অনলাইন ডেক্স :
সামান্য একজন স্টেনোগ্রাফার । তার দেশে বিদেশে কোটি কোটি সম্পদ নিয়ে তোলপােড় উঠেছে সর্বত্র। দূদক স্টেনোগ্রাফার আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করলে নারায়ণগঞ্জের অনেক রাঘববোয়াল আছেন যাদের বিরুদ্ধে আজো কোন ব্যবস্তা নেয়া হয় নাই । নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য খাতের দূর্ণীতি নিয়ে হাজারো প্রতিবাদ, অভিযোগ উত্থাপিত হলেও ক্ষমতাসীনদের দাপটে আজো লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছেেএকটি চিহ্নিত চক্র। যাদের টিকিটিও স্পর্শ করতে পারে না কেউ ।
ফলে নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য বিভাগের লাগামহীন দূর্ণীতি দিন দিনে দিনে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । স্বাস্থ্য খাতের এমন এক দূর্ণীতিবাজ স্টোনোগ্রাফারের চিত্র দেয়া হলো : (যা দৈনিক ডেইলী স্টার থেকে নেয়া) । স্বাস্থ্য বিভাগের এমন দূর্ণীতি রোধ করতে নারায়ণগঞ্জের সকল প্রশাসনের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দাবী উঠেছে ভুক্তভোগিদের কাছ থেকে । ভূক্তভোগিদের দাবী বিগত সময়ের মতো নারায়ণগঞ্জের সরকারী হাসপাতালগুলোতে দূদকের কঠোর অভিযান চালালে নিয়ন্ত্রণ হতো জেলার চিকিৎসা খাতের নানা লুটপাট ।
মাসিক বেতন মাত্র ২৪ হাজার টাকা হলেও তিনি কয়েক মিলিয়ন ডলার ব্যয় করে অস্ট্রেলিয়ার সিডনীতে বিলাসবহুল একটি বাড়ি কিনেছেন। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সূত্র মতে, তার স্ত্রী ২০ হাজার টাকার মতো মাসিক বেতন পেয়ে, রাজধানী ঢাকায় বেশ কয়েকটি ভবনের মালিক।
নাম তার আফজাল হোসেন। তিনি স্বাস্থ্য অধিদফতরের (ডিজিএইচএস) অধীনে স্বাস্থ্য প্রযুক্তি ইন্সটিটিউটের প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তার স্ত্রী রুবিনা খানম ডিজিএইচএস’র অধীনে মেডিকেল শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়নের একজন স্টেনোগ্রাফার।
দুদকের কাছে জমা দেওয়া সম্পদের বিবরণীতে এই দম্পতি জানিয়েছেন যে তাদের ১২ কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে।
১৯৯৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অধীনে একটি প্রকল্পের অফিস সহকারী হিসেবে যোগ দিয়ে আফজাল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে নিয়েছেন। আর এভাবেই নিজের ভাই, শালাসহ অন্তত সাতজন নিকট আত্মীয়কে মন্ত্রণালয়ের চাকরী পাইয়ে দিয়েছেন তিনি।
গতকাল (১০ জানুয়ারি) আফজালকে তার সম্পদ সম্পর্কে পাঁচ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, “স্বাস্থ্যসেবা অধিদফতরের উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতায় ওই সিন্ডিকেটটি প্রায় কয়েকশ’ কোটি টাকা লুট করে নিয়েছে।”
সূত্র বলছে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের একাধিক পরিচালক এই সিন্ডিকেটের সদস্য।
দুদক গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ও মো. আব্দুর রশিদ এবং সহকারী পরিচালক মো. আনিসুর রহমানকে আগামী ১৪ জানুয়ারির আগে তাদের সম্পদ বিবরণী দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছে।
দুদকের নোটিশে বলা হয়েছে, জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের ব্যাপারে তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
