এনএনইউ ডেক্স :
চাষাড়া জিয়া হলের অবৈধ মেলাকে বৈধ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এর ইজারাদার মঞ্জুর আহম্মেদের কাছ থেকে দুই দফা ৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশেষ পেশার পরিচয়দানকারী দুই ব্যক্তি ও এক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে মেলা থাকবে, এমন প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেলার প্রতিটি স্টল থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেছেন কথিত ওই ইজারাদার। কিন্তু শেষতক দুই মাস অবৈধ ভাবে চলার পর জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ করেছে এই মেলা।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকেই মেলা প্রাঙ্গন জিয়া হল খালি করে দিয়েছে দোকানিরা। এর আগে রোববার জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুমানা আক্তার সরেজমিনে এসে ২৪ ঘণ্টার সময় বেঁধে দেন এবং মেলার সকল দোকান নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এদিকে সূত্র জানায়, মেলার বিভিন্ন স্টল থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে মেলার স্থায়ীত্ব বাড়াতে না পেরে গা ঢাকা দিয়েছেন এর আয়োজক মঞ্জুর আহম্মেদ। আর এই ইজারাদার ছুটছেন বিশেষ পেশার পরিচয়দানকারী দুই ব্যক্তি ও এক কাউন্সিলরের পিছনে। তবে, মেলায় থাকা স্টল মালিকেরা ইজারাদারের উপর তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা তাদের প্রদত্ত টাকা ফিরিয়ে দিতে চাপ দিচ্ছেন কথিত ইজারাদার মঞ্জুরকে। আর এই চাপ সামলাতে রোববার রাত থেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন তিনি।
আরও জানা গেছে, শহরের চাষাড়া খাজা সুপার মার্কেটের একটি দোকানে বসে ২ লাখ এবং বাগান বাড়ি রেস্টুরেন্টে বসে চার লাখ টাকা বিশেষ পেশার পরিচয়দানকারী দুই ব্যক্তিকে প্রদান করেছিলেন কথিত ইজারাদার মঞ্জুর আহম্মেদ। বিনিময়ে মেলায়র স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি করার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন অবৈধ এই মেলাকে বৈধ করে দেওয়ার। কিন্তু দুই মাস হয়ে গেলেও এই মেলা বৈধ করতে পারেনি ওই চক্রটি।
এদিকে আরও জানা গেছে, বছরে প্রায় অধিকাংশ সময়েই নানা নামে জিয়া হলে আয়োজন করা মেলা। হস্ত ও কুঠির শিল্পকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে এই মেলার অনুমোদন নামমাত্রা শর্তে অনুমোদন দিয়ে থাকে জেলা প্রশাসন। কিন্তু একটি চক্র এখানে কুঠির ও হস্ত শিল্প মেলার কথা বললেও অনুমোদনের পর তা হয়ে যায় পুরোপুরি বাণিজ্যিক মেলা। কিছু বিশেষ পেশার পরিচয়দানকারী ব্যক্তিও এখান থেকে দীর্ঘদিন ধরে সুযোগ সুবিধা পেয়ে থাকেন।
এদিকে প্রথম দিকে মেলাটির বৈধতা থাকলেও তার মেয়াদ শেষ হয় অক্টোবর মাসে। এরপর থেকেই অবৈধ ভাবে চলছিলো মেলাটি। গত দুমাস ধরে এভাবে মেলাটি চললেও টনক নড়েনি প্রশাসনের। শেষতক ২২ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেট সহকারি কমিশনার (ভূমি) রুমানা আক্তারের নেতৃত্বে অবৈধ মেলা উচ্ছেদ করতে আসা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন সদর মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) আব্দুল হাইসহ বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
এসময় তারা মেলার ইজারদার মঞ্জুর আহম্মেদের কাছ থেকে মেলা চালানোর বৈধ কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি তা দেখাতে ব্যর্থ হন। তবে, ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়েই তিনি যাদেরকে মেলা বৈধ করার জন্য ৬ লাখ টাকা দিয়েছিলেন তাদের একজন বিশেষ পেশার পরিচয়দানকারী এক ব্যক্তিকে ফোন করেন এবং পুরো ব্যাপারটি বলেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি অজুহাত দেখিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
পরবর্তীতে রাতের মধ্যে মেলার দোকানপাট নিজ দায়িত্বে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন ম্যাজিস্ট্রেট। নতুবা সকালে প্রশাসন উচ্ছেদ চালানোর পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নিবেন বলে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুমানা আক্তার জানান, জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে মেলা স্থাপনের জন্য মেলাটিকে বন্ধ করে দেওয়ার জন্য আমাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ব্যবসায়ীরা যাতে তাদের মালামাল সরাতে পারে এ জন্য আজকের দিন সময় দেওয়া হয়েছে। তারপরও যদি তারা নিজেদের মালামাল সরিয়ে না নেয় তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কালকে সকালের মধ্যে যাতে কোনো প্যান্ডেলও না থাকে। পুরো জায়গাটি ফাঁকা করার কথা তাদের বলে দেওয়া হয়েছে।
মেলা উচ্ছেদের পর ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একজন মহিলা কাউন্সিলর ও একজান সাংবাদিক নিজেদেরকে বিশাল ক্ষমতাবান পরিচয় দিয়ে আরো দুইজন সাংবাদিককে সাথে নিয়ে ৬ লাখ টাকা নিয়ছিলো এমপি, ডিসি, এসপি, সদর ওসি ও সাংবাদিকদের ম্যানেজের নামে । আমাদের তো ক্ষতি যা হবার হয়েছে এখন যারা এই টাকা নিয়ে প্রতারণা করলো তাদের বিচার দাবী করছি ।
Discussion about this post