অসম পরকীয়ার জের ধরে নগরীর নিতাইগঞ্জের ফ্ল্যাট বাসায় পেট্রোল দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় র্যাব সদস্যের মৃত্যুর পর এবার মারা গেলেন দগ্ধ টুম্পা রানী দাস (৪০)।
পেট্রোল দিয়ে অগ্নিকাণ্ডের সময় টুম্পা রানী বলেছিলেন, ‘বাচলে একসাথে বাচবো, মরলে একসাথে মরবো ।’
শেষ পর্যন্ত টুম্পা রানীর নিজের জীবন দিয়ে সেই আশা ই পুর্ণ হলো অভিজিৎ সিংয়ের মৃত্যুর চার দিনের মাথায়।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত হয় টুম্পা রানীর। এ নিয়ে দগ্ধ দুজনই মারা গেলেন।
এর আগে ১৪ সেপ্টেম্বর র্যাব সদস্য অভিজিতের মৃত্যু হয়। আগুনের ঘটনাটি ঘটে নিতাইগঞ্জে টুম্পা রানীর ভাড়া বাসায় ।
শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক ডা. মো. তরিকুল ইসলাম জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে দগ্ধ অবস্থায় দুজনকেই ভর্তি করা হয়েছিল। সবশেষ আইসিইউতে মৃত্যু হয় টুম্পা রানী দাসের। তার শরীরে ৭০ শতাংশ দগ্ধ ছিল।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোর ৩ টা ১৬ মিনিটের সময় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে আনা হলে কিসের আগুণে এমন হলো বলে প্রশ্ন করা হলে প্রথমে দগ্ধ অভিজিৎ সিং ও টুম্পা রানী পেট্রোল ঢেলে আগুন দেয়ায় অগ্নিদগ্ধের ঘটনা ঘটেছে বলে দাবী করলেও পরবর্তীতে ‘ঘরের মধ্যে পেট্রোল আসেলো কি করে ?’ ‘কেন এই পেট্রোল ঢেলে আগুন দিলেন ?’ এমন অসংখ্য প্রশ্নের উত্তর দেন নাই কেউ টুম্পা রানী আর অভিজিৎ সিং।
চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিন দগ্ধদের ঢাকায় রেফার্ড করলে র্যাবের গাড়ী এসে দগ্ধ অভিজিৎ সিং (২৮) কে নিয়ে ঢাকা রওয়ানা দিলে টুম্পা রানী দাস (৪০) অপর প্রাইভেট এম্বুলেন্স থেকে নেমে লংকাকান্ড ঘটায়। এ সময় টুম্পা রানী দাস চিৎকার করে বলতে থকেন, ‘আমি তো মরার জন্যই পেট্রোল ডাইল্ল্যা এই কাম করছি । মরমু যখন এক সাথেই মরমু !’
এমন ঘটনার পর র্যাবের গাড়িতে করেই ভোররাত ৪টার দিকে দগ্ধ অভিজিৎ সিং (২৮) ও টুম্পা রানী দাস (৪০) কে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা।
ওই সময় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের একাধিক সূত্র এবং চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিনের সহযেগি চিকিৎসকের উদ্ধৃতি দিয়ে নাম প্রকাশ না করার অনুরোধে বলেন, “ঘটনাটি স্পর্শকাতর । টুম্পা রানী যা বলেছেন তা হলো : তার স্বামী বিদেশে থাকার সুযোগ নিয়ে অভিজিত তাকে বিয়ে করবে বলে দীর্ঘদিন যাবৎ এই বাড়িতে আসা যাওয়া করেন এবং রাত্রি যাপন করেন। কয়েকদিন যাবৎ বিয়ের জন্য চাপ দিলে টালবাহানা করতে থাকে অভিজিৎ সিং । এরপর পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী ‘এক সাথে হয়তো বিয়ে করে সংসার করবো নয়তো মরবো’ এই চিন্তা থেকে পেট্রোল এনে ঘরে রাখে টুম্পা রাণী। মধ্যরাতে সকলে ঘুমিয়ে পরলে অভিজিত ফোন করে এই বাসায় আসলে বিয়ে করার জন্য চাপ দিলে অভিজিৎ সিং তা অস্বীকার করে । তখন পেট্রোল ঢেলে আগুণ ধরিয়ে দেই।“ এভাবেই ঘটনার বর্ণনা দেন দগ্ধ টুম্পা রানী।
এমন ঘটনার পর হাসপাতাল সূত্র আরো জানান, একটি অসম পরকীয়ার যবনিকাপাত হয়তো চিরতরে ঘটতে পারে । তাদের অবস্থা খুবেই আশংকাজনক ।
নগরীর নিতাইগঞ্জবাসী ও একাধিক সূত্র জানায়, টুম্পা রানী মাদকসহ গ্রেফতারের পর এই র্যাব সদস্য অভিজিৎ সিংয়ের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। আর ওই অসম পরকীয়ার ঘটনার সমাপ্তি ঘটলো পেট্রোলের আগুনে পুড়ে অভিজিৎ সিং এর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ।
নারায়ণগঞ্জ জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের চিকিৎসক সাবিনা ইয়াসমিন, সহকারী নার্স ইলানূর, ওয়ার্ড বয় ওয়াজকরুনীসহ অন্যান্যদের ভাষ্য অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত মৃত্যুকে আলিংগন করলেন অভিজিৎ সিং।
জানা যায়, অভিজিৎ র্যাব-১১ এর সদস্য। তার বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার জয় কৃষ্ণপুর গ্রামে।
তবে এ বিষয়ে র্যাবের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে নিহত টুম্পা রানীর স্বামীর প্রকৃত বাড়ি অথবা তার বাবার বাড়ি কোথায় তা এখনো জানা যায় নাই । এমন ঘটনায় কেউ মুখ খুলছে না। শুরু থেকেই রহস্যজনক আচরণ করছে টুম্পা রানীর পরিবার।
Discussion about this post