গতকাল দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে আফজাল জানান, তিনি দুই মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে সিডনীর বাড়িটি কিনেছেন।
এদিকে, দুদকের উপপরিচালক ও চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্তকারী দলের প্রধান সামছুল আলম বলেছেন, এই খাতে ব্যয়ের পরিমাণটি সম্ভবত আরও বেশি হয়েছে।
দ্য ডেইলি স্টারকে সামছুল আলম বলেন, “বাড়ি কেনার জন্য অজ্ঞাত উপায়ে বাংলাদেশে থেকে অস্ট্রেলিয়ায় টাকা পাঠিয়েছেন আফজাল।” এছাড়াও, একইভাবে তিনি মালয়েশিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রেও প্রায় কয়েকশ’ কোটি টাকা পাঁচার করেছেন, যোগ করেন তিনি।
সূত্র জানায়, আফজাল চিকিৎসার উদ্দেশ্যে অন্তত পাঁচবার সিঙ্গাপুর এবং পরিবারের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকবার অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েছেন। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে বেশ কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়ায় থেকে পড়াশুনা করেছে। বর্তমানে তারা বাংলাদেশে বসবাস করছে।
‘রহমান ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি ‘চুক্তিকারক’ ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেছেন আফজাল এবং স্ত্রী রুবিনাকে এর স্বত্বাধিকারী বানিয়েছেন।
দুদকের কর্মকর্তা বলেন, “এই ফার্মটি সরকারি হাসপাতাল ও ইন্সস্টিটিউশনগুলোর জন্য অস্ত্রোপচার সামগ্রী সরবরাহ করে থাকে। এর মাধ্যমে এই দম্পতি জনগণের অর্থ লুটে নিচ্ছে।”
আফজালের সম্পদের খোঁজ নিতে গিয়ে দুদকের তদন্তকারী দল দেখেছে যে, রাজধানীর উত্তরায় এই দম্পতির চারটি পাঁচতলা বিল্ডিং এবং একটি প্লট রয়েছে। এছাড়াও ঢাকা ও ফরিদপুরে বিভিন্ন জায়গায় তাদের এরকম আরও বেশ কিছু প্লট ও বাড়ি রয়েছে।
গতকাল আফজাল জানিয়েছেন যে, তার একটি ‘স্পোর্টস কার’ও রয়েছে।
দুদক সম্প্রতি পুলিশের বিশেষ শাখার সুপারের কাছে একটি চিঠি দিয়ে এই দম্পতির বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে বলেছে।
এর আগে, ২০১২ সালেও আফজালের সম্পদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুদক সমন জারি করলেও, তিনি সে সময় উপস্থিত হননি।
দুদকের উপপরিচালক সামছুল আলম বলেছেন, আফজাল কেন ওই সময় উপস্থিত হননি তা তিনি জানেন না, কারণ তখন তিনি তদন্তকারী দলের দায়িত্বে ছিলেন না।
সূত্র বলছে, ওই সময় কোনো একটি উপায়ে আফজাল ওই জিজ্ঞাসাবাদের ব্যাপারটি স্থগিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
তবে, ২০১২ সালে দুদকের তদন্তকারী দলের দায়িত্বে কারা ছিলেন এবং কেনোই বা জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি স্থগিত হয়ে যায়, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার।
তাছাড়া, আফজালের ফোন বন্ধ থাকায় এসব ব্যাপারে তার মন্তব্যও পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য নারায়ণগঞ্জ জেলা শহরের দুটি প্রধান হাসপাতালকে কেন্দ্র করে শহরের একটি চিহ্নিত চক্র বছরের পর বছর যাবৎ বিরামহীনভাবে লুটপাটের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছে নানা পন্থায় । যা দেখার যেন কেউ নাই । সকল সংস্থাই ম্যানেজের ভুমিকা গ্রহণ করেছে । যার কারণে সাধারণ মানুষ চিকিৎসা নিতে গিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে হয়রানীর শিকার হচ্ছে ।
Discussion about this post