলো থেকে তাদের ল্যাব টেকনোলজিস্ট দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে সহায়তা করলে আরও অনেক বেশি পরীক্ষা করা সম্ভব হতো। কারণ রোগীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করা প্রয়োজন । না হলে আক্রান্ত রোগী থেকে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে।
এমন জোড়ালো আবেদনের পর নারায়ণগঞ্জে করোনা পরিস্থিতিকে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথেই দেখছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। একই সঙ্গে জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজও জেলায় ল্যাব স্থাপনের গুরুত্বটি স্বাস্থ্য মন্ত্রী এবং স্বাস্থ্য বিভাগের ডিজিকে জানান। এরপরই জেলায় করোনাভাইরাসের ল্যাব স্থাপনের বিষয়টি গুরুত্বের সেঙ্গ নেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও ল্যাব স্থাপনের বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নজরে এনেছিলেন।
Discussion about this post