এই চোরাই কারবারীদের অপকর্ম থামানো খুবই কঠিন কাজ । কারন এদের পাশে আছে অসাধু রাজনীতিবিদ, বিশেষ পেশার লোক, স্থানীয় মাস্তান এবং সর্বোপরি আইনশৃংখলা বহিনীর একাধিক সংস্থার অসাধু কর্মকর্তারা । যাদেরকে নিয়মিত মাসোয়ারা দিয়েই চোরাই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে চিহ্নিত চক্রটি
নারাযণগঞ্জ নিউজ আপডেট
নাারযণগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাস্টমস বন্ড কমিশনের কর্মকর্তারা প্রথমে শুল্কমুক্ত পলিথিনের দানা আমদানীকারকদের যোগসাজাসে ব্যাপক নিষিদ্ধ বাণিজ্যের বিরুদ্ধে জোড়ালোভাবে অভিযান চালানোর পর কয়েকদিনের ব্যবধানে শুরু করে একই কায়দায় সরকারের কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সূতার চোরাই কারবারীদের বিরুদ্ধে সাড়াসী অভিযান । এই অভিযানে শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে শহরের সূতারপাড়া এলাকায় সাদ ট্রেডার্স ও আজাদ ট্রেডার্সের গুদামে এ অভিযান চালিয়ে কয়েক কোটি টাকার চোরাই সূতা আটক করে ।
এমন সাড়াসী অভিযান ও চোরাই সূতা আটকের খবরে চোরাই সূতা কারবারী ও রাজস্ব ফাঁকির মূল হোতা সূতাঘরের আমিন উদ্দিনের ছত্রছায়ায় আশা, রায়হান, গজারিয়া, বেপারী এন্ড ট্রেডিং, শোভা এন্টারপ্রাইজ, আমিন এন্ড ব্রাদার্স, ওয়েস্ট গেইটসহ এলসি জালিয়াতির হোতা তুশার আহমেদ চৌধুরী, সম্ভু, অঞ্জন, কামরুল, আতাউর, শ্যামা ভোমিক (জেবিএল), কবির, বাস্তব, শহীদ, বিপুল সরকার, নিত্য সাহা সুব্রত, রতন দ্রুত গতিতে নিজেদের অবৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে গা ঢাকা দেয় চোরাই কারবারীরা । কেউ কেউ পালিয়ে যায় পাশ্ববর্তী দেশে । চোরাই কারবারীদের অনেকেরই ভারতীয় ভিসা করা থাকে সারা বছর জুড়ে । বিপদ আসতে দেখলেই তারা পালিয়ে আশ্রয় নেয় ভারতে । সরকারের বিশাল রাজস্ব ফাঁকির হোতাদের অনেকেই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে ফের নারায়ণগঞ্জে আসার পায়তারা করছে । শত শত কোটি টাকার চোরাই সূতার ব্যবসা করতে গিয়ে সূতা ঘরের আমিন উদ্দিন নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসিকে ( যিনিই দায়িত্বপ্রাপ্ত হন ) ম্যানেজ করতে সব ধরণের চেষ্টা চালায় ।
সবশেষ গত ১৭ ডিসেম্বর মঙ্গলবার মধ্যরাতে সূতা চোরাই কারবারদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট নারাযণগঞ্জ ক্লাবের অনুষ্ঠান চলাকালে জেলা পুলিশের কর্মকর্তাদের সাথে গোপন বৈঠক করে । এই গোপন বৈঠকে থাকা এক চোরাই সূতা কারবারী নাম প্রকাশ না কারার অনুরোধে বলেন, “ গোপন বৈঠকে পুলিশের এই কর্মকর্তার কাছে একটিই অনরোধ ছিলো, “শুল্ক গোয়েন্দা বা কাস্টমস বন্ড কমিশনের কর্মকর্তারা নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালাতে আসার খবরটি যেন আগে থেকেই জানানো হয় ।“ বিনিময়ে পুরানো চুক্তির বদলে নতুন করে চুক্তি করতেও প্রস্তুত রয়েছে সূতার চোরাই কারবারীরা ।
এমন চোরাই সূতা কারবারে বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে কয়েকজন সাধারণ সূতা ব্যবসায়ী বলেন, শুল্কমুক্ত সূতা আমদানীর পর নগরীর টানবাজার এলাকার সূতাঘর নামক আমিন উদ্দিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছাড়াও আমিন উদ্দিনের ছত্রছায়ায় তারই ভাগিনা, ভাতিজা ও কয়েকজন ঘনিষ্ট স্বজন চোরাই সূতার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর যাবৎ। আমিন উদ্দিনের ছত্রছায়ায় নয়ামটির আশা এন্টারপ্রাইজের কাউযুম যিনি সূতিার চোরাই কারবারী করে বন্দরে মসজিদ কমিটির নির্বাচন করতে বিশাল অর্থ ব্যয় করেছেন ।
