বন্দর প্রতিনিধি //
নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দরের দাশেরগাঁও-লাঙ্গলবন্ধ সড়কের উভয় পাশে ইটভাটার কবলে জনজীবন হুমকির মুখে পড়েছে।
প্রশাসনের রহস্যজনক অভিযানেও বন্ধ হচ্ছে না ইটভাটার কার্যক্রম। মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে একদিকে জরিমানা ধার্য করে অপরদিকে তা পরিশোধ করে চালিয়ে যাচ্ছে ইটভাটার কার্যক্রম।
কাগজপত্র জমা দেয়া হয়েছে, তা এখনো পায়নি তারপরও ইটভাটার কার্যক্রম চলছে বলে খোদ ১ নং ওর্য়াড মেম্বার মান্নাত মিয়া জানান। তার বি, বি, সি ব্রিক ফ্রিল্ড শুধু না সকল ইটভাটার কাগজপত্র এমন বলেও জানান। দাশেরগাঁও – লাঙ্গলবন্ধ সড়কটি অবৈধ ইটভাটার কারনে যান চলাচল দূরের কথা পায়ে হেটে কোন মানুষ চলাচল করতে পারে না। কৃষিজমিগুলো ইটখেকোদের কবলে বিলিনের পথে।
কৃষি অধিদপ্তর হতে শুরু করে সকল সেক্টরের রহস্যজনক নীরবতা। ইটভাটার মালিকরা তাদের কালো টাকার মাধ্যমে সকল বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কার্যক্রম। আর ভোগান্তির শিকার হচ্ছে সকল শ্রেণীর লোক। মুক্তি পাচ্ছে না কোমলমতি শিশু, মুসল্লী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা।
এদিকে প্রাইমারি স্কুলের দেয়াল ঘেষে ইটভাটা চলছে এমন সংবাদে সর্বত্র ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা দেখা দিয়েছে।
প্রশাসনের ভূমিকাকেও ভাল দৃষ্টিতে দেখছে না সচেতন মহল।
মুছাপুর ইউনিয়নের দাশেরগাঁও- লাঙ্গলবন্ধ সড়কের উভয় পাশের প্রায় ২০/২৫ টি গ্রামের লোককে এই অবৈধ ইটভাটার মালিকদের রাহু গ্রাস হতে রক্ষা করতে নারায়নগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা এলাকাবাসীসহ নাগরিক কমিটি বন্দর, মানবাধিকার কমিশন বন্দর শাখার নেতারা।
পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন্দর উপজেলা প্রশাসনের যৌথভাবে মোবাইল কোর্টে জরিমানাসহ বন্ধ করার নির্দেশ দিলেও চলছেই ইটভাটার কার্যক্রম। সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দেয়াল ঘেষে ইটভাটা নির্মাণ ও কার্যক্রম বীরদর্পে চালিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় ইউপি সদস্য মান্নাত মিয়াসহ প্রায় ১২ জনের একটি চক্র। সরকারী কোন দপ্তরকেই যেন কর্ণপাত করছেন না। সাধারন জনগন কথা বলতেও সাহস পায় না।
কেউ প্রতিবাদের চেষ্টা করলেও তাকে নানাভাবে হুমকি দেয়ার অভিযোগও আছে। একজন ইউপি সদস্য মান্নাত মিয়াদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এলাকাবাসী। মুক্তি পাচ্ছে না স্কুলের কোমলমতি শিশুসহ মসজিদের মুসল্লী ও মাদ্রাসার শির্ক্ষাথীরা।
এলাকাটিকে মানুষের বসবাসের অনপুযোগী করে তুলছে। এলাকাবাসীকে স্বস্তি দিতে স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমানের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছে এলাকাবাসী।
সূত্র মতে, নারায়নগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের ১ নং ওর্য়াডস্থ দাশেরগাঁও এলাকা। দাশেরগাঁও -লাঙ্গলবন্ধ সড়কের উত্তরপাশেই দাশেরগাঁও সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদ। স্কুলের ও মসজিদের সীমানা ঘেষে বি,বি, সি, ব্রিক ফিল্ড নামের একটি ইটভাটা নির্মান করেন ১ নং ওর্য়াড মেম্বার মান্নাত মিয়াসহ ১২ জনের একটি চক্র। জনপ্রতিনিধি যেখানে জনগনের খেদমত করবে সেখানে কোমলমতি শিশুদের জন্য মরন নামক কারখানা(ইটভাটা) তৈরি নিয়ে সর্ব মহলে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা দেখা দিয়েছে।
এ ব্রিক ফিল্ডের কবল হতে রক্ষা পেতে এলাকাবাসী নারায়নগঞ্জ জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরিবেশ মন্ত্রণালয়েও অভিযোগ করে কোন সুরহা পাচ্ছেন না এলাকাবাসী।
