করোনা ভাইরাসের নারায়ণগঞ্জে প্রথম আক্রান্ত ব্যক্তির শনাক্ত হবার পর সারাদেশে তোলপাড়ের সৃষ্টি হলে করোনা আক্রান্তদের পরীক্ষার জোড়ালো দাবী উঠে নারায়ণগঞ্জে । জেলা সদরে দুটি সরকারী হাসপাতালে করোনা রোগিদের কোন পরীক্ষার ব্যবস্থা না থাকার সুযোগে জেকেজি নামক একটি এনজিও সংস্থা এগিয়ে এসে শাসক দলের নেতাদের শেল্টারে নারায়ণগঞ্জে হাই স্কুল ও সিদ্ধিরগঞ্জে শুরু করে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের কাজ । সেই জেকেজির প্রতারণার কর্মকান্ড এবার ফাঁস করলো নারায়ণগঞ্জের সাবেক পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদ ।
শাসক দলের কয়েকজন নেতা প্রতারক হিসেবে গ্রেফতার হওয়া জেকেজি নামক এনজিও কর্মকর্তাদের নিয়ে নারায়ণগঞ্জে ব্যপক দৌড়ঝাঁপ চালাতেও দেখা গেছে।
প্রতিদিনই করোনা সংগ্রহ নিয়ে নারায়ণগঞ্জে নানা অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছিল জেকেজি হেলথ কেয়ারের বিরুদ্ধে । জেলা সির্ভিল সার্জন অফিস থেকে জানতে চাওয়া হয়ে ছিল উত্তর। সংগঠনটির কোন মতামত না পাওয়ায় করোনা রোগীদের নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভাবে স্থগিত করেছে স্বাস্থ্য বিভাগ ।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) নারায়ণগঞ্জ সির্ভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বন্ধের নিদের্শ দেন।
চিঠিতে উল্লেখ করেন, নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে ও এম ডব্লিউ স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে নমুনা সংগ্রহের কাজ পরিচালনা করছেন কারা তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোন প্রকার উত্তর পাওয়া যায়নি। তাই পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত জেকেজি হেলথ কেয়ারের সন্দেহ জনক করোনা আক্রান্তদের প্রকার নমুনা সংগ্রহের কার্যক্রম সম্পূর্ণ ভাবে স্থগিত করা হয়েছে ।
এদিকে, ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও অঞ্চল মঙ্গলবার জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরীসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে, অন্তত ৩৭ জনকে ভুয়া ফল দেওয়ার বিষয়টি তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচটি ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ এবং করোনার নমুনা সংগ্রহের তিন হাজার কিট জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রসঙ্গত, গত ১৫ এপ্রিল করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের জন্য শহরের কালির বাজার এলাকায় নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুলে এবং সিদ্ধিরগঞ্জে এম ডব্লিউ স্কুলে দুইটি সেন্টারে ছয়টি বুথ চালু করা হয়েছিল।
জানা যায়, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) থেকে বিনামূল্যে করোনার নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেয়েছিল জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্য সেবার (জেকেজি হেলথকেয়ার)। নারায়ণগঞ্জে শহরের হাই স্কুল ও সিদ্ধিরগঞ্জসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বুথ বসিয়ে নমুনা সংগ্রহের অনুমতি পেলেও প্রতিষ্ঠানটির কাছে গুরুত্ব পেয়েছে বাসায় গিয়ে করোনা ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করা।এর বিনিময়ে নেওয়া হতো সর্বনিম্ন পাঁচ হাজার থেকে সর্বোচ্চ আট হাজার ছয়শ টাকা। সংগৃহিত সেই নমুনার কোনো পরীক্ষা ছাড়াই একদিন পরে রিপোর্ট দেওয়া হতো।
মঙ্গলবার (২৩ জুন) রাজধানীর গুলশান থানাধীন শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ার জেকেজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরিফুল চৌধুরী (৪০) সহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ বলছে অন্তত ৩৭ জনকে ভুয়া ফল দেওয়ার বিষয়টি তারা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। অধিকতর তদন্তের জন্য পাঁচটি ল্যাপটপ, দুটি ডেস্কটপ এবং করোনার নমুনা সংগ্রহের তিন হাজার কিট জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গ্রেপ্তার বাকি চারজন হলেন, হুমায়ুন কবীর ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারি এবং সাঈদ চৌধুরী (৪৭) ও বিপ্লব দাস (২৫)। এর মধ্যে হুমায়ুন ও তানজীনা এক সময় জেকেজিতে কর্মরত ছিলেন। এখন তারা নিজেরাই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা ছাড়াই ফল দেন। বাকি দুজন এখনো জেকেজিতে কর্মরত আছেন।
এ প্রসঙ্গে তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন অর রশীদ বলেন, একজন ভূক্তভোগী তাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে এসেছিলেন। জানিয়েছিলেন তার বাসায় হিয়ে নমুনা নিয়ে আসা হয়েছে। এরপর একদিনের মধ্যেই ফল দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তার দেহে করোনা শনাক্ত হয়েনি। পরবর্তীতে অন্য জায়গায় পরীক্ষা করে দেখেছেন তার করোনা শনাক্ত হয়েছে। এমন অভিযোগের পর তারা তদন্ত করতে গিয়ে প্রথমে হুমায়ুন্ কবীর ও তার স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেন। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জেকেজির সিইওসহ বাকি দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আইইডিসিআর এর অনুমতি সাপেক্ষে জেকেজি বিনামূল্য নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করেছিলো। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন তিন শ থেকে সাড়ে তিন শজনের নমুনা সংগ্রহ করতো জেকেজি। শর্ত ছিলো, সরকার নির্ধারিত করোনা শনাক্তকরণ ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে। জেকেজি হেলথকেয়ার, ওভাল গ্রুপের একটি অঙ্গসংগঠন।
তেজগাঁও অঞ্চলের সহকারী কমিশনার মো. মাহমুদ বলেন, বিনামূল্যে কার্যক্রম শুরু করলেও এক পর্যায়ে জেকেজি অর্থ সংকুলনের জন্য বুকিং বিডি ও হেলথ কেয়ার নামে অনলাইনে আরও দুটি প্ল্যাটফর্ম চালু করে। এই দুটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহের কাজ শুরু করে তারা ।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বলেন, গুলশানের শাহজাদপুরের কনফিডেন্স টাওয়ারের অফিসে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা কম্পিউটারে জাল রিপোর্ট পাওয়া গেছে ।
Discussion about this post