নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য খাতে কোন দূর্ণীতি নাই ! আশ্চর্য্য হলেও সত্য এমনটাই প্রমাণ হতে যাচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠন করা একটি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে। যার আগাম আভাস দিয়েছেন তদন্ত সেই তদন্ত কমিটির প্রধান নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের দুর্নীতি ও অনিয়ম করে হাসপাতালের সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগ দীর্ঘদিনের । এবার শহরের এই খানপুুুরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ৫ কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি অভিযোগে ৷ তদন্ত করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কমিটিও করেছিল ৷ তবে দুর্নীতির সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ থেকে ছাড় পেতে যাচ্ছেন তারা৷ তদন্ত কমিটির প্রধান জেলা সিভিল সার্জনের সাথে তদন্তের বিষয়ে কথা বলে এমনটা ধারণা করা যাচ্ছে ৷
সিভিল সার্জন ডা. মুশিউর রহমান বলছেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে করা অভিযোগের তিন অভিযোগকারী স্বাক্ষর নকল করে অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা ৷ এখন অভিযোগকারীদের পক্ষ থেকে এমন রেসপন্স পাওয়া গেলে অভিযোগ হালকা হয়ে যায় ৷
তবে, সিভিল সার্জন বলেন, তারপরও বিষয়টি তদন্ত চলছে ৷ তদন্ত শেষে প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হবে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জের অনেকের মতে, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালে দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা কারও অজানা নয় ৷ অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পরও যখন কর্মচারী ছাড় পেয়ে যায় বলে দুর্নীতি আর শেষ হয় না ৷ যার ফলে ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ সেবা প্রার্থীরা ৷
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের ৫ কর্মচারীর বিরুদ্ধে সরকারি বিল ভাউচারের টাকা আত্মসাৎ, ব্লাড ব্যাংকের অর্থ লোপাট, সরকারি মালামাল বাইরে বিক্রি, রোস্টারের নামে প্রতি মাসে অর্থ লুটে নেয়াসহ বিভিন্ন প্রকার অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই অভিযোগে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়।
অভিযুক্ত ৫ কর্মচারীরা হলেন- নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের হিসাবরক্ষক আহসান হাবিব, ব্লাড ব্যাংক ইনচার্জ আব্দুর আজিজ, স্টোরকিপার আতিকুর রহমান, ওয়ার্ডমাস্টার শেখ আনসার আলী ও অফিস সহায়ক জয়নাল।
এই ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সভাপতি জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মুহম্মদ মুশিউর রহমান। এছাড়া কমিটিতে অপর দুই সদস্য হলেন, সিভিল সার্জন অফিসের সিনিয়র স্বাস্থ্য শিক্ষা অফিসার মো. আসিফ মাহমুদ, মেডিকেল অফিসার ডা. একেএম মেহেদী হাসান।
এই কমিটি গত ২৪ মার্চ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের অফিস কক্ষে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের সাথে কথা বলেন। সেখানে অভিযোগকারীরা তাদের স্বাক্ষর জাল করে এই অভিযোগ দেয়া হয় বলে কমিটি কে জানান। অনেকেই বলছেন অভিযোগকারী গোপনীয়তার স্বার্থে নাম পরিচয় প্রকাশ না করলেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত করা উচিত। কারণ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতির বিষয়টি অনেকটাই আলোচনায় আছে।
এদিকে, অনিয়ম ও টাকা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্তদের মধ্যে তিনজন নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা হাসপাতালের ব্যাপকভাবে সমালোচিত ‘পিএ সিদ্দিক’ এর আত্মীয়। দুইজন সিদ্দিকের ভাই এবং অপরজন ভায়রা। পিএ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ছিল ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ। হাসপাতালের চিকিৎসক ও কর্মকর্তারাও এই কর্মচারীর দাপটে ছিলেন তটস্থ। পিএ সিদ্দিকের দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য ও হাসপাতালটির ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সেলিম ওসমানও। তিনি প্রকাশ্যে একাধিক অনুষ্ঠানে সিদ্দিকের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেন। যদিও সিদ্দিকের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে, দুর্নীতির অভিযোগের পাহাড় মাথায় নিয়ে পিএ সিদ্দিক বদলি হন রাজশাহীতে। এরপর চাকরী ছেড়ে দেন এই পিএ সিদ্দিক ।
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের দুর্নীতি ও অনিয়ম করে হাসপাতালের সরকারি অর্থ লোপাটের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠনের পর থেকে নারায়ণগঞ্জের স্বাস্থ্য খতের সর্বত ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। অনেকেই বলেছেন অভিযোগকারী কাউন্সিলর শকু, নূরু, বকুল, আল আমিন ও দিন মোহাম্মদের নামে দাখিল করা এই অভিযোগ কতটুকু সত্য তা খতিয়ে দেখলেই বেড়িয়ে আসবে ভয়ানক থলের বিড়াল। অভিযোগকারী হয়তো নিজের জীবন রক্ষার কারণে কাউন্সিলর শকুসহ, নূরু মিয়া, বকুল, আল আমিন ও দিন মোহাম্মদের নামে এমন অভিযোগ দাকিল করে থাকতে পারেন । কিন্তু এই অভিযোগ আসলে সত্যি কিনা তা যাচাই করা উচিৎ।
এই দূর্ণীতিবাজদের কারণে ২০১৯ সালে অক্টোবর নারায়ণগঞ্জ সদর আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য সেলিম ওসমান ৩০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের ব্যাপক দূর্ণীতি বন্ধ করতে না পেরে কঠোর ভাষায় মন্তব্য করেছিলেন, “পিএ সিদ্দিক হাসপাতালের মালিক !” সেই পিএ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে ঠিকাদার চক্রের সাথে আতাঁত করে কোটি কোটি টাকার লুটপাট করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের । পিএ সিদ্দিক ছাড়াও এই হাসপাতালের ব্যাপক দূর্ণীতিতে এবার সেই পিএ সিদ্দিকের আপন দুই ভাই ও বায়রা ভাইয়ের বিরুদ্ধেে আবারো জোড়ালো অভিযোগ উঠেছে ।
বর্তমানে এই পিএ সিদ্দিক এই হাসপাতাল থেকে বিতারিত হয়ে চাকরী ছেড়ে দিয়ে এবার গডফাদারদের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি নিয়মিত হাসপাতালে বসে খোদ সুপারকে মনিটরিং করেন বলেও জোড়ালো অভিযোগ রয়েছে খানপুরবাসীর মাঝে । আঙ্গুল ফলে কলাগাছ বনে যাওয়া নির্লজ্জ এই দূর্ণীতিবাজ চক্রের হাত থেকে এই হাসপাতাল রক্ষা পাবে না কখনোই। ফলে এই তদন্ত আর এই হাসপাতাল দূর্ণীতিতে নিমজ্জিতই থাকবে সব সময়। হ য ব র ল অবস্থাতেই চলবে এই এই সরকারী প্রতিষ্ঠান।
Discussion about this post