মান্নাত মিয়া মেম্বার হওয়ার পর থেকে একটি সেন্ডিকেট করে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে চলছে। মান্নাত মিয়া মেম্বার তার সাথে সামছুল মিয়ার ছেলে আলামিন, আসলাম, আব্দুল মিয়ার ছেলে আলমচান, জজ মিয়ার ছেলে ইয়ানবী, মাহমুদ মিয়ার ছেলে মোমেন, সুমন, মুছূপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি গোলে মিয়ার ছেলে গলিন, মোস্তাক মিয়ার ছেলে মামুন, সোলমান মিয়ার ছেলে আলী, নূরু মিয়ার ছেলে নিপু ও মেম্বারের ভাই আলিফ মিলে বি, বি, সি নামক ব্রিক ফিল্ড নির্মাণ করে। যা স্কুল ও মসজিদের দেয়াল ঘেষে।
জনস্বার্থে এলালাবাসী গত বছরের ২১ অক্টোবর বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন্দর উপজেলা প্রশাসন যৌথ উদ্যাগে ইটভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা পূর্বক জরিমানা করে এবং বন্ধের নির্দেশ দিয়ে যান। অদৃশ্য কালো শক্তির ইশারায় ইটভাটা পরিচালনা করে বীরদর্পে চলছে। প্রসাশন হতে সকল কিছু যেন মান্নাত মিয়া মেম্বারের নিয়ন্ত্রনে চলছে।
তবে মান্নাত মিয়ার মোবাইল নাম্বারে ফোন দিয়ে জানতে চাইলে মান্নাত মিয়া মেম্বার জানান, আমাদের এখানে সকল ইটভাটা কাগজ ছাড়া। আমার ইটভাটায় ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছিল। সেই টাকা পরিশোধ করে কাগজপত্র জমা দিয়েছি। ইটভাটা এখন কি চালু এমন প্রশ্ন করলে মান্নাত মেম্বার দম্ভোক্তি করে বলেন, জরিমানা করেছে তা পরিশোধ করে চালু করেছি। কাগজপত্র জমা দিয়েছি এখনো আসেনি। কাগজ আসেনি তারপরও চালু করলেন কিভাবে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন আমাদের এখানের সকল ইটভাটাই কাগজপত্র ছাড়া। সেগুলো চলছে- আমারটাও চলছে।
উল্লেখ্য যে, ১৩ জানুয়ারি দুপুরে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের হাই কোর্টে বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
ঢাকার বায়ু দূষণ নিয়ে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন এইচআরপিবি করা একটি রিটের সম্পূরক আবেদনের প্রেক্ষিতে আসে। ঢাকার বায়ুমান উন্নয়নে পরিবেশ অদিদপ্তর কী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং অধিদপ্তরে জনবল নিয়োগের বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানাতে আগামী ২ ফেব্রুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপিরচালককে আদালতে হাজির থাকতে বলা হয়েছে।
আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।
আদেশের পর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ঢাকা ও আশপাশের বায়ু দূষণ বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। এ কারণে জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষার স্বার্থে জনস্বার্থে একটি রিট আবেদন করেছিল এইচআরপিবি। আমরা বলেছি, এখন পর্যন্ত বায়ূ দূষণে আমরা সর্বোচ্চ পর্যায়ে আছি। এটা নিয়ন্ত্রণে কিছু পদক্ষেপ দরকার। সে জন্য সম্পূরক আবেদনে ১২ দফা নির্দেশনা চেয়ছিলাম। তার মধ্যে আদালত নয়টি নির্দেশনা দিয়েছে।
গত বছরের ২৬ নভেম্বর ঢাকা ও ঢাকার আশেপাশের এলাকায় বায়ু দূষণের কারণ ও দূষণ রোধে একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়নের জন্য পরিবেশ সচিবের নেতৃত্বে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠণের নির্দেশ দেয়।
এছাড়া ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার অবৈধ ইটভাটা ১৫ দিনের মধ্যে বন্ধেরও নির্দেশ দেওয়া হয়।
৫ জানুয়ারি পরবর্তী আদেশের জন্য রেখে বিবাদীদের এর মধ্যে নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দিতে বলে হাই কোর্ট।
এর ধারাবাহিকতায় পরিবেশ সচিব এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের পক্ষে রোববার আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আর সোমবার রিট আবেদনকারী পক্ষ ১২ দফা নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করে। সে আবেদনের শুনানি নিয়ে আদালত ৯ দফা নির্দেশনা দিল। আগামী ১ মার্চ এ মামলা পরবর্তী আদেশের জন্য রাখা হয়েছে।
Discussion about this post