আমিন উদ্দিনের ভাগিনা রায়হান, রায়হান এন্টারপ্রাইজের নামে খান টাওয়ারে অনুরূপ সূতার কারবারী চালিয়ে যাচ্ছে । একই কায়দায় ভাতিজা গজারিয়া ট্রেডিং, আরেক ভাতিজা আনোয়ার বেপারী এন্ড ট্রেডিং নামের চোরাই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে । বিপুল মন্ডলের শোভা এন্টার প্রাইজ , এক ফটো সাংবাদিকের দোহাই দিয়ে তারই ভাতিজি জামাতা এবং সদর থানার ওসি, ওসি তদন্তসহ প্রশাসনের অনেক কর্মকর্তাদের নিয়মিত মোটা অংকের মাসোয়ারা দিয়ে সুব্রত রায়ের এস আর ট্রেডিংয়ের নামে চোরাই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বছরের পর বছর যাবৎ। নেত্রোকোনার সুব্রত রায় নারাযণগঞ্জে বিয়ে করার সুবাদে এই চোরাই ব্যবসায় জড়িয়ে বর্তমানে বিশাল সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে ।
এমন ব্যবসায়ী ছাড়াও রাজধানীর ইসলামপুরের আমিন টেডার্স নারায়ণগঞ্জ শহরের সূতারপাড়া এলাকায় বিশাল গোডাউন ভাড়া নিয়ে চোরাই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে । সূতারপাড়া এলাকায় সাদ ট্রেডার্স ও আজাদ ট্রেডার্সের হানা দিয়ে সোয়া কোটি টাকার চোরাই সূতা জব্দ করলেও আমিন ট্রেডার্সের গোডাউনের খোজও করে নাই অভিযানকারী দল ।
এমন অভিযান পরিচালনা শেষে কয়েকজন সাধারণ ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এটাই হলো আমাদের বাংলাদেশ । উল্লেখিত চোরা কারবারীরা নিয়মিত মাসোয়ারা দেয়ার কারণে তাদের গোডাউনে হানা দেয় নাই । আর যাদের চোরাই সূতা জব্দ করা হয়েছে তাদের সাথে দর কষাকষিতে মিল না হওয়ায় এই অভিযান চলেছে ।
সূতা ঘরের মালিক নিয়মিত মাসোয়ারা দেয়ার পরও অতি সম্প্রতি ঘুষের মাত্রা বাড়াতে গিয়ে সূতা ঘরে হানা দেয় ভ্যাট ও শুল্ক গোয়েন্দারা । এতেই ভ্যাট ও শুল্ক গোয়েন্দাদের পিটিয়ে এবং গাড়ী ভাংচুর করে সূতা ঘরের কুক্ষাত সূতা চোরদের গাডফাদার আমিন উদ্দিন ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন ।
মূলত: সূতা চোর এই সিন্ডিকেটের হোতারা নিয়মিত নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসিকে চোরাই সূতার কারবার নির্বিগ্নে নিয়মিত পরিচালনা করতে প্রতি মাসে ২ লাখ থেকে ৩ লাখ টাকা ঘুষ দেন বলে জোড়ারো গলায় টানবাজারে প্রচার করে সূতা ঘরের লোকজন । যার ফলে অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনের উপর হামলা করতেও সাহস করে আমিন উদ্দিন চক্র। (এমন জোড়ালো অভিযোগের রেকর্ড রয়েছে নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট এর দপ্তরে)
টানবাজারের একাদিক ব্যবসায়ী কঠোর সমালোচনা করে আরো বলেন, সূতার চোরাই কারবারী ও অবৈধ বন্ডের ব্যবসায়ীরা শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের কাস্টমস বন্ড কমিশনের কর্মকর্তারা এবয় স্থানীয় প্রশাসনের অসাধু কর্মকর্তাদের সাথে লিয়াজাে করে সরকারের রাজস্ব ফাঁকির বিশাল কারবার ফের শুরু করতে যাচ্ছে । এদের লাগাম টেনে রাখা খুবই কঠিন ।
Discussion about this post