,পাল্টাপাল্টি বিষেধাগারের অংশ হিসেবে আবারো সংসদ সদস্য শামীম ওসমানেকে ঈঙ্গিত করে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, ‘সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্ন (সুইপার) কর্মীদের নিয়ে ‘নোংরা রাজনীতি’ করা হচ্ছে। এই ধরনের নোংরা রাজনীতি বন্ধ করেন। নইলে উচিৎ জবাব দেয়া হবে । আগের নিয়মে মানুষ চলে না। এখন তারা সব বোঝেন। শেষ পর্যন্ত আর কিছু পেলো না, আমার পরিচ্ছন্ন কর্মীদের নিয়ে রাজনীতি শুরু করল। এই ধরনের নোংরামি রাজনীতি শোভা পায় না। আপনার মতো নোংরামি করতে পারব না। কিন্তু আপনার নোংরা রাজনীতির জবাব দিতে পারব। বাড়াবাড়ি ভালো নয়। জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের কথা বলি, উন্নয়ন করতে দেন। এ রকম নোংরামি বরদাশত করা হবে না ।’
শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিকেলে শহরের আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনে ত্বকী হত্যার দশ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত সপ্তাহব্যাপী চিত্রকর্ম প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এইসব কথা বলেন। ত্বকীর স্মরণে দেশের ৪৭ জন বরেণ্য শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্ম নিয়ে ‘চিত্রপটে ত্বকী’ শিরোনামে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে আইভী বলেন, “আপনি যেসব অর্জন করছেন, বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে দাঁড় করাতে চাচ্ছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাচ্ছেন, সেই প্রচেষ্টা ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জের কতিপয় লোক। আপনি ভালো করেই তাদের চেনেন ও জানেন। এই আসকারা, সাহস তারা কোত্থেকে পায় ? নির্বিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স তাদের কে দেয় ?”
আইভী বলেন, ‘দশটি বছর যাবৎ আমাদের সন্তান ত্বকী হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে যাচ্ছি । দেশবরেণ্য শিল্পীরা রঙতুলি দিয়ে ত্বকীকে নিয়ে ভাবনা ফুটিয়ে তুলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। স্বাধীন দেশে আমাদের সন্তানকে হত্যা করা হবে, এই রকম বাংলাদেশ অবশ্যই আমরা চাইনি। তবে একটি দেশে অনেক কিছুই হয়। অপরাধ কখনও বেড়ে যায়, কখনও কমে। সরকারের দায়িত্ব সেগুলো দমন করে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া। আমরা ডাকলে সহজে পুলিশ-প্রশাসন সাড়া দেয় না। এখন আবার নতুন শব্দ যুক্ত হয়েছে, সিটি করপোরেশনের ভেতরের দায়িত্ব নাকি তাদের নেই । যদি দায়িত্ব আপনাদের না থাকে তাহলে এত বাস-ট্রাক, অবৈধ হকারের বিষয়ে নিশ্চুপ হয়ে কেন থাকেন ? নারায়ণগঞ্জে টাকা আকাশে-বাতাসে ওড়ে। এই টাকার জন্যই যত সমঝোতা, যত হত্যা, যত নাটক। ভয় দেখিয়ে ভীত রাখার চেষ্টা।’
সরকারের কাছে ত্বকী হত্যার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ করি, আমার বাবাও এই দল করতেন। যতদিন বেঁচে থাকবো আওয়ামী লীগই করবো, জয় বাংলা বলবো । তবে দলের ভেতরে থেকেও অন্যায়, অবিচারের প্রতিবাদ করবো। অন্যায়কারী দলের হোক কিংবা দলের বাইরে। ত্বকীর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জবাসী একত্রিত হয়েছে। দীর্ঘ দশ বছর যাবৎ সকল হুমকি-ধমকি উপেক্ষা করে তারা প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। শত হুমকির মধ্য দিয়েও আমি তাদের সাথে আছি, ভবিষ্যতেও আছি ।’
তিনি আরও বলেন, ‘জনতাই আমাদের শক্তি। নারায়ণগঞ্জের মানুষই আমাদের পথ দেখাবে। একসাথে এই শহরবাসীকে নিয়ে মানুষকে নিয়ে এই আন্দোলন আরও বেগবান করতে চাই । শহরবাসীকে জাগাতে চাই, সাহসী করতে চাই। ইতোমধ্যে তিনটা ঘটনা ঘটেছে। গতকালও (বুধবার) সাধারণ মানুষ একত্রিত হয়ে ভূমিদস্যুদের হোন্ডা পুড়িয়ে দিয়েছে। অনেকে আবার বড় বড় কথা বলে। বলে, শহরে বের হতে দিবে না ।’
হুঁশিয়ারি দিয়ে মেয়র আইভী বলেন, ‘কত বড় দুঃসাহস হলে খুনিরা একটি বাচ্চাকে খুন করার পর ওই বাচ্চার পিতা যখন প্রতিবাদ করে তখন তাকে নানাভাবে উত্যক্ত করে। আমরা যারা তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছি তাদের পরিবারকেও অত্যাচার করে, হুমকি-ধমকি দেয়। এইটা ২০২৩ সাল। ৪০-৫০ বছর যারা এই শহরকে শাসন করছেন এখনও আপনাদের হুমকি-ধমকি মানুষ মেনে নিবে, তা হবে না। হতে পারে না । সুতরাং কথা বলার আগে দশবার চিন্তা করে কথা বলবেন । চ্যালা-চামচাগুলোকে সাবধান করে দেবেন। মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙবেন না।’
‘শান্তিপূর্ণভাবে ত্বকী হত্যার বিচার চাচ্ছি। বিশৃঙ্খলা আমরা শহরে চাই না। ত্বকী হত্যার বিচার অবশ্যই হবে। আমি সরকারের কাছে ত্বকীসহ সকল হত্যাকান্ডের বিচার করার দাবি জানাই। আমাদেরকে মুক্তি দেন। আমরা এই ওসমানীয় সাম্রাজ্যের হাত থেকে মুক্তি চাই।’
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আপনি যেসব অর্জন করছেন, সারা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে দাড় করাতে চাচ্ছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাচ্ছেন। সেই প্রচেষ্টা ধুলিসাৎ করে দিচ্ছে নারায়ণগঞ্জের কতিপয় লোকজন। আপনি ভালো করেই তাদের চেনেন এবং জানেন, এই আসকারা, সাহস তারা কোত্থেকে পায় ? নির্বিচারে মানুষ হত্যার লাইসেন্স তাদের কে দেয় ?’
আইভী বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মানুষ এখন আর খুব বেশি ভয় পায় না। ভয় পেলে গতকাল একশো-দেড়শো হোন্ডাকে সাধারণ মানুষ ধাওয়া দিতো না। কত দুর্বল আপনারা দেখেছেন ? যারা অসৎ কাজ করে, অন্যায় কাজ করে, হত্যা করে, এই শহরের মানুষকে জুজুর ভয় দেখাতে চায় তারা সবসময়ই দুর্বল থাকে। শোষকগোষ্ঠী সবসময় দুর্বল। জনতার শক্তি সবচেয়ে বড় শক্তি।’
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নিহত ত্বকীর পিতা ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি, ‘চিত্রপটে ত্বকী’ পর্ষদের আহ্বায়ক শিল্পী জাহিদ মুস্তাফা, নারায়ণগঞ্জ চারুকলা ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ শামসুল আলম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শংকর রায়সহ নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা ।
Discussion about this post