মাদক ব্যবসায়ীদের গডফাদারদের সাথে বসে আইনশৃংখলা বাহিনীর দহরম মহরমের সম্পর্কের কারণে নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনা খুব বেশী দিন আগের ঘটনা না । ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিলের আগে নারায়ণগঞ্জের এমপি, ডিসি, এসপি, র্যাব এর সিইওসহ কমান্ডার, এএসপি, ওসি ছাড়াও সবচাইতে নিম্ন পদের কর্মচারী কন্সেষ্টেবলদের অনেকেই ঘাতক নূর হোসেনের আস্তানায় একদিকে বখড়া আদায় করতেন। তেমনি সমানতালে মাদক সেবন, নগ্ন নারী নৃত্য দেখতে ভীড় করতো নূর হোসেনের আস্তানায় । গণমাধ্যম কর্মীদের হাজারো প্রতিবেদন প্রকাশের পরও আইনশৃংখলা বাহিনী এমন প্রতিবেদন কর্ণপাত না করায় ফল হিসেবে সাত জনের নির্মম খুনের ঘটনা দেখতে হয়েছে পুরো বিশ্বকে। সেই সাতজনকে খুনের ঘটনায় র্যাবের অসাধু অসংখ্য কর্মকর্তা কর্মচারীদের ফাঁসির দন্ড হওয়ায় সেই র্যাব কে নিয়ে এখনো সমালোচনা হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে।
তেমনি নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ নিয়ে বিশ্ব দরবারের প্রতিবেদনে সেই নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ দূষণের দিক দিয়ে বারবার শীর্ষ স্থানে উঠে আসার পরও টনক নঢ়ে নাই পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্তাদের। আর সেই দূষণকারীদের নিয়ে পরিবেশ দষণ বিরোধী আলোচনা সভা করায় ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে যাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেই কর্মকর্তারা পরিবেশ ধ্বংসকারীদের সাথে নিয়ে পরিবেশ দূষণ রোধে বৈঠক করার ঘটনায় গত দুই দিন যাবৎ ব্যাপক সমালোচনার জড় চলছে নগরীজুড়ে ।
এমন ঘটনায় কঠোর সমালোচনা করে নগরীর অনেকেই বলেছেন, “নারায়ণগঞ্জে প্রায় সাড়ে তিনশত ইটভাটা থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করছে পরিবেশ অধিদপ্তর। নারায়ণগঞ্জে হাজার হাজার মিল, ফ্যাক্টরী, কল, কারখানা থেকে নিয়মিত একই কায়দায় মাসোয়ারা আদায় করছে এই পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধু কর্তারা। শত শত ডাইং কারখানায় ওই একই পন্থায় উপ পরিচালক মুহাম্মদ আব্দল্লাহ আল মামুনের নিয়ন্ত্রিত কর্মচারীরা প্রতি মাসের শুরুতেই মাসোযারা আদায়ের কাজ সম্পন্ন করেন। যে কোন প্রতিষ্ঠান মাসোয়ারা দিতে টালবাহানা করলেই তার বিরুদ্ধে কথিত কয়েকজন বিশেষ পেশার নামধারীদের নিয়ে ফটোসেশন করে জেল জরিমানাসহ লোক দেখানো অভিযান করে আরো ঘুষ বাণিজ্যের বীজ বপন করেন। এভাবেই চলছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ঘৃন্য কর্মকান্ড। যা সাত খুনের চাইতেও বড় অপরাধ ! এই অপরাধীদের বিচার করবে কে ?”
জানা যায়, ৩০ অক্টোবর (রোববার ) দুপুরে বন্দরে পরিবেশ দুষণ বিরোধী আলোচনা সভায় অতিথি হিসাবে উপস্থিত হয়ে চরম বিপাকে পরেন স্থানীয় ৮-১০ জন ইটভাটার মালিক।
বন্দর উপজেলার বাগদোবাড়িয়া নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে পরিবেশ দুষণ বিরোধী আলোচনা সভায় উপস্থিত হয়ে বিপাকে পরেন ওই ইটভাটার মালিকগন।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, বন্দরের উত্তরাঞ্চলের মদনপুর, ধামগড় ও মুছাপুর ৩টি ইউনিয়নে ৭০ গ্রাম ঘিরে গড়ে উঠেছে অর্ধশত ইটভাটা। এসব ইটভাটা সহ আরো শতাধিক শিল্পকল কারখানার শব্দ দূষন, বায়ূ দূষণ ও পরিবেশ দূষণ রক্ষার্থে পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির উদ্যোগে পরিবেশ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা দপ্তর সমন্বয়ে এক র্শীষক আলোচনা সভা আয়োজন করে।
পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির পরিচালক এইচএম পারভেজ মিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলার পরিবেশ অধিদপ্তর উপ পরিচালক মুহাম্মদ আব্দল্লাহ আল মামুন। যাকে ঘিরে ব্যাপক দূর্ণীতির অভিযোগ রয়েছে জোড়ালোভাবে ।
আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও বন্দর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি গাজী এম,এ সালাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ সজিব রায়হান, বাগদোবাড়িয়া নাগিনা জোহা উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মো. গোলাপ হোসেন ভূঁইয়া, নাগিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. বদিউল আলম, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাবেক সদস্য গাজী আরিফুল ইসলাম আলীনুর, ইটভাটার মালিক আজিজুল ইসলাম আজিজ, আমান উল্লাহ আমান, মোক্তার হোসেন ভূঁইয়া, মো. আলমগীর হোসেন, মো. শফিউল্লাহ, মো. ইলিয়াছ মোল্লা ও স্থানীয় স্কুল, মাদরাসা শিক্ষক ও অভিভাবক বৃন্দ।
আলোচনা সভায় অথিতি হিসাবে উপস্থিত ইটভাটার মালিকদের উদ্দেশ্যে বক্তারা বলেন, যখন তখন অপরিকল্পিত ভাবে জনবহুল এলাকায় প্রথামিক, মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি মাদরাসা সংলগ্নে গড়ে ওঠা ইটভাটার বায়ু দুষণে মারাত্বক ভাবে দুষীত হচ্ছে পরিবেশ। এই পরিবেশ দুষণের হাত থেকে মানুষকে বাঁচাতে ইটভাটা বন্ধের দাবি জানান। পরিবেশ রক্ষায় শুধু স্কুলের ছাত্র ছাত্রী নয়, সবাইকে সচেতন হওয়া উচিৎ। পরিবেশ রক্ষা করতে না পারলে আমরা সবাই ঝুঁকির মুখে থাকবো। শব্দ দূষন, বায়ূ দূষণ পরিবেশ দূষণের হাত থেকে আমাদের বাঁচতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, দোকান পাটের সামনে ডাস্টবিন রাখতে হবে। যাতে করে ময়লা আবর্জনা ক্লাসিফাই করে নির্দিষ্ট ডাস্টবিনে রক্ষন করা যায়। পরিবেশ রক্ষায় বৃক্ষ রোপনের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সভা শেষে ভৌতিক পরিবেশ সুন্দর ও সুসজ্জিত রাখতে দোকানপাট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ডাস্টবিন স্থাপন করা হয়।
এমন আলোচনা সভার পর গত দুই দিন যাবৎ নগরীতে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা রাববার নারায়ণগঞ্জবাসীর সাথে তামাশা করেই যাচ্ছে । কর্তাদের ঘুষখোর আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে স্বচ্ছ তদন্ত করে অপসারণের পর সৎ কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও অপরাধীদের শাস্তির আওতায় আনা হলেই নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ আর শীর্ষ দূষনের তালিকায় স্থান পাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ ।
Discussion about this post