দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের শেষ জনসভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন “বাংলাদেশে যেনো নির্বাচন না হয় সেই ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। বাংলাদেশে যে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে তা প্রমাণ করতে তিনি দেশবাসীকে ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান হানিয়েছেন।”
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারী) নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থনা এলাকার এ কে এম শামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে নির্বাচনী সমাবেশে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি নির্বাচনে আসতে চায় না। ভয় পায়। সেজন্য সন্ত্রাস করে। তিন হাজারের ওপর মানুষ পুড়িয়েছে। জ্বালাও-পোড়াও মানুষ খুন বিএনপি একমাত্র গুণ। মানুষকে কিছু দিতে পারে না।
তিনি বলেন, নির্বাচন যেনো না হয় সেই চক্রান্ত এখনও করছে। নিজেরা যেহেতু জিততে পারবে না সেজন্য এখনও একই কাজ করতে চায়। ৭ তারিখ নির্বাচন। সবাই শান্তিপূর্ণভাবে থাকবেন। ভোট কেন্দ্রে যাবেন। ভোটের অধিকার আপনাদের সাংবিধানিক অধিকার। এই অধিকার মিলিটারি ডিক্টেটররা কেড়ে নিয়েছিলো। আমরা ফিরিয়ে দিয়েছি। সাংবিধানিক অধিকার সংরক্ষণ করেছি। ৭ জানুয়ারি সবাই ভোটকেন্দ্রে যাবেন। প্রমাণ করবেন বাংলাদেশে গণতন্ত্র বিদ্যমান। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে। আর আছে বলেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে যাবে। যত ষড়যন্ত্রই হোক। কারও মুখাপেক্ষী বাংলাদেশ হবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বিধ্বস্ত দেশ গঠনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেওয়া বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার কথা তুলেও ধরেন জাতির পিতার কন্যা।
বিদ্যুৎ পরিস্থিতি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে শুরু সব খাতের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বিএনপির সময় কমিয়ে ফেলে। মানুষ সামনের দিকে যায় আর বিএনপি পিছনের দিকে টানে। দুর্নীতি, মানুষ খুন, দুঃশাসন, জঙ্গিবাদের কারণে জরুরি অবস্থা জারি হয়। ২০০৯ এ ক্ষমতায় এসে সঙ্কট কাটিয়ে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি করেছি। যা কেউ করতে পারেনি। বিএনপির আমলে ২৮ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ পেতো। আমরা কথা দিয়েছিলাম, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেব। আমরা কথা রেখেছি। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে অনেক খরচ হয়। আপনাদের কাছে অনুরোধ, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবেন। মিতব্যয়ী হবেন।
সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি এবং অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে জনজীবন স্বাভাবিক রাখতে সরকারের পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ওপর দিয়ে তিনটি মেট্রোরেল লাইন নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা আমাদের আছে। আপনারা নৌকা মার্কায় ভেখাট দিয়েছে বলেই আমরা উন্নয়নের কাজ করতে পেরেছি। করোনার সময় কোনো দেশ বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেয়নি। আমরা দিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলবো কথা দিয়েছিলাম। বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল। আট হাজারের ওপর ডিজিটাল সেবা তৈরি করে দিয়েছি।
বিএনপির সহিংসতার কথা তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপি কি ভয়ঙ্করভাবে পুলিশের ওপর আক্রমণ করেছে। পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে। রোগী নিয়ে যাচ্ছিলো সেই অ্যম্বুলেন্স পুড়িয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাড়ি আক্রমণ করেছে। ভাবা যায় না প্রধান বিচারপতির বাড়িতে আক্রমণ ! মহিলাদের ওপর নির্যাতন। অগ্নিসন্ত্রসাস… ২০১৩-১৪ এর মতো রেললাইনের ফিসপ্লেট খুলে মানুষ মারার ফাঁদ করে দিয়েছে। যাতে দুর্ঘটনা হয়। আগুন দিয়েছে। একজন মা তার বাচ্চাকে বুকে চেপে নিয়েছিলো। পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছে। ইসরাইলের মতো হামলা করছে। মনুষ্যত্ব বলে কিছু নেই তাদের।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে আসেনি তাদের ইচ্ছা। কিন্তু মানুসের অধিকারে বাধা দেবে এটা মেনে নেওয়া হবে না। নির্বাচনকালীন এই শেষ সভা থেকে বলতে চাই, তারা যেন কোনো জাতীয় সম্পদ ধ্বংস করতে না পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া উন্নয়নের এই যাত্রা কেউ ধরে রাখতে পারবে না। আর কেউ উন্নতি করবে না। বিএনপি একবারই এসেছিলো। ধ্বংস করেছে। উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা ধরে রেখে ২০৪১ সালে স্মার্ট জনশক্তি, স্মার্ট অর্থনীতি হবে। স্মার্ট সোনার বাংলা হবে। আড়াইহাজারে একটা স্পেশাল ইকোনমিক জোন করা হবে, যেটাতে জাপান বিনিয়োগ করছে । এর মাধ্যমে এখানে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। রূপগঞ্জের পূর্বাচল একটি স্মার্ট সিটি হবে। সেই সঙ্গে নারায়ণগঞ্জ কে আমরা স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলবো ।
নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, নৌকায় ভোট দিয়ে মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে। উন্নত জীবন পেয়েছে। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে প্রার্থীদের জয়যুক্ত করবেন। অবশ্য নৌকায় আবার লাঙ্গলও চড়ে বসেছে। সেদিকেও একটু দেখবেন।
২০ ডিসেম্বর সিলেট থেকে আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনি প্রচার শুরু করেন দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা। ওই দিন হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহ পরানের (রহ.) মাজার জিয়ারতের পর দলের নির্বাচনি জনসভায় বক্তব্য দেন তিনি।
এরপর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন জেলায় নির্বাচনি জনসভা করছে আওয়ামী লীগ। এতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে জনসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত নির্বাচনি প্রচার চালাতে পারবেন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রার্থীরা।
Discussion about this post