বিশেষ প্রতিনিধি :
বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও তুরাগসহ রাজধানীর আশপাশের নদীগুলো স্থায়ীভাবে দখল এবং দুষণমুক্ত করতে পরিকল্পিতভাবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরি।
তিনি জানান, প্রকল্পটির অধীনে ঢাকার চারপাশের বিভিন্ন নদীর তীরে নতুন করে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সীমানা পিলার স্থাপন, র্তীররক্ষা ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ কাজের জন্য ইতিমধ্যে ৮শ’ ৪৮ কেটি ৫৫ লক্ষ টাকার একটি বৃহৎ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয় ও বিআইডব্লিউটিএ যৌথভাবে কাজ শুরু করছে।
মঙ্গলবার বিকেলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার পাগলা মুন্সিখোলা এলাকায় নদী থেকে পন্য পরিবহন কাজে ব্যবহার করার জন্য ৬ টি জেটি নমর্িাণ কাজের উদ্বোধন করেন নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরি। এসময় উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের প্রতিমন্ত্রী প্রকল্পটির বিষয়ে এসব কথা জানান। প্রতিমন্ত্রীর পরিদর্শনাকালে সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজধানীর শ্যামপুর এলাকার সংসদ সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদস সদস্য সানজিদা খানম, নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরি, বিআই্ডব্লিইটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেকসহ সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরি এ প্রসঙ্গে আরো বলেন, নদী হচ্ছে ব্লু ইকোনোমি। অতীতের বিভিন্ন সরকারের আমলে এই নদীগুলো অপরিকল্পিকতভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই পরিকল্পিতভাবে নদীপথ ব্যবহার করার লক্ষ্যে বিআইডব্লিউটিএ কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, নদীপথে অর্থনৈতিক কর্মক্ষেত্র তৈরি করতে শেখ হাসিনার সরকার বদ্ধপরিকর। বর্তমান সরকার হচ্ছে জনগনের সরকার। জনগণের ভোগান্তি কমিয়ে সেবা প্রদান করাই সরকারের মুল লক্ষ্য। তিনি বলেন, আগে যে সব সরকার ছিলো তারা জনগনের ভোগান্তি বাড়িয়ে নিজেরা সুবিধা গ্রহণ করেছে। গত ১১ বছরের বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। আজ জাতীয় নির্বাহি পরিষদ একনেকের সভায় মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করার জন্য ১৮ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। নদীর এই বিশাল কর্মযোগ্য দেখে নদী দখলদাররাও দখল ছেড়ে দিচ্ছে। যার দখল ছাড়ছে না তাদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীর দুষণ রোধে সকল শিল্প এলাকার কারখানার মালিকদের ইটিপি প্লান্ট স্থাপন করে ব্যবহারের নিদের্শ দেয়া হয়েছে। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর এবং ওয়াসা কর্তৃপক্ষ কাজ করছে। তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ পাইলট প্রকল্প হিসেবে রাজধানীর সদরঘাটে দুটি ইটিপি প্লাট স্থাপন করেছে। এটি আশাব্যঞ্জক হলে ঢাকার চারপাশের নদীর তীরের দুষিত পানি এসে পড়ছে এমন ৫০ টি স্থানে এই ইটিপি প্লান্ট স্থাপন করা হবে। এর ফলে নদী দূষণমুক্ত হওয়ার পাশাপাশি পানি ব্যবহার করাও উপযোগী হয়ে উঠবে। মুজিব বর্ষকে সামনে রেখে আগামী ১৬ মার্চ এই ইটিপি প্লান্ট দুটি উদ্বোধন করার কথা ও জানান নৌ-প্রতিমন্ত্রী।
রাজধানীর আশপাশে বহমান বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, তুরাগ, শীতলক্ষ্যা ও বালু নদীর র্তীরভূমিতে পিলার স্থাপন,র্তীররক্ষা ওয়াকওয়ে ও জেটিসহ আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকল্প পরিচালক নুরে আলম জানান, এই প্রকল্পের আওতায় এই নদীগুলোর দুই তীরে ১০ হাজার ৮শ’ সীমানা পিলার স্থাপন করা হবে। এছাড়া তীর রক্ষাসহ ৫২ কিলোমিটার ওয়াকওয়ে, এক কিলোমিটার কি ওয়াল, ৪৫ কিলোমিটার গাইডওয়াল,এবং ৬ কিলোমিটার ওয়াকন পাইল নির্মান করা হবে।
তিনি আরো বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ড্রেজিং কম্পোনেট, দৃষ্টিনন্দন ইকোপার্ক, পানি পরিশোধনের জন্য ইটিপি প্লান্ট ছিলোনা। কিন্তু সংশোধিত প্রকল্পে এ বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা নদী বন্দরের অধিনে প্রায় একশ’ বছরের স্থায়িত্বকালের ৩ হাজার ৮শ’ পিলার স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। যা ইতিমধ্যে দৃশ্যমান হচ্ছে। বাকি পিলারগুলো নির্মানের জন্য দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ণ হলে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো স্থায়ীভাবেই দখল ও দুষণমুক্ত হবে। এছাড়া এই চার নদীর পানি ব্যবহারের উপযোগিও হবে।
সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, করনো ভাইরাস সচেতনায় আকাশ, নৌ ও সড়ক পথে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেছে। মংলা বন্দরে ইউক্রেনেরে এক নাবিকের মৃত্যু নিয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা পরীক্ষ নিরিক্ষা করে দেখে গেছে ওই নাবিক হ্যার্ট অ্যাটাকে মারা গেছেন। করোনা সংক্রমন ঠেকাতে মংলা ও চট্রগ্রাম বন্দরে পণ্যবাহি সকল জাহাজের নাবিক সহ সংশ্লিষ্ট লোকজনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা নিরিক্ষা করার পরেই পণ্য উঠানামা করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে সরকার খুবই সতর্কতা অবলম্বন করছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরি।
Discussion about this post