বিএনপি রাজনৈতিকভাবেই বেকায়দায় । দীর্ঘদিন যাবৎ বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ আবার সাজার কারণে রাজনৈতিক কোন কর্মসূচীতে অংশ গ্রহণ করতে পারেন না। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা যেন বিএনপির জন্য সোনার হরিণ । বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে হাজারো মামলা, ওয়ারেন্ট, বাড়িঘর ক্রোক করার আদালতের আদেশ, নানাভাবে নির্যাতিত বিএনপি, দালাল শ্রেণীর নেতা ছাড়া সবাই যেন জিম্মি। এতো নির্যাতনের পরও ঐক্যবব্ধ হতে পারছে না বিএনপির নোতকর্মীরা। সামান্য স্বার্থ হাসিলে ব্যর্থ হলেই নানাভাবে নেতাদের উপর ই ক্ষোভ প্রকাশ করে কেউ কেউ। এমন ঘটনার ব্যতিক্রম ঘটে নাই নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সম্মেলনেও।
খোদ খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ছিড়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। যার কারণে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। সম্মেলনে আসা অনেক নেতা সমালোচনা করে বলেন, “ক্ষমতায় নেই বিএনপি অনেক দিন। এরপরেও নিজেদের ঐক্য অঁটুট রাখতে পারে না কেউ কেউ । বিএনপি ক্ষমতায় থাকলে এই স্বার্থাণ্বেষীরা কি করবে ? ”
দীর্ঘ ১৪ বছর পর নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্মেলনকে ঘিরে টানানো বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ছিড়ে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা বলে অভিযোগ দলটির স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। বিষয়টি আজ নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন।
এর আগে শুক্রবার (১৬ জুন) দিনগত রাতে এ ঘটনা ঘটে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সম্মেলন উপলক্ষে অসংখ্য ব্যানার, ফেস্টুন গতকাল সন্ধ্যায় হীরাঝিল এলাকায় টানানো হয়। তবে আজ সকালের দিকে অধিকাংশ ব্যানার, ফেস্টুন ছেঁড়া অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির আহবায়ক মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেন, রাতের আধারে এ জঘন্য কাজ করা হয়েছে। কে বা কারা এই কাজ করেছে তা আমার জানা নেই। তবে যেই করেছে তাদের শাস্তি দাবি করছি।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০০৩ সালে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ছিলেন অধ্যাপক রেজাউল করিম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তৈমূর আলম খন্দকার। ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারবাদী হিসেবে অধ্যাপক রেজাউল করিমের নাম আলোচনায় থাকায় ২০০৯ সালের ২৫ শে নভেম্বর শহরের আলী আহমেদ চুনকা পৌর মিলনায়তনে জেলা বিএনপি’র সর্বশেষ সম্মেলনে তাকে বাদ দেওয়া হয়। সর্বশেষ সম্মেলনে তৈমূর আলম খন্দকারকে সভাপতি ও কাজী মনিরুজ্জামানকে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
কিন্তু দীর্ঘ ৭ বছরেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে পারেননি। এর ফলে ২০১৭ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক কাজী মনিরুজ্জামানকে সভাপতি ও জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন জেলা কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় বিএনপি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি আলোর মুখ না দেখায় সাড়ে ৩ বছর পর জেলা কমিটি ভেঙে দিয়ে ২০২০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর কেন্দ্র থেকে পুনরায় এডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকারকে আহ্বায়ক ও অধ্যাপক মামুন মাহমুদকে সদস্য সচিব করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির ৪১ সদস্যবিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে দেয়া হয়।
নির্দেশনা ছিল ৩ মাসের মধ্যে থানা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটি গঠন করতে হবে। কিন্তু নির্ধারিত সময় পাড় হলেও এই আহ্বায়ক কমিটি সবগুলো ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শেষ করতে পারেনি। এরমধ্যে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে মেয়র নির্বাচন করায় তৈমূর আলমকে আহ্বায়কের পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক করা হয় মনিরুল ইসলাম রবিকে। দুই বছরের মাথায় একই বছরের ১৫ই নভেম্বর মনিরুল ইসলাম রবি ও মামুন মাহমুদের আহ্বায়ক কমিটি ভেঙে দিয়ে কেন্দ্র থেকে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনকে আহ্বায়ক ও জেলা যুবদলের আহ্বায়ক গোলাম ফারুক খোকনকে সদস্য সচিব করে ৯ সদস্যবিশিষ্ট নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।
Discussion about this post