একদিকে বাবার শ্রাদ্ধ অপরদিকে চলছে সন্ত্রাসীদের মটর সাইকেল মহড়া। এমন ই মহড়ায় তড়িঘড়ি করে সমাপ্ত করা শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া আত্মীয়দের কেউ কেউ ভয়ে টটস্থ, যেন মুখ খুলতে মানা।
যার বাবা মারা গেছেন সেই প্রাণ বল্লব সরকার (৬৫) এর অসহায় সন্তান সম্ভু বল্লব সরকারও যেন অসহায়। কোন অবস্থাতেই মুখ খুলতে চান না।
অনেক চেষ্টা করেও সম্ভু সরকার বাবার বিচার দাবী করলেও ভয়ে ভয়ে বলেন, “আমাদের তো এখানে থাকতে হবে । কি করবো স্থানীয় নেতা ও আমাদের হিন্দু নেতারা দায়িত্ব নিয়েছেন আগাামী রোববার সালিশী বসে মীমাংশা করে দেবেন। আমরা ভয়ে আছি । কোন সাংবাদিক বা অপরিচিত কেউ আসলেই আমদের ভয় আরো বেড়ে যায়। আমরা আর কোন কথা বলতে চাইছি না ।”
সম্ভু সরকার কোন অবস্থাতেই উল্লেখিত মন্তব্যের বাইরে কোন কথা না বললেও বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে একজন বয়স্কা বৃদ্ধা বললেন, “ওই যে দেখেন আমাদেরকে চোখে চোখে রাখতেছে ঘাতক মামুন ও তার লোকজন । একই সাথে কিছুক্ষন পর পর মটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে যাচ্ছে বাইরে (অপরিচিত) থেকে কেউ আসছে নাকি। আর মামলা করার পরও থানা পুলিশ উল্টো সাবদী বাজারের নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে পুলিশের গাড়ী নিয়ে এসে আমার ভাই প্রাণ বল্লবের হত্যাকারী মামুন মিয়ার সাথে কথা বলে / চা খায় / সিগারেট খায় আবার হাসি ঠাট্টাও করে। আর নেতাদের অনেকেই এই ঘটনায় মীমাংশা করতে চাপ দিয়েছে। এই মামুন মিয়া নাকি এমপি সেলিম ওসমানের চাইতেও ক্ষমতাধর। কারণ কয়েক বছর আগে সেলিম ওসমান পিয়ার চান স্কুলের শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে চর থাপ্পর দিয়ে নাকানী চুবানী কম খাইলো না । আর মামুন মিয়া নাকি সাংবাদিক। মামুন আমার ভাইরে হাতে ধইরা খুন করলো । চার দিনেও কেউ কোন খবর নিলো না। কেউ জানে ও না এই খুনের কথা । তার কথায় নাকি পুলিশ – নেতা আর সাংবাদিকরা উঠে আর বসে ! কারো সাথে মুখ খুলতেও আমাদের বারণ করে দেয়া হয়েছে । আর আমরা তো অসহায়।”
ঘটনার বিবরণে খোজ নিয়ে জানা যায়, ২৩ আগষ্ট (মঙ্গলবার) সকাল সাড়ে ৮টায় নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলার সাবদি – দীঘলদী ঝাড়তলা অটো স্ট্যান্ডের সামনে বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকারের হোটেলে নাস্তা নিতে আসেন একই এলাকার মামুন মিয়ার স্ত্রী রেশমা আক্তার । হোটেলে কাস্টমার বেশী থাকায় নাস্তা দিতে দেবী হবে বলার পর রেশমা আক্তার বাড়ি গিয়ে তার স্বামী মামুন মিয়াকে পাঠায়। মামুন মিয়া হোটেলে এসেই কোন কথা না জিজ্ঞেস করেই অনেকের সামনে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ, চর থাপ্পর, লাথি ঘুষি দিয়ে শাটের কলার ধরে বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকারকে মারধর করে । এমন ঘটনা সহ্য করতে না পেরে সাথে সাথেই বৃদ্ধ প্রাণ বল্লব সরকার হোটেলে বিষ পান করে আত্মহত্যার চেষ্ট করে বলে থানায় অভিযোগ দায়ের করে নিহতের পরিবার।
প্রাণ বল্লব বিষপানের সাথে সাথেই হোটেলের লোকজন তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নারায়ণগঞ্জ জনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতাল পরে ঢাকা নেয়ার পথে অবস্থার অবণতি হলে ফের খানপুর ৩শ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে আনার পর সেখানেই মৃত ঘোষনা করে চিকিৎসক ।
পরবর্তীতে নিহতের লাশ ময়নাতদন্তের পর বন্দর সাবদী শ্মশানে শেষকৃত্য সম্পন্ন করে থানায় অভিযোগ দায়ের করে নিহতের পুত্র সম্ভু সরবকার (৩৫), কন্যা গীতা রাণী সরকার (৪০) ও উজ্জল সরকার (৩০)।
শুক্রবার প্রাণ বল্লব সরকারের শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান চলাকালে নারায়ণঞ্জ নিউজ আপডেট এর প্রতিবেদক নিহতের বাড়ি উপস্থিত হলে মটর সাইকেল মহড়ার চিত্র দেখা যায় । একই সাথে এই ঘটনায় কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতেও রাজি হয় নাই ।
এমন ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি দীপক সাহা বলেন এমন ঘটনায় মামলা হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি । এর বেশী কিছু আমি জানি না ।
নারায়ণগঞ্জ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার জানান, এমন মর্মান্তিক ঘটনা আমার জানা নাই । আমি এমন খবর পাইও নাই।
মামুন মিয়া কর্তৃক এমন কান্ডের ঘটনায় দায়ের করা মামলার পরও কি করে আসামী এখনো এলাকায় মহড়া দিচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে একাদিকবার বন্দর থানার ভারপ্রপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দীপক চন্দ্র সাহা পিপিএম এর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্ট করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোন বক্তব্য পাওয়া যায় নাই ।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (‘বি’ সার্কেল ) শেখ বিল্লাল হোসেন নারায়ণগঞ্জ নিউজ আপডেট কে বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রীর ভিভিআইপি ডিউটিতে থাকায় এমন ঘটনা আমার জানা নাই । তবে অবশ্যই বিষয়টি আমি দেখবো ।
Discussion about this post