“স্যার অহন যান গা আমি পরে ফোন দিয়া আইয়া দেখা করমু নে !“ নারায়ণগঞ্জ শহেরর জিমখানা বস্তি, র্যালী বাগান বস্তি, টানবাজার সুইপার পট্টি, নিতাইগঞ্জের বাপ্পি চত্তর, বাবুরাইলের তাঁতী পাড়ার মোড়, কলেজ রোড, গলাচিপাসহ নগরীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় মাদকের আস্তানায় এমন উক্তি প্রায়ই শোনা গেলেও আসলে সাধারণ মানুষের অনেকেই অনুমান ই করতে পারেন না কে কাকে কি বলছে ! কিন্তু যিনি শুনেছেন আর যিনি বলেছেন তারা ঠিকই জানেন কে কাকে কি বলেছেন।
আর দারোগাদের এমন কান্ড ঘটানোর সাহস করেন যখন দেখেন থানার শীর্ষ কর্তা শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বিটুর পক্ষে নগরীর একজন চিহ্নিত বিয়াইখ্যাত প্রবাবশাল ব্যক্তি প্রতি মাসে নির্বিঘ্নে মাদক ব্যবসা করার জন্য মাসোয়ারা দিয়ে যাচ্ছেন। শীর্ষ কর্তা যদি মাদক ব্যবসায়ী, ফুটপাতের খুনি আসাদ, রহিম মুন্সীসহ অনেকের কাছ থেকে মাসোয়ারা গ্রহণ করেন তখন আর দারোগাদের কেউ ওই টু পাইস উপার্জন করতে পিছ পা হন না। নির্লজ্জের মতো সকাল ১১ টা থেকে দুপুরের মধ্যে দিনের হিসাব দিনের মধ্যেই সম্পন্ন করেন। আবার রোষ্টার অনুযায়ী রাতের হিসাবও ভিন্ন।
এমন অসংখ্য ঘটনার পর পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীদের যে সখ্যতার অভিযোগ তা আবারো প্রমাণ করেছে ফতুল্লা থানার পুলিশ। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলায় এক মাদক কারবারিকে ছেড়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফতুল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে।
সোমবার (২৯ জানুয়ারি) সকালে কাশিপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ফরাজিকান্দা এলাকায় ওই আসামিকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে এলাকাবাসী। তবে কয়েক ঘণ্টা পর তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
স্থানীয়রা জানায়, সোমবার ফজর নামাজের সময় এক নারীর ঘরে প্রবেশ করে মাদক কারবারি ও পুলিশের সোর্স হিসেবে চিহ্নিত সাদ্দাম হোসেন। ওই নারী ঘরের বাইরে থেকে দেখে চিৎকার করলে এলাকাবাসী জড়ো হয়ে সাদ্দামকে আটক করে। এ সময় তার কাছ থেকে ইয়াবা, সেবনের সরঞ্জাম, দুটি চাকু, তিনটি মোবাইল ও নগদ ৭ হাজার টাকা জব্দ করা হয়। খবর পেয়ে ফতুল্লা থানার এসআই আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থলে গেলে স্থানীয়রা সাদ্দামকে তার কাছে সোপর্দ করে। কিন্তু এ ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর সাদ্দাম এলাকায় ফিরে এলাকাবাসীকে হুমকি দেয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা লাল মিয়া বলেন, ‘সকালে ফজরের নামাজ পড়তে মসজিদে গেলে হই-চই শুনতে পাই। নামাজ শেষে দেখি সাদ্দামকে আটক করে মারধর করছে জনতা। তাকে উদ্ধার করে আমাদের হেফাজতে রাখি এবং পুলিশে খবর দিই। ফতুল্লা থানার এসআই আনোয়ারের কাছে তাকে সোপর্দ করা হয়। এ সময় অনেকেই উপস্থিত ছিল। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পর সাদ্দামকে এলাকায় দেখা যায়। জানতে পারি, সে এলাকায় এসে বিভিন্ন জনকে হুমকি দিচ্ছে।’
পঞ্চায়েত প্রধান আলী আক্কাস বলেন, ‘সাদ্দাম এর আগেও বহু অপরাধ করেছে। এলাকাবাসী তাকে বেশ কয়েকবার মারধর করেছে। কিছু দিন আগে এক নারীর ভিডিও ধারণের চেষ্টা করে। এ ছাড়া পুলিশের সোর্স পরিচয় দিয়ে এলাকায় মাদক বিক্রি করে সে।’
এ বিষয়ে এসআই আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকেদের বলেন, ‘সাদ্দাম কোনো অপরাধী না। সে পুলিশের সোর্স হিসেবে কাজ করে। কয়েকজন আসামিকে ধরিয়ে দিতে পুলিশকে সহযোগিতা করেছে, তাই ষড়যন্ত্র করে তাকে আটক করেছে স্থানীয়রা। মোবাইলগুলো ওর নিজের, অন্যরা ওর পকেটে চাকু ঢুকিয়ে দিয়েছে। তার কাছে কোনো মাদক পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ছেলেটাকে অনেক মারধর করা হয়েছে। স্থানীয়রা কেউ সাক্ষী না হওয়ায় সাদ্দামকে ছেড়ে দিয়েছি।’
নারায়ণগঞ্জ আইনজীবী সমিতির নব নির্বাচিত সহ সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, ‘কেউ সাক্ষী না হলেও এলাকাবাসী কর্তৃক মাদক ও চাকুসহ আটক করা আসামিকে পুলিশ ছেড়ে দিতে পারে না। এটা আইনের পরিপন্থি।’
এ বিষয়ে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আযম মিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি কল রিসিভ করেননি।
Discussion about this post