কয়েক বছর পূর্বে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের দূর্ণীতিবাজদের বরপুত্র এবং সরকারি বৃহৎ এই হাসপাতালের লুটপাটকারী চক্রের হিসাবের রক্ষণাবেক্ষনকারী পিএ সিদ্দিকসহ ১৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারীদের দূদকের সুপারিশে নারায়ণগঞ্জ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বদলী করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় । মাসখানেকের জন্য এমন বদলীর পর ফের এই শীর্ষ দূর্ণীতিবাজ মহাধুর্ত ফিরে আসে পূর্বের চেয়ারে । এরপর আর পিএ সিদ্দিকসহ এই চক্রের হোতাদের কেউ আর থামাতে পারে নাই ।
সরকারী এই হাসপাতালের উদ্বোধনের শুরুতে চাকরিতে (এমএলএসএস) চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী হিসেবে যোগ দিয়ে টাকার অভাবে পাটি ছাড়া ঘুমাতে না পেরে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরের রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো সেই সিদ্দিক বর্তমানে শত কোটি টাকার মালিক ।
একাধিক বহুতল বাড়ী, একাধিক গাড়ি, একাধিক নামে বেণামে ব্যবসা, কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স থাকার পরও তাকে থামানো যায় নাই অপরাধ প্রবণতা থেকে । এই পিএ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় কোন ধরনের আইন না মেনে নারায়ণগঞ্জের অসংখ্য সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পিএ সিদ্দিক । তার নেপথ্যে শহরের একটি প্রভাবশালী চক্রের শেল্টার ছিলো সব সময় ।
সেই পিএ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে সম্প্রতি হাসপাতালের পদাধিকারবলে সভাপতি সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ক্ষোভ প্রকাশের পর মাত্র কয়েক দিনের মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক আদেশে ২৪ জুন বুধবার রাজশাহী জেলা প্রশাসনের দপ্তরে বসলী করা হয়েছে ।
পিএ সিদ্দিকের এমন বদলীর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নারায়ণগঞ্জ ৩শ শয্যা হাসপাতালের সুপার ডাক্তার গৌতম রায় ।
মহাধূর্ত ৩শ শয্যা হাসপাতালের সুপারের পিএ সিদ্দিকুর রহমানের এমন বদলীর খবরে শহরে উত্থাপিত ব্যাপক সমালোচনা থেকে জানা যায়, সিদ্দিকের চাকুরী আর কয়েক মাস আছে। এর মধ্যেই অবসরে যাবে । এই কয়েক মাস চাকরি না করে স্বেচ্ছায় অবসরে চলে যাবে। প্রতি বছর এই হাসপাতালে ১৫/২০ কোটি টাকার সরকারি বরাদ্ধের অর্থ লুটপাট করতো এই সিদ্দিক ও তার গডফাদাররা। লুটপাটের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই বদলী করিয়ে সুরক্ষা কবজ নিতে চাইছে কেউ কেউ ।
পিএ সিদ্দিকের শেল্টারদাতাদের পরামর্শেই এই অবসরে যাবার মাত্র কিছুদিন পূর্বে এমন বদলীর ঘটনাকে বিশাল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকেই । যুগের পর যুগ যাবৎ পিএ সিদ্দিকের শেল্টারদাতা ও লুটপাটের হোতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দারী করেছেন অনেকেই । এমন বদলীকে শহরবাসীর চোখে ধুলো দেয়া হচ্ছে বলেও তীব্র সমালোচনা করেছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কর্মচারীরা ।
বদলী কোন শাস্তি না,, এটি সরকারি চাকুরীর নিয়ম। কিন্তু এতোদিন পর এখন কেন ? এমন প্রশ্নও করেছেন কোন কোন কর্মকর্তা ।
আওয়ামীলীগ সরকারের এই শাসনামল ছাড়াও এরশাদ সরকারের শাসনামল, বিএনপির শাসনামল, সেনা সমর্থিত সরকারের শাসনামলের প্রভাবশালী ক্ষমতাধরদের নিয়মিত মাসোহারা দিয়ে ঠিকাদার চক্র ও পিএ সিদ্দিক লুটপাটের মহোৎসব চালিয়ে যাচ্ছিলো।
ক্ষোভ প্রকাশ করে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, চাকুরী নিয়ে ৮০ দশকে যে সিদ্দিক একটি বিছানার অভাবে ঘুমাতে পারে নাই আর সেই সিদ্দিক এখন খানপুর থেকেই প্রায় অর্ধ কোটি টাকা মূল্যের দামী গাড়ি হাকিয়ে হাসপাতালে আসলেও কারো চোখে কি এমন দৃশ্য পরে নাই ?
এক সিদ্দিক বদলী হলেও তার আরো সহোদর রয়েছে এই হাসপাতালেই । যাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ ।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লাফায়েত আলম সানী সরকারি এই হাসপাতালের লুটপাট নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয় ।
বিএনপির সরকারের শাসনামলে তৎকালীন নারায়ণগঞ্জের প্রভাবশালী নেতা মমিন উল্লাহ ডেবিডকে প্রতি মাসেই ৫০ হাজার টাকা পাঠানো হতো হাসপাতাল থেকে । একজন ঠিকাদার ও পিএ সিদ্দিক যেই বাহকের হাতে দিয়ে প্রতিনিয়ত ডেবিডের কাছে এই বিশাল টাকা পৌঁছে দিতেন তার বিস্তারিত বক্তব্যের রেকর্ড পাওয়া গেছে। যা সংরক্ষিত রয়েছে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর দপ্তরে ।
Discussion about this post