দীর্ঘদিন যাবৎ নারায়ণগঞ্জে দায়িত্বরত পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পেশাদারিত্ব রক্ষা না করে নিজেদের অবৈধ স্বার্থ হাসিল করতে থাকে মহা ব্যস্ত। পুরো নারায়ণগঞ্জে কয়েকজন ক্যাশিয়ার (ঘুষ আদায়কারী) নিয়োগ দিয়ে অবৈধ ইটভাটা, অবৈধ ডাইং কারখানা, অবৈধ ব্যাটারী কারখানা, হাজার হাজার মিল ফ্যাক্টরী থেকে নিয়মিত বিভিন্ন অংকের মাসোয়ারা আদায় করে একেকজন কর্মকর্তা যেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে যাচ্ছেন।
নারায়ণগঞ্জের এই গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের কর্মকর্তা বদলী হলেও মাসোয়ারা বন্ধ হবার পরিবর্তে মাসোয়ারার বিশাল তালিকায় পুনঃনির্ধারণ করে তা আরেক ধাপ বৃদ্ধির পর চলে পরিবেশ ধ্বংসের রামরাজত্ব। আর এমন রাম রাজত্ব হালাল করতে প্রতি মাসে লোক দেখানো নানা কায়দায় চলে নাটক মঞ্চায়ণ।
কখনো নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আবার কখনো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের নাম ব্যবহার করে অভিযানের নামে নাটক মঞ্চায়নের পর চাঁদাবাজির এক অভিনব কারবার অবিরামপন্থায় চালিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা । নিজেদের অবৈধ পুঁজি বৃদ্ধি করতে চালিয়ে যাচ্ছে এই নগ্ন প্রতিযোগীতা। এমন কান্ড ঘটাতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ছাড়াও র্যাব ও পুলিশ দিয়ে ভয় দেখানো, জেল খাটানোর নানা হুমকি দিয়ে বিশাল অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে পরিবেশের এই অসাধু কর্তারা। যা সকলের জানা থাকলেও কেউ কিছু বলতে সাহস করে না বলে জানান নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন ঘুষখোর কর্মকর্তা।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমি তাদের সাথে তাল মিলিয়ে ঘুষের অবৈধ অর্থ (বিশাল টাকা) গ্রহণ না করলে আমি চাকরীটা ই করতে পারবো না। কারণ কোটি কোটি টাকার ঘুষ এই দপ্তরের বড় কর্তা থেকে শুরু করে পিয়ন পর্যন্ত সকলেই আনুপাতিক হারে বন্টন করে দেয়া হয়। যার কারণে সারাদেশের মতো নারায়ণগঞ্জের পরিবেশ সবচাইতে মারাত্মক। কি পরিমাণ নোঙামী যে এই দপ্তরে ঘটে তা চিন্তাই করা কঠিন।’ এমন মন্তব্য করেন এই কর্তা।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অসাধু ন্যাক্কারজনক নগ্ন কর্মকান্ডের কারণে বায়ুর মানে সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে আছে প্রাচ্যের ডান্ডি খ্যাত নারায়ণগঞ্জ। আর সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে সিলেট।
পরিবেশ অধিদপ্তরের ওয়েবসাইট থেকে রিয়েলটাইম পাওয়া ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও শিল্পঘন শহরগুলোর বায়ুর মানের তালিকা থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
বায়ুর মান মনিটরিং করতে ঢাকা, আগারগাঁও, ফার্মগেট বিএআরসি, দারুসসালাম, সাভার, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ, সিলেট, কুমিল্লা, রংপুর, চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র, রাজশাহী, বরিশাল, খুলনাতে মোট ১৬টি কন্টিনিউয়াস এয়ার কোয়ালিটি মনিটরিং সিস্টেম (সিএএমএস) স্থাপন করা হয়েছে।
এসব সিএএমএস থেকে প্রাপ্ত তথ্যে আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় বায়ুর মান সবচেয়ে খারাপ ছিলো নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) স্কোর ৪৭৯। আর সবচেয়ে ভালো বায়ুর মান ছিল সিলেটে। সিলেটের একিউআই স্কোর ৫২।
সাধারণত ০ থেকে ৫০ একিউআই স্কোর ভালো হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। আর ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।
অন্যদিকে ৩৯১ একিউআই স্কোর নিয়ে নারায়ণগঞ্জের পর খারাপ অবস্থানে আছে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার দারুসসালাম এলাকা। সাভারের একিউআই স্কোর ৩১৭, গাজীপুর ১৬৮, নারায়ণগঞ্জ ৪৭৯, ময়মনসিংহ ১৮৯, চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ ১৬৬, কুমিল্লা ১৬৪, রংপুর ১৮৯, চট্টগ্রাম টেলিভিশন কেন্দ্র ১৯৫, রাজশাহী ২৯১, বরিশাল ১৮৭ এবং খুলনা ১৫৫।
Discussion about this post